কৃষ্ণা সাবুই: চিন্তন নিউজ:১৬ই জুন:– ১৯৪৪সালের ১৬ ই জুন, আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রয়াত হয়েছেন।
তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন ১৮৬১ সালে ২রা আগষ্ট যশোর জেলার পাইক গাছার রাড়ুলি গ্রামে।বাবা হরিশ চন্দ্র রায়।মা ভূবন মোহিনী দেবী।
আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় দশবছর বয়সে কোলকাতায় পড়াশোনা করতে চলে আসেন। কোলকাতায় হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন।
কিন্তু দেশ এবং গ্রামের টান ছিলো খুব বেশী।তিনি তাঁর শৈশবকে কখনো হারান নি।
সময় পেলেই দেশে যেতেন।
এমনকি মৃত্যুর ২ বছর আগেও গ্রীস্মের ছুটীতে দেশ থেকে ঘুরে এসেছিলেন।
তাঁকে সবাই ভালোবাসতেন, তাঁদের মুখে ডাক্তার বাবু নামটি র চলন ছিলো।
এরপর তিনি হেয়ার স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন প্রথম বিভাগে।
এরপর মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন।পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন।
এই সময়ে ‘গ্রিলকিষ্ট’ বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান,এবং বি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন।
দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।সঙ্গে চলতে থাকে গবেষনা।
তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষনা ছিলো সমাজ সেবা।
কপার ম্যাগনেশিয়াম শ্রেনীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষার মাধ্যম-
গবেষনা টি ছিলো এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
২ বছরের মধ্যে গবেষনা শেষ করে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন।এই সময় তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।আমৃত্যু এই কাজে যুক্ত ছিলেন।
এরপর তিনি নিজের দেশের ভেষজ নিয়ে গবেষনা শুরু করেন।
এই গবেষনার ফলশ্রুতিতে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা তৈরীর পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি গবেষক শিল্পোদ্যোগী দুই ভুমিকা পালন করেছিলেন মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।
শিল্পবিমুখতা থেকে শিল্পমুখী করেছিলেন বাঙালি কে, এ অবদান ভোলার নয়।
এছাড়া ১৯০৯সালে একটি কো অপারেটিভ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি বহু গুনের অধিকারী ছিলেন।তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহন করেও মাতৃভাষার পুজারী ছিলেন।এই প্রেক্ষিতে তিনি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ মানতেন। এবং অধ্যাপনা করতেন মাতৃভাষায়।
বাঙালির এ এক গৌরবের কাহিনী। উচ্চশিক্ষা নিয়েও নিজের দেশের কথা ভেবেছেন। তিনি ছিলেন ঘোর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী।শিক্ষাস্থল থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে দুরীভুত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
তিনি বস্তুবাদী বিজ্ঞানী ছিলেন এবং মানুষ বিজ্ঞানকে অনুসরন করে এগিয়ে চলুক এটাই চেয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজ ভুক্ত এবং ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী। বিজ্ঞান যে জাগতিক উন্নয়নে মুখ্য ভুমিকা নেয়, এটা তিনি বুঝেছিলেন। বিদ্যাসাগরের প্রতি টান ছিলো তাঁর প্রচন্ড।কারন, বিদ্যাসাগর লড়াই করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেদান্ত পাঠের অবসান করেছিলেন। এই কারনে বিদ্যাসাগরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ছিলো।
তিনি তাঁর সারাজীবন গবেষনার অবদান হিসেবে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা।১৯১১ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে ইংল্যান্ডে যান সি আই ই সম্মান লাভ করেন। একই বছরে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাসুচক ডক্টরেট ডিগ্রী পান।১৯৩৬সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহীশুর,বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডক্টরেট ডিগ্রী পান এবং ১৯১৯সালে ব্রিটিশ সরকারের থেকে নাইট উপাধি পান।
তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের এক গুনী সন্তান,দেশ ও দশের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেগিয়েছেন।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যালের তৈরী
‘হাইড্রক্সিন ক্লোরোকুইন করোনাকালে সমগ্র বিশ্বে জরুরী হয়ে পড়েছিলো।
অকৃতদার এই মানুষটি নিজের জন্য কিছুই করেন নি।
তাঁর সমস্ত সম্পত্তি তিনি কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ে দান করে গেছেন, এমনকি সমস্ত আয়টুকুও।
প্রয়ান দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি শতকোটী প্রনাম জানাই।