কলমের খোঁচা

মেঘনাদ সাহা বিশ্বপ্রগতির এক চলমান প্রতীক।


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ: ৬ই অক্টোবর:- ধর্মের নামে ভারতে জাতিভেদ অস্পৃশ্যতা ও কুসংস্কারগুলি তাঁকে আজীবন পীড়া দিয়েছে।তৎকালীন সময়ের ধর্মগোড়া অহংকারী ব্রাহ্মণদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মতাদর্শের দ্বারা তিনি বাল্যে, কৈশোরে বারংবার নিগৃহীত হয়েছেন ও তাঁর মন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। বড়ো হয়ে তিনি এই জাতপাতময় সমাজে আলোর ছটা এনেছিলেন যে আলোর ছটা তৎকালীন সমাজকে অন্ধকার দশা থেকে ধীর লয়ে হলেও মুক্তি দিচ্ছিলো। সেইসময় আলোর দিশারীরা নতুন সূর্য ওঠানোর লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলায় অন্তর্গত শেওড়াতলী গ্রামে মেঘনাদ সাহা মায়ের কোল আলো করে এই পৃথিবীতে আসেন। বাবা মুদী হওয়ায় দারিদ্রতা তাঁর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু দারিদ্রতা কখন প্রতিভার স্ফুরণে অন্তরায় হতে পারে না। তাই পরিবারের ও পরবর্তীকালে বিশিষ্ট শিক্ষকদের সহযোগিতায় জীবনের সমস্যাসঙ্কুল সিঁড়িগুলি ধাপে ধাপে যোগ্যতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

১৯০৫ সালের উত্তাল সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলা উত্তাল ।সেই উত্তাপের আঁচ তাঁর কিশোর মনেও পড়েছিল।তাই তো তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য তৎকালীন গভর্নর বামফিল্ড ফুলার আসলে তিনি বয়কট করেন। শাস্তি হিসেবে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। যদিও পাশ্ববর্তী কিশোরীলাল জুবিলি হাইস্কুলের একজন শিক্ষক তাঁকে ভর্তি করে নেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে তিনি শিক্ষক ও বন্ধু এমন ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্যে পান যা তাঁর চলার পথকে মসৃণতর করে। প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তিনি অনায়াসে বিচরণ করতেন।প্রত্নতত্ত্ব থেকে পদার্থতত্ব,অর্থনীতি থেকে সমাজ তত্ব ,জোর্তিবিজ্ঞান থেকে ভূগোল সবাজায়গায় তাঁর অবাধ গতি।সবক্ষেত্রেই নিজের সক্রিয়তার ছাপ রেখেছেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা যে তাঁর সাথের সাথী হবে, এটাই স্বাভাবিক। বহুবিষয়ে দেশে ,বিদেশে তাঁর গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

বিংশশতকের গোঁড়া থেকে বিশ্বে বিজ্ঞানের যে নবযুগের সূচনা হয়েছিল ভারতে তিনি ছিলেন তাঁর অগ্রদূত। বিজ্ঞান জগতে তিনি পূর্ব পশ্চিমের সেতুবন্ধনের কাজ করেছেন ।প্রফুল্লচন্দ্র ও জগদীশচন্দ্রের যথার্থ উত্তরসূরী ছিলেন।তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক।

চরিত্র মাধুর্যে ছিলেন কঠোর, কোমল।বহুমুখীকর্মসাধনায় তিনি সবসাচী। তাই একদিকে যেমন বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের তিনি অগ্রণী তেমন জনমুখী কাজ করে গেছেন।এম,এস,সি ছাত্র থাকাকালীন বন্যার্তদের পাশে তিনি যেভাবে প্রাণঢেলে দাঁড়িয়েছেন তা শিক্ষধীয় ।সাথে সাথে মানুষ কিভা‌বে এই বন্যা থেকে রক্ষা পেতে পারে, তার জন্য তিনি নদো বাঁধ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তর ভেবেছেন। স্বাধীনতার পরও তিনি সরকারকে এই ভাবনায় ভাবিত করতে চেয়েছেন।

ছোটোদের বিজ্ঞানে আগ্রহী করবার জন্য তাদের মনোগ্রাহী করে প্রবন্ধ লিখতেন ।তিনি ছিলেন লিজেন্ড। তিনি শুধু বিজ্ঞানের জয়যাত্রা বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজের জয়যাত্রা জন্য কাজ করে গেছেন। তাই মানুষের মণিকোঠায় তাঁর অবস্থান , নোবেল নাইবা পেলেন, তিনি মহৎপ্রাণশুধু জন্মদিনে স্মরণ নয়, তাঁর দেখানো পথ থেকে চলার দিশা নিতে যা এই অন্ধকারে আরো জরুরী হয়ে পড়েছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।