কলমের খোঁচা

বিশ্ব কিডনি দিবস


কলমে-ডা: স্বপ্না চট্টরাজ,বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:– একজন সুস্থ মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় অঙ্গ হলো সুস্থ কিডনি। কিডনি আমাদের শরীরে একটি চালনির ভুমিকা পালন করে। আমাদের শরীরের টক্সিন এই চালনির মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের হয়ে থাকে। যদি কোন কারণে এই চালনি গোলমাল করে তাহলে শরীরের ভিতরে টক্সিন জমতে শুরু করে এবং শরীরের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিডনি আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে এবং অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই কোন কারণে কিডনি স্বাভাবিক কাজ না করলে রক্ত থেকে টক্সিন ফিল্টার করা যায় না ফলে অনেক সমস্যা দেখা যায়। এসব কারণে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ কিডনি ফাউন্ডেশন ২০০৬সাল থেকে প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করে আসছে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে প্রচারাভিযান, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কিডনির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কিডনি রোগের কারণ ও তার প্রতিরোধ এবং কিডনি জনিত অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। সুস্থ কিডনির প্রয়োজনীয়তা এবং কিভাবে রোগমুক্ত জীবন যাপন করা যায় সে সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরী।
সারা বিশ্বে প্রায় ১০শতাংশ মানুষ কিডনির রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক মহিলা ও পুরুষ কিডনির সমস্যা অবনতির কারণে অত্যন্ত গুরুতর অবস্থার সম্মুখীন হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে বেশির ভাগই মারা যায়। শিশু দের মধ্যেও কিডনির রোগ হয়ে থাকে । ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে শিশু মৃত্যু হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ দের মতে বিগত কয়েক বছরে কিডনি সংক্রান্ত নানা রোগের সাথে কিডনিতে পাথর ও কিডনি ফেলিওর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবারের বিশ্ব কিডনি দিবসের থিম হলো-“kidney health for every one-preparing for the unexpected, supporting the vulnerable “.”সকলের জন্য কিডনি স্বাস্হ্য-অপ্রত্যাশিতজন্য প্রস্ত্ততি, দূর্বল দের সহায়তা”।
কিডনির সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে সেরকম কিছু বোঝা যায় না বা লক্ষনও তেমন কিছু থাকে না। আবার যখন জানতে বা বুঝতে পারা যায় ততক্ষণে দুটি কিডনিরই অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। তাই কিডনি রোগ প্রতিরোধ কিভাবে করা যায় সেই বিষয়ে মানুষ কে সচেতন করতে হবে।
১-সারাদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণে জল খেতে হবে।
২-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
৩-বেশি ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না।
৪-ধূমপান, মদ্যপান এড়িয়ে যেতে হবে।
৫-ক্রমাগত প্রস্রাবের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬-দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার , প্রক্রিয়া জাত ও সোডিয়াম যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
৭-অলসতা ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজের মধ্যে থাকতে হবে।
৮-নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে।
৯-নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
কিডনি রোগের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে স্হানীয় এবং জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দিতে সমস্ত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিডনি স্ক্রিনিংয়ের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
কিডনি ব্যর্থতার জন্য বিকল্প হিসাবে কিডনি প্রতিস্থাপনকে উৎসাহিত করা এবং একটি জীবন রক্ষাকারী উদ্যোগ হিসাবে অঙ্গ দানকেও প্রচারের মধ্যে রাখা দরকার। তবেই এবছরের থিম পরিপূর্ণতা পাবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।