জেলা

রাজ্যের সব অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা প্রদান ও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ বন্ধের দাবীতে বাঁকুড়া শহরে এবিটিএ-র বিক্ষোভ


আশীষ পান্ডে:বাঁকুড়া:চিন্তন নিউজ: -২৭শে আগস্ট, ২০২১:- রাজ্যের তৃণমূল সরকার প্রতিহিংসামূলক আচরণের মাধ্যমে শিক্ষিকাদের আত্নহননের পথে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবং সব অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা প্রদান ও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ বন্ধের দাবীতে বাঁকুড়া শহরে বিক্ষোভ । মাসে সাম্মানিক বাবদ পান ১০,০০০/- টাকা – ২০০৯ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার তাদের স্থায়িত্ব প্রদান তথা ৬০ বছর বয়েস পর্যন্ত চাকুরি ও অবসরকালে এক লক্ষ টাকা এককালীন সাহায্য-এর ঘোষনা না করে গেলে হয়তো অনেককেই করা হতো চাকুরিচ্যুত, তাদেরই ১৭জন বাঁচার তাগিদে গত ১৩ই আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চলে গেছিলেন নবান্নের সামনে।

না মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি – পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে গেসলো আর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের হাতে ৬০০/৭০০ কিলোমিটার দূরে প্রতিহিংসামূলক বদলির নির্দেশ। কাউকে নামখানা থেকে দিনহাটা,কাউকে জিয়াগঞ্জ থেকে জলপাইগুড়ির মালবাজার, কাউকে শালবনী থেকে ধূপগুড়ি আবার কাউকে মহিষাদল থেকে উত্তর দিনাজপুরের হরিরামপুর। কাউকে আবার বাংলা মাধ্যমের স্কুল থেকে হিন্দি মাধ্যমের স্কুলে। অথচ তাদের ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষা কেন্দ্র(SSK) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে(MSK)নিয়োগের শর্তই ছিল হতে হবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বাসিন্দা। নেইও তাদের ঐ এলাকার বাইরে কোথাও বদলি করার দৃষ্টান্তও। অবিচারের প্রতিকার চাইতে এরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ী গেলেও দেখা মেলেনি। শেষমেশ গেছিলেন মন্ত্রীর দপ্তর বিকাশ ভবনে। সেখানেও মন্ত্রীর সাক্ষাতের পরিবর্তে নেমে এসেছিল তাদের ওপর পুলিশি নির্যাতন। ১০,০০০ টাকা সাম্মানিক পেয়ে পরিবার পরিজনকে ছেড়ে ৬০০/৭০০ কিলোমিটার দূরে কোনভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয় এই অনুভূতি থেকেই কলকাতার রাজপথে পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপস্থিতেতে বিকাশ ভবনের সামনে পাঁচ শিক্ষিকা বিষপান করে আত্নহননের চেষ্টা করেন। – এখন সেই শিক্ষিকাদের ২জন আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ১জন এন.আর.এস. মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন, বাকী ২জনও ভর্তি রয়েছেন ঐ দুই হাসপাতালে।

না, তারপরও মেলেনি তাদের কোন সহানুভূতি – তাদের কোন খোঁজ নেওয়ারও কোন প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেননি মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী। বরঞ্চ তাদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ও শিক্ষক নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঁকুড়ার প্রাণকেন্দ্র মাচানতলা মোড়ে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে এবিটিএ’র সদর মহকুমা কমিটি ও এবিপিটিএ’র আহ্বানে আজ সামিল হলেন বাঁকুড়ার সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজ। বক্তারা ঐ শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানালেও স্পষ্ট ভাষায় জানালেন আত্নহননের চেষ্টা কোন আন্দোলনের পথ হতে পারে না। ধিক্কার জানালেন মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের অমানবিক আচরণেরও প্রতি। চিকিৎসাধীন শিক্ষিকাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা জানানোর পাশাপাশি দাবী জানানো হলো তাদের বিরুদ্ধে জারি করা প্রতিহিংসামূলক বদলি আদেশ ও মামলা প্রত্যাহারের। পাশাপাশি দাবী উঠলো সর্বস্তরের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের ন্যায়সঙ্গত দাবীপূরণ ও তাদের যথাযথ মর্যাদা প্রদানের এবং কোভিড বিধি মেনে অবিলম্বে সমস্ত স্কুল কলেজ চালু করার।

এই সভায় বক্তব্য রাখেন এবিটিএ’র জেলা সম্পাদিকা অস্মিতা দাশগুপ্ত, সহ-সম্পাদক আশিস পাণ্ডে, পরেশ মন্ডল, এবিপিটিএ’র জেলা সম্পাদক বিমান পাত্র ও অধ্যাপক আন্দোলনের নেতা প্রতীপ মুখার্জী। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক নেতা প্রদীপ চ্যাটার্জী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।