রাজ্য

একটি সু পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নাটকের নায়ক- কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা।


বিশেষ প্রতিবেদন: মধুমিতা ঘোষ: চিন্তন নিউজ:০৪/০৪/২০২৩:- রাজু ঝা, কয়েক দিন ধরে সংবাদ শিরোনামে। লোকের মুখে মুখে ঘোরা এক তথাকথিত বিখ্যাত ব্যক্তির নাম রাজু ঝা।
যতটা জানা যায়,যে রাজু ঝা কয়লা মাফিয়া র কাজে যুক্ত সেই ২০০৬ তে বাম আমলে ই। এই কাজের জন্যে তৎকালীন সময়ে দ্রুত পুলিশের নজরে আসে এবং তারপর বিভিন্ন সময়ে জেলবাস ও হয়।
পরবর্তীতে এই কয়লা মাফিয়া দীর্ঘ দিন বর্তমান শাসক দলের হয়ে কাজ করার পর, মাঝে কিছু দিন বিজেপিতেও নাম লিখিয়েছিল। তারপর সবরকম রাজনৈতিক দল ছেড়ে সে২০২১ থেকে স্বাধীনভাবে কয়লা চোরা চালানের মাফিয়া কিং হয়ে ওঠে।
বেশ কয়েক বছর শাসকদলের কাছাকাছি থাকার সুবাদে, এবং নিজে কয়লা মাফিয়া বলে, এই অপরাধ জগতের টাকা পয়সা লেনদেন ও যাবতীয় গোপন তথ্য সব কিছুই নখ দর্পণে ছিল। সাম্প্রতিক কয়েক বার সিআইডি ও সিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদের সময় চোরাচালান সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য প্রকাশ করে ফেলে। কয়লা চোরাচালান এর সাথে যুক্ত টাকা পয়সা লেনদেনে বর্তমান শাসক দলের কেউকেটা কিছু কেষ্ট বিষ্টুর নাম সামনে আনে। রাজু বেশি করে শাসক দলের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে ওঠে, যখন ইডি দিল্লিতে তলব করল।
যথারীতি এই ধরনের ক্ষেত্রে পরিনতি হয় বিয়োগান্তক। এ ক্ষেত্রেও চিত্রনাট্য যেন লেখা ই ছিল। নির্দেশ এলো, দ্রুত সরিয়ে ফেলার। আসানসোল থেকে কলকাতা যাবার পথে আততায়ীর হাতে খুন হয়ে গেল কয়লা মাফিয়া – রাজু ঝা।
ইতিমধ্যে সকলেই কম বেশি অবগত যে এই কাজ কিভাবে সংগঠিত হয়েছিল। তবুও উপসংহার লেখা র আগে মূল ঘটনায় একবার ফেরা যাক।

বীরভূমের ইলামবাজার এলাকায় শাসক দলের “বীরসিংহ” অনুব্রত ঘনিষ্ঠ আব্দুল লতিফ, যে কিনা গরুপাচার এর কাজ টা খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতো কতিপয় শাসক নেতার যোগসাজশে। সে আর দেরি না করে শাসক দলের হয়ে তাদের কর্তা ব্যক্তির বা ব্যক্তিদের আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

রাজু ঝা এর নিজস্ব গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবদুল তার নিজের গাড়ি ও চালক নিয়ে দুর্গাপুর এর হোটেল থেকে রাজু ও তার এক সহযোগী কে তুলে কলকাতার দিকে রওনা হয়। কেন কলকাতা ? সেটা এখনো পরিষ্কার না । কিন্তু আব্দুল এর টোপ নিশ্চয়ই এমন লোভনীয় ছিল যা অপরাধ জগতে চলাফেরায় অভ্যস্ত রাজুকেও বিভ্রান্ত করে। আর তাই, শক্তিগড় এ গাড়ি থামিয়ে খাবার কেনার অছিলায় আবদুল ও তার চালক নেমে গেলেও সে কোনো সন্দেহ করে না। সাজানো চিত্রনাট্য অনুযায়ী ঠিক তখনই নীল বোলেরো গাড়ি করে আততায়ীর আগমন ঘটল। গাড়ির কাঁচ ভেঙে রাজু ঝার শরীর গুলি তে ঝাঁঝরা করে নিমেষে উধাও হয়ে গেল আততায়ীরা। অপারেশন পুরোপুরি সাকসেসফুল।

এবার আসা যাক আব্দুল লতিফের কথায়। ইলামবাজার এলাকায় বহুবছর ধরে গরুপাচার বা বিক্রির হাট টা চালাত এই ব্যক্তি। অনুব্রত, এনামুল হক, সায়গল এবং কলকাতায় শাসকদলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সাথে এই পাচার এর টাকা পয়সা লেনদেনেও যুক্ত ছিল।
রাজু ঝা মুখ খুললে যে মাথা থেকে ল্যাজা পর্যন্ত সবটাই প্রকাশ্যে চলে আসবে, সেটা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। তাই ফিনিশ রাজু ঝা, সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য,সাক্ষী সবুদ সবকিছু।

সাজানো খুনের ঘটনায় যারপরনাই দুঃখিত সরকার আপাত ফেরার আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে সিট গঠন করে তাকে নিশ্চিত পুলিশ প্রোটেকশন এর পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করল।
রাজু ঝার মৃত্যুতে লাভবান কারা হলো? অবশ্যই তৃনমূল সরকারের সেই সব নেতারা, যারা নিয়মিত এই চোরা চালানের বিশাল একটা আর্থিক অংশর ভাগ পেত।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখন অধীর আগ্রহে নাটকের শেষ অঙ্ক দেখার অপেক্ষায়। প্রথমত:এই খুনের খুনিরা কি ধরা পড়বে? দ্বিতীয়ত, কয়লা পাচার ও চোরা চালানের বিপুল টাকা রাজু ঝা কাদের কাছে পৌঁছে দিত?


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।