রাজ্য

রাজ্যে উধাও ৮৭ হাজার শুন্য পদ


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৩ জুলাই: চার বছর আগে ধর্মতলার সভার কিছুদিন আগে নবান্নে দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জী তথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রয়োজনে ১ লক্ষ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে সরকার। এবার সেই মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বললেন সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ করবেন ৩৩ হাজার ৬৮৭ জন। সামনে ২১ শে জুলাই। চার বছর আগের ঘোষনার সূত্র ধরে প্রশ্ন উঠেছে এই যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে ৮৭ হাজার পদ গেল কোথায়?

২০১৫ সালের ৩০ শে জুন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেন আর তার আগে মন্ত্রী সভার বৈঠক করেছিলেন। বৈঠক শেষ হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন যে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করবে সরকার আর তার ১০% থাকবে প্যারাটিচারদের জন্য। তাছাড়া ৬০ হাজার গ্রুপ-ডি এবং ৬০ হাজার গ্রুপ-সি নিয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন যে সরকার যদি অবিলম্বে কর্মী নিয়োগ না করে তবে সরকারি কাজে অসুবিধা হচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

তার মানে সেদিন ১ লক্ষ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ করার কথা বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জী। তারপর এসেছিল ধর্মতলার বার্ষিক সভা। সেই ২১শে জুলাই -এর সভায় মমতা ব্যানার্জী ঘোষনা করেন তারা ৩ লক্ষ চাকরি দিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তারা নাকি আরও ২ লক্ষ চাকরি দেবেন। এরপর গ্রুপ- ডি রিক্রুটমেন্ট বোর্ড খোলেন, পরীক্ষা হয়, সেই পরীক্ষার ফল বেরোয় ২০১৮ তে। কিন্তু কেউ নিয়োগ পত্র পেল না। শুন্য পদ যা ছিল তা শুন্যই রয়ে গেল।

সেই মমতা ব্যানার্জী গত ৯ ই জুলাই বলেছেন যে ৩৩ হাজার ৬৮৭ টি শুন্য পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে। সরকার পরিচালনায় খুবই অসুবিধা হচ্ছে – তাই এই সিদ্ধান্ত।

২০১২ সালের নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রক আশংকা প্রকাশ করেছিল এবং এক নির্দেশিকায় লিখেছিল যে সরকার পরিচালনা করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। বহু গ্রুপ –ডি পদ খালি পড়ে রয়েছে। তার তিন বছর পর ১ লক্ষ ২০ হাজার পদ পুরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা পুরণ হয়নি। আর সেই তিনিই ২০১৮ তে কমিটি গঠন করেন এই ঠিক করতে যে কিভাবে শুন্যপদ কমানো যায়।

অর্থ দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসারে সরকারের সেই কমিটির নাম “স্টেট লেবেল কমিটি অন রয়াশনালাইজেশন এন্ড অপটিমাল ইউটিলাইজেশন অব হিউম্যান রিসোর্স।” আট জনের এই কমিটিতে আছেন মুখ্যসচিব। এই কমিটির মুল কাজ হল যে শুন্যপদ পুরনের আদৌ দরকার কিনা বা বাস্তব সন্মত কিনা তা খতিয়ে দেখা। কোন দপ্তরের কত অনুমোদিত পদ এবং কোন পদে কত কর্মী আছেন তা বিচার করা। এছাড়া কোন দপ্তরে কত অতিরিক্ত কর্মী আছেন তা খতিয়ে দেখা। অদ্ভুত কথা এই কমিটি গত একবছরে মাত্র একটি বৈঠক করতে পেরেছে। কোন সুপারিশও তারা করেনি।

সুত্রের খবর অনুযায়ী রাজ্যে এখন ৩ লক্ষের বেশী সরকারি কর্মচারী আছেন। ২০১১ তে এই সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৬০ হাজার। এই আট বছরে কর্মী সংখ্যা কমেছে ৬০ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু এর কোন গুরুত্ব দেয়নি মমতা সরকার। নতুন কোন নিয়োগ হয়নি। তাহলে ৩৩ হাজার ৬৮৭ এই সংখ্যাটি মমতা ব্যানার্জী পেলেন কোথা থেকে?

অর্থ দপ্তর থেকে জানা গেছে গত সাত বছরে কর্মীদের বেতন বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সরকার মহার্ঘ ভাতা বকেয়া রেখেছে প্রচুর। তারপর সরকার নাকি এই ৩৪ হাজার শুন্যপদ পুরণ করবে? কিন্তু কিভাবে?


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।