দেশ রাজ্য

দেশে সমুদ্রের জল বৃদ্ধিতে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ


মাধবী ঘোষ, চিন্তন নিউজ, ১৩ জুলাই: জোয়ার এলে বুক কাঁপতে থাকে মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের। নদীর জলের টানে ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে মৌসুনির ভিটেমাটি। সেই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের তথ্য। সম্প্রতি লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং কংগ্রেস সাংসদ অ্যান্টোনির প্রশ্নের জবাবে ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের বন্দর গুলির মধ্যে বাংলার ডায়মন্ড হারবারে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে সব থেকে বেশি। তার এক ধাপ পিছনে আছে হলদিয়া।

ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক দেশের ১১ টি বন্দরের জলস্তর বৃদ্ধির যে তালিকা দিয়েছে, তাতে এক নম্বরে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার। তৃতীয় স্থানে হলদিয়া। দ্বিতীয় এবং পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে গুজরাটের কান্ডালা এবং ওখা বন্দর।

উপকূলীয় এলাকায় জলস্তরের এই বৃদ্ধি যে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিক্ষয়, সুনামির বিপদ বাড়াচ্ছে, তাও জানিয়েছে কেন্দ্র। ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই লোকসভায় জানানো হয়েছে, বেশকিছু উপকূলীয় এলাকা, নদীর মোহনা এবং দ্বীপ ক্ষয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশবিদরা জানান, শুধু মৌসুনি নয়, ওই এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ঘোড়ামারা, জম্বু দ্বীপ, নয়াচর এর বিভিন্ন দিক ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিপদের আশঙ্কা আছে সাগরদ্বীপেও। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুন্দরবন এলাকায় ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের বসবাস। রয়েছে বিপন্ন রয়েল বেঙ্গল টাইগারও। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার দাপটে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছিল সুন্দরবন। ফের কোন বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে কি অবস্থা হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন অনেক পরিবেশ বিজ্ঞানী।

সমুদ্র বিজ্ঞানী অভিজিৎ মিত্রের মতে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধির কারণ শুধু বিশ্ব উষ্ণায়নই নয়। তার ব্যাখ্যা, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য সাগরের জলস্রোত বাড়ছেই। তার ওপরে নির্বিচারে পলি ও বালি তোলা হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায়। তার ফলে তলদেশ বসে যাচ্ছে। ফলে দুদিক থেকেই বিপদ ঘনিয়ে আসছে। অভিজিত বাবু বলেন,”আন্দামান ও অন্ধ্রপ্রদেশে পলি নেই। তাই সেখানে জলস্তর বৃদ্ধির কারণ শুধু বিশ্ব উষ্ণায়ন”।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিদ্যার শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী বলেছেন, এই জলস্তর বাড়তে থাকলে নদীর জলে লবণাক্ত বা নোনতা ভাব বৃদ্ধি পাবে। তার ফলে জীব বৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিন্যাস যাবে বদলে। শুধু তাই নয় আগামী দিনে এই বিপদ আরো উত্তরে ( কলকাতার দিকে) এগিয়ে আসবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।