দেশ রাজ্য

জরুরী অবস্থার ৪৪ বর্ষ পূর্তি


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৬ জুন: এদিনের কথা ভেবেই সেদিন কে স্মরণ – জরুরী  অবস্থা জারির  ৪৪ তম  বার্ষিকীকে এভাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল- বুদ্ধিজীবী -সমাজ কর্মীরা। এই প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন সেদিন ছিল গণতন্ত্র  পুনরুদ্ধারের লড়াই আর আজ ধর্মনিরেপক্ষ  গনতন্ত্র রক্ষার লড়াই।                       

১৯৭৫ সালে ২৫ শে জুন  মধ্যরাতে ঘোষনা হয় জরুরী  অবস্থা। ১৯ মাস জারি  ছিল এই নির্দেশ। এই সময় দেশব্যাপী  এক ভয়াবহ  স্বৈরশাসনের জন্ম দিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীর রায়বেরিলি কেন্দ্র  থেকে নির্বাচন  নিয়ে মামলা হয় এলাহাবাদ  হাইকোর্টে। সেই মামলার রায় বেরোয় ১৯৭৫ সালের ১২ই জুন। বিচারপতি  রায়বেরিলিতে লোকসভা আসনে ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনী  দূর্নীতি এবং সরকারি  ক্ষমতার অপব্যাবহারের অপরাধে সেখানে নির্বাচন বাতিল  করে দেন। ইন্দিরা  গান্ধীর প্রার্থীপদ ৬ বছরের জন্য খারিজ হয়ে যায়। এই রায় ঘোষনার পরের দিন গুজরাট বিধানসভার ফল বেরোয় আর দেখা যায় ইন্দিরা  কংগ্রেস  সেখানে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত।

কিন্তু তার আগেই দেশ  জুড়ে শুরু হয়েছে একের পর এক ধর্মঘট বিক্ষোভ। সে এক অগ্নিগর্ভ  পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে ইন্দিরা গান্ধী সংসদীয়   গণতান্ত্রিক  ব্যবস্থার উপর আঘাত হানেন  এবং জারী  করেন আভ্যন্তরীণ  জরুরী  অবস্থা। কুখ্যাত “মিসা” আইনকে সংশোধন করে আরও কঠোর করা হয়। জরুরী  অবস্থার প্রথম দিন থেকেই সংবাদ পত্রের উপর দমন মূলক ব্যবস্থা জারী  হয়। হাজার হাজার বিরোধী  নেতানেত্রী গ্রেপ্তার  হয়ে যান। সিপিআইএম এর প্রথম সারির নেতাদের বেছে বেছে আটক করা হয়। জরুরী  অবস্থার প্রথম মাসেই  প্রায় ১০ হাজার মানুষ  গ্রেপ্তার হয়ে যান। তার মধ্যে ৩৯ জন সাংসদ।

সিপিআই এম এর সংসদীয়  নেতা কে. গোপালন বলেন “কাদের বিরূদ্ধে এ সরকারের এই পদক্ষেপ?  জনগনের বিরুদ্ধে”  সংবিধানের ধারা বারে বারে পরিবর্তন  হতে থাকে। প্রশাসন  যা খুশী  করতে পারত। যাকে খুশী  গ্রেপ্তার  করতে পারত। গ্রেপ্তার  করলে আদালতে পেশ  করা হত না। পুলিশ তাকে মেরেও ফেলতে পারত। কেউ কিছু জানতে পারত না।

শেষে মানুষের তীব্র বিরোধীতার আন্দোলনের চাপে পড়ে জরুরী  অবস্থা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। নির্বাচন হয় এবং কংগ্রেস  পরাজিত  হয়। সেবার প্রথম অকংগ্রেসি সরকার হয় কেন্দ্রে।

এই বছর এ জরুরী  অবস্থার বার্ষিকী পালনে উঠে আসছে  মোদী সরকারের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থাকে আক্রমনের অভিযান।            এবার ভোটে জিতে আসার  পর এই মারাত্মক  বিপদ আরও বেড়েছে। সিপিআই এম এর তরফে বলা হয়েছে অনেক রাজ্যতেই  জরুরী  অবস্থার বার্ষিকি  পালন করা হবে।

১৯৭৫  থেকে  ১৯৭৭ পর্যন্ত ভারত ঐক্যবদ্ধ  ভাবে লড়াই করেছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আর সে লড়াই সফল হয়েছিল। আজ আমাদের দেশে ধর্মনিরেপক্ষ  গণতান্ত্রিক  সাধারণতন্ত্র   আক্রান্ত। যেমন ধর্মের  উপর আক্রমন হচ্ছে তেমন গনতন্ত্রের উপরও আক্রমন হচ্ছে। তাকে রক্ষা করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবেই রক্ষা করতে হবে। সিপিআইএম পার্টির  কেরালা রাজ্য কমিটি  ২৬ শে জুন  দিনটি পালন করবে। মোদী  ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বার্তা দিচ্ছে। সিপিআইএম পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ্যাক বলেছেন দেশে সংঘ পরিবার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েমের পথে যাচ্ছে মোদী সরকার। এই সময় মানুষকে সচেতন  করা অবশ্য কর্তব্য  এবং প্রয়োজন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।