দেশ রাজ্য

এন আর সি আতঙ্কে আবার মৃত্যু এ রাজ্যে


নিউজডেস্ক, চিন্তন নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর: আসামে নাগরিক পঞ্জিকরন অর্থাৎ এন.আর.সি. ত্রাস এবার বাংলায় তিনজনের আত্মঘাতী হবার ঘটনা ঘটাতে সমর্থ হল। দুদিন আগে ময়নাগুড়ির মাধব ডাঙ্গা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্নদা রায়ের পর এবার মঙ্গলবার ধূপগুড়ি বাস টার্মিনাস লাগোয়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দ পল্লীতে একজন এবং জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাহাদুর গ্রামপঞ্চায়েতের সর্দার পাড়ায় একজন এনআরসির আতঙ্কে আত্মঘাতি হলেন।

ধূপগুড়ির মৃত ব্যক্তির নাম শ্যামল রায়(৪২)। ধূপগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। মৃতের স্ত্রী মৈয়ন্তী রায় জানান, বেশ কিছুদিন থেকেই ওনার স্বামী এন.আর.সি. আতঙ্কে ভুগছিলেন। ভিটে মাটি ছেড়ে বাংলাদেশ চলে যাওয়ার ভয়ে দিন দিন শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। এন.আর.সি.-র জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে না পেরে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন।

আত্মঘাতী টোটো চালক শ্যামল রায় ও তার পরিবার ভাড়া বাড়িতে থাকত। সেই কারণে জমির দলিলও নেই তাদের। লোক মারফত জানতে পারে প্রয়োজনীয় কাগজ তৈরি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার দরুন সেই টাকা কিভাবে জোগাড় হবে সেই দুশ্চিন্তা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তার স্বামী, এমনটাই অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর।

গোবিন্দ পল্লী এলাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শ্যামল রায়। সোমবার রাতে খাবার খাওয়ার পর হাটতে বের হন তিনি। অনেক রাত হলেও ফিরে না আসায় পরিবারের লোকেরা খুঁজতে বের হন। এরপর বাড়ির পেছনের একটি সীমানা প্রাচীরের পিলারের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় তাকে। মৃতের পরিবারের তরফে ধূপগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

মঙ্গল বার দুপুরে এই বাড়ির সামনে গেলে দেখা যায় কয়েক শত মানুষ ভীড় করে আছেন। মৃতের স্ত্রী বলেন, “এন.আর.সি. নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত ছিলাম। কি বিষয় ভাল করে বোঝা যায়না, কিন্তু শুধু শোনা যাচ্ছে কাগজ না থাকলে নাকি থাকা যাবে না।” মৃতের ভাগ্নি মুক্তি রায় বলেন, “কাগজ না থাকলে নাকি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এই আতঙ্ক নিয়ে মেসো কয়েকদিন থেকে চিন্তায় ছিলেন। চিন্তায় অসুস্থ হন। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সব নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলেন মেসো। কিন্তু এ রকম হবে কেউ ভাবিনি।”

কথা বলার সময়েই ময়নাতদন্ত করে দেহ নিয়ে আসেন আত্মীয় প্রতিবেশীরা। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মেয়ে স্ত্রী জ্ঞান হারান। এন.আর.সি. নিয়ে তৃনমুল তাদের হারিয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দুই মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস গৌতম দেব সতেরোটি গাড়ির কনভয় নিয়ে শতাধিক তৃনমুল কর্মিদের নিয়ে হাজির হন। এই ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য যুব নেতা নূরআলম এবংস্থানীয় সিপিআইএম পার্টি নেতা উদয় মোদক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন।

এলাকায় উপস্থিত বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, “কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। এই এন.আর.সি.-র বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট মানুষের সাথে পাশে থেকে লড়াই করবে।” মৃত শ্যামল রায়ের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে দু একজন প্রবীণ মানুষ বলেই দিলেন এই দু’ জনকে নিয়ে তাদের ভুল ভাঙ্গলো। মৃতদেহ আনার পর এলাকার মানুষের শোক। ধূপগুড়ির গোবিন্দ পল্লীতে উৎকন্ঠিত মানুষের ভীড়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।