নিউজ ডেস্ক:চিন্তন নিউজ:৭ই নভেম্বর:–১৯১৭সালের ৭নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই সমাজতন্ত্র একদিনে প্রতিষ্ঠা হয়নি। দীর্ঘ লড়াই, আন্দোলনের পথ পেরিয়ে সাফল্যের সমাজতন্ত্র।
১৯১৭ সালে সংগঠিত দুইটি বিপ্লবের মিলিত নাম। এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে (গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী মার্চ মাস) সংগঠিত প্রথম বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার সম্রাজ্য ভেঙে পরে এবং শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসকে উৎখাত করে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে উৎখাত করে বলশেভিক (কমিউনিস্ট) সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় যে বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসে তা ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি।
এ বিপ্লব ঘটেছিল কয়েকটি পর্বে। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে একের পর এক গণবিক্ষোভের পর ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন রাশিয়ার জার নিকোলাস।জার সেসময় ছিলেন পুরানো, অচল, এবং স্বৈরতান্ত্রিক এক শাসকচক্রের প্রতিনিধি।
তার পতনের পর রুশ উদারপন্থী এবং সমাজতন্ত্রী দলগুলো মিলে সরকার গঠন করেছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল রাশিয়াকে একটি আধুনিক পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে নিয়ে যাওয়া। তাদের কথায়, তাদের নীতির মূল আদর্শ ছিল ফরাসী বিপ্লব।তবে শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নে নয়, গোটা বিশ্বে বিংশ শতাব্দীতে এক সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা প্রভাব ফেলেছিল।
উল্লেখ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে পুঁজিবাদের স্বর্ণযুগ চলছিল। এই পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বহুদিনের সঞ্চিত ক্ষোভের এক রূপ হচ্ছে লেনিনের নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লব।
তখন সাফল্য অর্জন করলেও আজ শতবর্ষ পরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বাস্তব রূপ হবে আজকের পরিপ্রেক্ষিতে, লড়াই, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র আর একবিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা এক হ’তে পারে না। এখনকার চাহিদা অনুযায়ী সেই পথ বার করতে হবে, এই বিশ্বাস ‘চিন্তনের’।এই লড়াইয়ে সামিল মানুষের সাথী হবে ‘চিন্তন’।
লেনিনের কথায় গনতান্ত্রিক লড়াই না করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। অতএব আগে নিজের এবং মানুষের খর্বিত অধিকার পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, পরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হবেই। বর্তমানে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রায় সর্বক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদের দেশে নতুন করে লঙ্ঘিত অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে পার্লামেন্টারি ও এক্সট্রা পার্লামেন্টারি উভয় ক্ষেত্রেই বামেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাইরে লড়াই করতে পারলেও পার্লামেন্টের ভেতরে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার প্রতিনিধি না থাকলে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র স্থায়ী হয়েছিল দীর্ঘ ৭৩বছর। কিন্তু তা চিরস্থায়ী ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্র সাধারণ জনগনের মধ্যে এই ধারণা তৈরী করেছিল, যে এ যেন চিরস্থায়ী এক পরিবর্তন। কিন্তু মানুষকে বুঝতে হবে সমাজতন্ত্র একটি ধারা, এ লড়াই চলতেই থাকে। শ্রেণীর লড়াই শেষ হওয়ার নয়। সমাজতান্ত্রিক দেশেও পূঁজপতিরা তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় থাকে। চীনের সমাজতন্ত্র সারা বিশ্বের কাছে শিক্ষা নিয়ে ,বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার মধ্য দিয়েই ৭০বছর ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছে সমাজতন্ত্রকে।
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা, ধনতান্ত্রিকতার প্রবনতা, পূঁজিবাদের তোষণ, উদারনীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াই সংগ্রাম চলছে। ধনতান্ত্রিকতার উন্মেষ ঘটছে,আবার তার বিপর্যয় ও হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।যেমন লাতিন আমেরিকা, কিউবা,লাওসও নিজের পথে এগোচ্ছে।সম্প্রতি বলিভিয়া, আর্জেন্টিনায় কমিউনিস্টদের সাফল্য। এসব কিছুই আগামীর আন্দোলনের পূর্বাভাস। চিলিতে উদার অর্থনীতি প্রয়োগের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আন্দোলন নতুন পথ দেখায় অবশ্যই।
সাধারণত বলা যায় বিশ্বব্যাপী যে দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন সবক্ষেত্রেই নেতৃত্বে বামপন্থা। এবং দক্ষিণ পন্থাকে পিছু হটতে বাধ্য করছে অনেকক্ষেত্রে।এই প্রতিরোধ চালিয়ে নিয়ে