কলমের খোঁচা

ঘর ঘর তেরঙ্গা– বিজেপি’র  মুখোশ মাত্র


দেবু রায়,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:১০ই আগস্ট:–  ১৫ই অগাস্ট আমাদের দেশের  একটা গর্বের দিন, আনন্দের দিন আবেগের। কিন্তু যখন  আমরা দেখি  বিজেপির নেতারা বলেন  যারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন  না তারা দেশদ্রোহী, এইখানেই  আমার কতগুলি  প্রশ্ন আছে ।

বিজেপি কি কোনো দিন তেরাঙা পতাকাকে মান্যতা দিয়েছে?. ১৯২০সালে জন্মলগ্ন থেকেই তৎকালীন  জনসঙ্গ  (বর্তমানে  আরএসএস )ব্রিটিশদের পক্ষে ছিলো , তারা কোনো দিনই ব্রিটিশ বিরোধী  আন্দোলনকে সমর্থন  করেনি বরঞ্চ বিরোধিতাই  করে  ছিলো তাঁর সবচেয়ে জ্বলন্ত প্রমান ছিলো  সাভারকারের ব্রিটিশ প্রভুদের কাছে  আত্মসমর্পন (যেটা উনি আন্দামান জেলে বন্দি অবস্থায়  চিঠি  দিয়ে নিজে ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন  )

ভারতে    প্রথম পূর্ণ স্বরাজ এর দাবী করেন  কমিউনিস্ট রা১৯২৫সালে। তারপরে ১৯২৯ সালে লাহোর অধিবেশনে “পূর্ণ স্বরাজ ” দাবী জানিয়ে ১৯৩০সালে ২৬শে জানুয়ারী স্বাধীনতা দিবস  হিসাবে পালন  করার  জন্য দেশ  বাসির কাছে  আহ্বান করা  হয় , তখনই  তিনরঙা  পতাকাকে জাতীয় পতাকা  হিসাবে মানা হয় । কিন্তু এই তেরাঙা পতাকাকে দেশবাসী মানলেও তৎকালীন সংঘ চালক  হেডগাওয়ার একটি সার্কুলার পাঠিয়ে ফাগো ওয়া ঝান্ডা (গেরুয়া পতাকা )কে জাতীয় পতাকা  হিসাবে উপাসনা  করার  নির্দেশ দেন। তারপর  থেকে  আজও আরএসএস এর তাঁদের কোনো কাজে তেরাঙা ব্যবহার করে  না, তাঁদের ফাঁগোয়া ঝান্ডা ব্যবহার করে, এটা কি বিজেপির নেতা শুভেন্দু বাবুরা জানেন?.

আরএসএস যে খোলা  খুলি ভাবেই তে রঙ্গা পতাকার নিন্দা করেছে তাঁর একটা উদাহরণ  যেটা ১৯৪৬ এ ১৪ই জুলাই নাগপুরে গুরু পূর্ণিমার এক সমাবেশে ভাষণ  দিতে গিয়ে গোলওকার  বলেন  :- “গেরুয়া পতাকাই  সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির  ধারক । এটি হচ্ছে  ঈশ্বর এর মূর্ত রূপ। আমরা দৃঢ়  ভাবে বিশ্বাস করি , একদিন গোটা দেশ  গেরুয়া পতাকাকেই  অভিবাদন  জানাবে।তেরাঙা নয়।”

স্বাধীনতার  ঠিক  আগে দেশের সংবিধান  রচনা  করার  সময়  যখন  তিন রঙের  জাতীয় পতাকা  হিসাবে গ্রহন  করা  হয় ,  ঠিক  তখন  আরএসএস এর মুখপত্র অর্গানাইজার ( “oraganisar “) এ ১৯৪৭সালের ১৪ ই  অগাস্ট তাঁদের সংখ্যায়, অসম্মান করে  লেখা  হয়  :- #বরাত  জোরে যে -সব  লোকেরা ক্ষমতায়  এসেছে, তারা আমাদের হাতে তে -রাঙা ধরিয়ে  দিলেও হিন্দুরা কখনোই একে সন্মানও করবে না এবং  মান্যতাও দেবে না। তিন সংখ্যা  এমনিতেই অশুভ। তিন -রং  পতাকা  অবশ্যই  অত্যন্ত খারাপ মানসিক প্রভাব ফেলবে, যেটা দেশের  পক্ষে ক্ষতিকর #।

সুতরাং যে প্রশ্নটা   স্বাভাবিক ভাবেই উঠে  আসে সেটা হলো  তিন সংখ্যাটা যদি অশুভ  হয় , তাহলে শিবকে ত্রিনেত্র বলা হয়  বা দুর্গার তো  তিন নেত্র, তাহলে তাঁরাও কি অশুভ? তাহলে  তাঁদের পুজো করেন  কেন ?. ওনারা তো হিন্দু ধৰ্মের ঠেকা  নিয়ে বসে  আছেন, উত্তরটা আমরা জানতে চাই।শুধু তাই নয় , স্বাধীনতার  পরে ও  তে -রাঙা পতাকাকে জাতীয় পতাকা  হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করে , সেই পরম্পরা  আজও চলছে
এবারে আরও একটা তথ্য  দিচ্ছি যেটা গোলওকার  তাঁর #bunch of thought # যেটা নাগপুর থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো । “ভেসে চলা আর ভেসে চলা “শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছে । #আমাদের দেশের  নেতারা দেশের  জন্য এমন  একটা পতাকা  নির্ধারণ  করেছেন  এটা স্রেফ ভেসে চলা  ছাড়া  আর কিছু  নয় । আমাদের দেশ  এক সুপ্রাচীন মহান  দেশ  যারা গৌরবময় অতীত আছে। তাহলে  কি আমাদের নিজস্ব পতাকা  বলে  কি কোনো দিন কিছু ছিলো  না?। ছিলো  অবশ্যই  ছিলো , তাহলে  সেই গুলোকে অবজ্ঞা করে  সংখ্যা  গরিষ্ঠ হিন্দুদের মতকে উপেক্ষা করে  কেন  এই তিন -রঙের  পতাকা কে কেন  বাছা  হলো , আসলে এটাই চরম  শুন্যতা। শুধু  মাত্র অন্য সম্প্রদায় এর মানুষকে খুশী  করার  জন্য এটা করা  হয়েছে । তাহলেই  বুঝতে  পারছেন  দেশভক্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে  রাষ্ট্র ক্ষমতা  দখল আর যেদিন বিজেপি পুরোপুরি রাষ্ট্রকে নিজের ক্ষমতায়  আনতে পারবে সেদিন দেখতে  পাবেন রাষ্ট্রের একটাই ঝান্ডা সেটা হলো  ফাগুয়া ঝান্ডা।
এখন তো শুধু  রাষ্ট্রের আবেগ দিতে মানুষকে মাতিয়ে রাখো , আর অন্য দিকে দেশটা  আদানি /আম্বানি দের কাছে  বিক্রী করে  দাও। হ্যাঁ এটাই বিজেপি যার মুখ  একটা, আর মনে  একটা।।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।