দেশ

বিখ্যাত নেতার নিকৃষ্টতম মন্তব্য


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:২৯শে জানুয়ারি:–সম্প্রতি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জয় করে ভারতকে গর্বিত করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়! ভারতীয় তথা বাঙালী প্রতিভা অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় জয়পুরের একটি সাহিত্য সভায় কথা প্রসঙ্গে বলেন তিনি ভারতে থাকলে নোবেল পুরস্কার পেতেন না!

তাঁর এই বক্তব্য সম্পূর্ণ না বুঝেই বিজেপির এক নেতা অনুপম হাজরা সোস্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে পোস্ট করেছেন- “আপনি ভারতে না জন্মালে ভারতের কোনো ক্ষতি হত না! কারণ নিজের জন্মভূমি প্রতি আপনার ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা বোধ থাকলে আপনি আপনার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে অন্য দেশের সেবা না করে নিজের দেশের সেবা করতেন” বলা বাহুল্য নেতার এহেন ঔদ্ধত্য এবং কুরুচিকর মন্তব্যে নোবেল জয়ী অর্থনীতি বিদের প্রতিভা বা কৃতিত্বে কোনো প্রভাব পড়ে না!

তথাপি বিশ্বের এবং ভারতের জনগনের জানা দরকার বিজেপি নেতার ভাবনা চিন্তা বিচার বিবেচনাহীন এমন মন্তব্যের পিছনে প্রকৃত তথ্য টি কি? প্রথমেই নোবেল জয়ীর বক্তব্য আলোচনা করলে দেখা যায়, জয়পুরের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা অভিজিৎ বাবুকে প্রশ্ন করেন তিনি ভারতে থাকলে নোবেল পেতেন কিনা? উত্তরে শ্রী বন্দোপাধ্যায় বলেন “আমি তা ভাবি না” তিনি এ ও বলেন এ দেশে প্রতিভার ঘাটতি নেই! এই প্রসঙ্গে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এম আই টি এর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন বিশ্বের সেরা পি এইচ ডি ছাত্ররা এম আই টি তে গবেষণা করেন। তিনি তাঁর গবেষণার কাজে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর উপকৃত হয়েছেন এবং তিনি মনে করেন তাঁর কাজের যে কৃতিত্ব তিনি পেয়েছেন সেই কৃতিত্ব এম আই টির অনেকেরই আছে!

এ প্রসঙ্গে এই বিশ্ব বিজয়ী অধ্যাপকের প্রতিভার পরিচয় নিলে জানা যাবে, তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, জে এন ইউ থেকে পড়াশোনা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি করেন এবং এম আই টির অর্থনীতির অধ্যাপক।এই প্রণম্য প্রতিভার সমালোচনা করার জন্য ও যথেষ্ট শিক্ষার প্রয়োজন! আসলে বিজেপি নেতা শুধু একটি বাক্য শুনেই না জেনে যে বিকৃত মন্তব্য করেছেন তার মূল কারন অবশ্যই ব্যক্তি অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর কাজের বিরোধিতা করা! কারণ অভিজিৎ বাবু সুদূর আমেরিকায় বসে নোবেল জয় করলেও তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল নিজের দেশ ভারতের দারিদ্র্য ও দেশের অর্থনীতির অসম বন্টণ। অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রী এস্থার দুফোলো এবং সঙ্গী মাইকেল ক্রেমার বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেন। আর দারিদ্র্য সূচকে ভারতের অবস্থান যথেষ্ট লজ্জাজনক! যা শাসক দলের কটাক্ষের বিষয় হওয়া স্বাভাবিক। অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় দেশের দারিদ্র্য মোচনের উপায় হিসেবে বলেন, হত দরিদ্র মানুষের হাতে ছাগল বা গাভীর মতো একটি সম্পদ দিতে হবে দেখা যাবে দশ বছরে তারা আগের তুলনায় ২৫% স্বচ্ছল ও স্বাস্থ্যকর জীবনের অংশীদার হবে, কারণ সম্পদ হাতে দিলে সেই সম্পদ বৃদ্ধির জন্য মানুষ কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত হবে! তাই অর্থনীতিবিদ দরিদ্র মানুষের হাতে সম্পদ দিয়ে দারিদ্র দূরীকরণের কথা বলেন। তিনি কর্তৃত্ববাদ ও অর্থনৈতিক সাফল্য এক নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ভারতের মতো দেশে শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন বলেও জোরালো বক্তব্য রাখেন। এছাড়া এন ডি এ সরকারের নোট বাতিল এন আর সি,বা সি এ এ এর বিরোধিতা করেছেন।

বলা বাহুল্য একজন অর্থনীতি বিদ হিসেবে ভারতের সম্পদের অসমবন্টণ কর্তৃত্ববাদ, সুবিধাবাদী অর্থনীতির সমালোচনা করেছেন; যা কোনো ভাবেই শাসকদলের মনঃপূত হতে পারে না। বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা অভিজিৎ বাবুর বক্তব্যের তাৎপর্য অনুধাবন করতে সক্ষম নন তিনি কেবলমাত্র তাঁর দল বিজেপি তথা এন ডি এ সরকারের সমালোচনা টুকু নিয়ে দলের অনুগত সেনা হিসেবে এমন কুরুচিকর মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। একজন নোবেল জয়ী প্রতিভার বক্তব্যের বিরোধীতা করতে যথেষ্ট সচেতনতা ও জ্ঞান প্রয়োজন। পৃথিবী খ্যাত অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে একজন দেশনেতার কদর্য অসংযত মন্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়! অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় ভারতীয় হিসেবে বিশ্বের দরবারে যে সম্মান অর্জন করেছেন তার জন্য আপামর ভারতবাসী গর্বিত!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।