চৈতালি নন্দী, বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:২রা ফেব্রুয়ারি:– বিশ্বের জলাভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে ১৯৭১ সালে ২রা ফেব্রুয়ারি ইরাণের রামসার শহরে একটি চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজলাভূমি দিবসের সূত্রপাত, যা ‘রামসার চুক্তি’ নামে পরিচিত।তারপর ১৯৯৭ সালের পর থেকে প্রতিবছর ২রা ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্ব জলাভূমি দিবস রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়ে আসছে।
পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম। এর সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে নদীর জলস্তর স্বাভাবিক রাখা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সহ অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি, যা বিশ্বজুড়ে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সর্বোতোভাবে সাহায্য করে। জলাভূমি বিলুপ্ত হলে বিপন্ন হবে মৎস্য প্রজাতি ছাড়াও বিভিন্ন জলজ প্রাণী সহ অন্যান্য পশু ও পরিযায়ী পাখি যাদের বাসস্থান হল জলাভূমি। জলাভূমি বিনষ্ট হলে বাড়ে বন্যা ও খরার সম্ভাবনা, বিঘ্নিত হয় খাদ্য শৃঙ্খল। জলাভূমি অবলুপ্তিতে ক্ষতি হয় ধান, পাট চাষের যাতে লাগে অতিরিক্ত পরিমাণে জল। এছাড়াও স্বল্পব্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যম ও পর্যটন শিল্প হিসেবেও কাজ করে এই জলাভূমিগুলো, যা সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশের ভিত্তিভূমি।
গত ১০০ বছরে বিশ্বে জলের ব্যবহার ৬গুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে অনেক বড় বড় জলাভূমি। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে বিগত তিন দশকে ৩৫% জলাভূমির অবলুপ্তি ঘটেছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর, নদী, খাল, জলাশয় ভরাট করা বেআইনী। কিন্তু বর্তমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে এবং নগরায়নের দোহাই দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মদতে এবং সরকারের উদাসীনতায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জলাভূমি। ফলে জলাভূমিনির্ভর প্রান্তিক মানুষদের উপরে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
বর্তমানে জলাভূমি সংরক্ষণ সম্বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এই বিষয়ে সদর্থক উদ্যোগ নিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে একে একটা গণআন্দোলন এর রূপ দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।