কলমের খোঁচা

করোনা মোকাবিলায় সাম্প্রদায়িক প্রচার চরম আত্মঘাতী


শ্রীরূপ গোপাল গোস্বামী :চিন্তন নিউজ:৩রা এপ্রিল:–মহামারী আক্রান্ত পৃথিবী যখন সামাজিকীকরণের দিকে ঝুঁকছে, ধর্ম – বর্ণ- সম্প্রদায় – জাতপাত ভুলে বৈজ্ঞানিক পথে চলতে বাধ্য হচ্ছে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির নির্বোধ তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করছে তখন দেখা গেলো হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গ উঠে আসছে। ফলে সমস্যাকে লঘু করার চেষ্টা হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন কর্পোরেট পত্র-পত্রিকায় দিল্লির নিজামউদ্দিনে তবলীগী জামাতের ধর্মীয় সম্মেলন এবং তাকে কেন্দ্র করে করোনা সংক্রমণ নিয়ে অত্যন্ত সরব। দিল্লির দাঙ্গার পর বিষ ছড়ানোর একটা সুযোগ অন্তত পাওয়া গেছে। ১৩ই মার্চ ভারত সরকার দুই শতাধিক মানুষের জমায়েত হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আবার এই ১৩ তারিখ থেকেই এই ধর্মীয় সমাবেশ শুরু হয়। সারা দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষ এবং ১৭টি দেশ থেকে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ সমবেত হয়েছিল। সমাবেশের পরেও এই মানুষেরা থেকে যায় এবং করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। তবলীগী জামাতের নির্বুদ্ধিতার দায় আজ বহন করতে হচ্ছে বহু মানুষকে। এখন প্রশ্ন হলো দিল্লির সরকার বা পুলিশের কাছে এই সংবাদ কি ছিল না? এই অনুষ্ঠান করার সুযোগ দেওয়া হলো কেন? বিদেশি মানুষদের বিমানবন্দরে আটকানো হলো না কেন? এমনিতেই ভারতবর্ষে করোনাকে মোকাবিলা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক পরে।

১৬ই মার্চ হিন্দু মহাসভা দিল্লির বুকে গোমুত্র পানের বড় জমায়েত করলো। ১৭ ও ১৮ই মার্চ তিরুপতিতে দুই দিনে গড়ে চল্লিশ হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছিল। আর সর্বশেষ লক ডাউনের মধ্যে গত ২৫শে মার্চ অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য রামলালার মূর্তি একটি অস্থায়ী মন্দিরে স্থানান্তরিত হয়। ফাইবারের তৈরি বুলেটপ্রুফ মন্দিরে ৯ কেজি ওজনের সিংহাসনে রামলালাকে স্থাপন করা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, হরিদ্বার, মথুরা, বারাণসী থেকে পুরোহিতেরা এখানে সমবেত হয়েছিলেন। ভক্তবৃন্দদের সমাবেশ ছিল ভাল সংখ্যায়। আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে রামনবমীকে কেন্দ্র করে মানুষের সমাবেশ ঘটে। প্রশ্ন হলো এই সমাবেশগুলির খবরও কি সরকার বা প্রশাসনের কাছে ছিল না?বজায় থাকলো কি ‘সামাজিক দূরত্ব’? এর উত্তর কে দেবে? সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমাবেশ, অতএব কর্পোরেট মিডিয়ার মুখে কুলুপ।

এখন প্রশ্ন হলো লক ডাউন কেন? মানুষের সমাবেশ যে কোনও উপায়ে বন্ধ করা। সমবেশ থেকে করোনা ভাইরাস বা কোভিড- ১৯ এর সংক্রমণ হবে রকেট গতিতে। এটাই বিজ্ঞান। আজ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ধর্ম তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে, সে কথা নির্বোধেও বোঝে। বর্তমান বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর বৈশিষ্ট্য হলো এটিকে কোনও একটি দেশ, বিশ্বের কোনও একটি অংশ অথবা জনসংখ্যার কোনও একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন। এই সময়ে কুসংস্কার আঁকড়ে থাকা হবে চরম মুর্খামি।

সুতরাং ১৩ ই মার্চের পর যেখানে যেখানে দুইশত মানুষের অধিক সমাবেশ ঘটেছিল তার অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন। যারা সেই সমাবেশগুলিতে হাজির ছিলো তাদের চিহ্নিত করা এবং নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা ভীষণ জরুরী।

এই প্রতিবেদন যখন লিখছি তখন সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে নয় লাখের অধিক আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় আটচল্লিশ হাজার। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এক ভয়ংকর বিপদের মুখে আমরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশিত পথেই আমাদের চলতে হবে, সকলকে এক হয়ে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর যে ভাবে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করেছে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ১৩৯ কোটি মানুষের দেশ আমাদের এবং এর বড় অংশের মানুষ হলো গরীব। সেই গরীব মানুষের বিপদ আরও বেশি। সরকার ছাড়া আর কে থাকবে এই মানুষের পাশে? সরকারী তরফে তথ্য চেপে রাখা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক আলোচনা সামনে আসছে। এ কাজ করলে শত্রুকে ছোট করে দেখা হবে। সে কাজ হবে চরম আত্মঘাতী। সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুর সাথে লড়াই করে তাকে পরাস্ত করতে হবে। থাকনা এখন সমস্ত রকমের ভেদাভেদ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।