কলমের খোঁচা

প্রসঙ্গ-বিশ্ব ক্যান্সার দিবস



বিশেষ প্রতিবেদন-ডা:স্বপ্না চট্টরাজ: চিন্তন নিউজ:৪ ঠা ফেব্রুয়ারি -বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি (4th February) বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসাবে পালিত হয়। ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। এই দিনটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল (UNCC) নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয় যার সদরদপ্তর জেনেভায়। ১৭০টির বেশি দেশে এই সংস্থার সদস্য আছে।
বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর ৯.৬লক্ষ মানুষ ক্যান্সার এর কারণে মারা যায়। এর প্রতিরোধ যদি সঠিকভাবে করা না যায় তাহলে ২০৩০সালের মধ্যে সংখ্যাটি দ্বিগুনে পরিনত হবে। যত সংখ্যক মানুষ ক্যান্সারে মারা যায় তার এক তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
২০২১সালের ক্যান্সার এর মূল বিষয়বস্তু ছিল “Iam and I will”-আমি আছি এবং আমি থাকব।
২০২২সালের ক্যান্সার এর মূল বিষয়বস্তু (theme) -ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ-যা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
এবার দেখা যাক ক্যান্সার কি, কি কারণে ক্যান্সার হয়, এর লক্ষন কি এবং কিভাবে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ক্যান্সার হল অনেক গুলো জটিল রোগের সমষ্টি। আমাদের শরীর অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে গঠিত। এই কোষগুলির অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণই হল ক্যান্সার। শরীরের যে কোন জায়গায় ক্যান্সার হতে পারে। ভারতে সবচেয়ে বেশি হয় যে ক্যান্সার সেগুলো হল স্তন (Breast) , সারভাইক্যাল (Cervical), মুখগহ্বর (Oral), কলোরেক্টাল (Colorectal), পাকস্থলী (Stomach), যকৃত (Liver), ফুসফুস (Lung)
পুরুষদের সাধারণত ফুসফুস, প্রস্টেট, কলোরেক্টাল, পাকস্থলী, যকৃত ক্যান্সার বেশি হতে দেখা যায়। মহিলা দের সাধারণত স্তন, সারভাইক্যাল, ত্বক, ওভারী, ফুসফুস, থাইরয়েড, কলোরেক্টাল, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হয়ে থাকে।
সারা বিশ্বে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার। ৭১শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। দায়ী থাকে তামাক। এমনকি ২২শতাংশ অন্য ক্যান্সারের জন্যও দায়ী থাকে তামাক।
সাধারণত চার ধরনের ক্যান্সার হয়।
১-কারসিনোমা
২-সারকোমা
৩-লিউকেমিয়া
৪-লিমফোমা
শুধুমাত্র একটি কারনে ক্যান্সার হয় না। এর বহু কারন আছে।
১-শারিরীক কার্সিনোজেনস( অতি বেগুনি ও আয়নাইজিং বিকিরণ)
২-জৈবিক কার্সিনোজেনস (ভাইরাস বা হেপাটাইটিস বি এবং সি থেকে সংক্রমণ)
৩-অতিরিক্ত ধূমপান, তামাক সেবন, মদ্যপান ইত্যাদি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪-ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যেমন- অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক।
এছাড়াও পক্বতা বা এজিং কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হিসেবে ধরা হয়।
ক্যান্সারের লক্ষণ গুলি নির্ভর করে ক্যান্সার টি কোথায় বা কোন অঙ্গে হয়েছে তার উপর এবং এটি এর কাছাকাছি অন্য অঙ্গকে প্রভাবিত করে থাকলে বা ছড়িয়ে পড়লে (spread) , শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষন বা উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়।
তবে ক্যান্সারের কিছু পূর্বাভাস আমরা পেয়ে থাকি। এই পূর্বাভাস থেকে যদি আমরা সচেতন হতে পারি তবে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অনেকাংশেই সক্ষম হব।
কিছু পূর্বাভাস:-
১-মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তনের আকার ও আয়তনের পরিবর্তন।
২-মলত্যাগ ও মূত্র ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন।
৩-শরীরের কোনো খোলা জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত।
৪-শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
৫-অনেকদিন হয়ে গেলেও যে ঘা সারছে না।
৬-ঢোক গিলতে বা খাবার গিলতে অসুবিধা।
৭-হঠাৎ গলার স্বর পরিবর্তন হওয়া।
৮-বিরক্তিকর কাশি।
৯-সবসময় ক্লান্তি অনুভব করা
১০-জ্বর একনাগাড়ে থেকে যাওয়া।
১১-সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করা।
এবার আসা যাক কিভাবে ক্যান্সার কে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
১-খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, বাদাম, ফল রাখতে হবে।
২-নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করতে হবে।
৩-অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
৪-সিগারেট, বিড়ি, মদ্যপান, গুরাখু , পান, জর্দা ইত্যাদি খাওয়া চলবে না।
৫-হেপাটাইটিস প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে।
৬-লক্ষনের পূর্বাভাস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
৭-নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়। যাদের আমরা ভালবাসি তাদের জন্য, সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য। ক্যান্সার নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে তা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। যেমন-ক্যান্সার হলে মানুষের নিয়তি হল মৃত্যু, তা আর সারে না। এই ধারণা বা বিশ্বাস রোগী এবং তার পরিবারের মনোবল অনেকটাই ভেঙে দেয়। ফলে সেখানেই অর্ধেক লড়াই আমরা হেরে বসে থাকি। কিন্তু একেবারে প্রথম পর্যায়ে(Ist Stage) ধরা পড়লে ক্যান্সার এর নিরাময় সম্ভব। এটা এখন বিজ্ঞান সম্মত সত্য। এই জন্য এই ৪ই ফ্রেব্রুয়ারি দিনটির মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলার আহ্বান জানান হচ্ছে। সুস্থ জীবন যাপন, প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়, সবার জন্য চিকিৎসা ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন এই চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিলে আমরা ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু হার কমাতে পারবো বলে মনে করা হচ্ছে। তাই শুধু নির্দিষ্ট দিবস নয় প্রতি দিনের সচেতনতাই আগামী দিনে বিশ্বকে ক্যান্সার মুক্ত করতে সহায়তা করবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।