কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:৩রা মে:– বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপকার লেনিনের জন্মদিন, শ্রমিকের অধিকার সুনিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার দিন ‘মে দিবস’ পালিত হ’ল এক ভিন্ন আবহে, এই রাজ্যের ২ লক্ষ শ্রমিক ভাই আজ লকডাউনের জন্য আটকে রয়েছেন ভিন রাজ্যে। এক অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে অর্ধাহারে, অনাহারে, রোদ বৃষ্টিতে ভিজে কোথাও বা পুলিশের ডান্ডার ঘায়ে কিংবা বিষাক্ত রাসায়নিকে স্নান করে ক্ষতবিক্ষত দেহে ও মনে দিন কাটছে জীবন যুদ্ধের পরিশ্রমী সৈনিকদের। কেন্দ্র ও রাজ্য কোনো সরকারই এগিয়ে আসছেন না এঁদের ঘরে ফেরানোর তাগিদে।
রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের উদ্যোগে সরকারের সম্মতি নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে আসবেন নিজের রাজ্যের সীমান্তে, বর্ডার থেকে ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেবে প্রশাসন।। মেডিক্যাল ফিটনেসের সার্টিফিকেট নিয়ে আসলে তবেই মিলবে এই সুযোগ। পুনরায় আর এক দফা টেস্ট হবে রাজ্যের উদ্যোগে। তারপর চিন্তা ভাবনা করে দেখা হবে কীভাবে তাঁদের নিজের এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হল যাঁদের দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রোজগার নেই জমানো টাকাও নিঃশেষ, দিন কাটছে অনাহারে তাঁরা কোথায় পাবেন এত টাকা? ঘরে ফেরার আবেদন পত্রের দাম ১০০–২০০ টাকা, এরপর বিভিন্ন কাগজপত্র জেরক্স করার খরচ এবং গাড়িভাড়া সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার ধাক্কা! কোথায় পাবেন এত টাকা? কে ধার দেবে?
অনেকেই দেখেছেন, ১ লা মে থেকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশের সরকার দায়িত্ব নিয়ে নিজের রাজ্যের শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, বিশেষ ট্রেনের বা বাসের ব্যবস্থা করেছেন সেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন নিশ্চুপ। সরকারের মনে রাখা দরকার যে এঁরা কেউই অন্য রাজ্যে বেড়াতে যান নি—- নিজের রাজ্যে কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়েছেন অন্যত্র যেতে। পরিবারের ভরণপোষণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবী করেছেন আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য যা কিছু করার তা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে।
বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে, আর্থিকভাবে এর দায় কেন্দ্রীয় সরকার নিক। এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে কর্পোরেটদের যদি সুবিধা দেওয়া যায়, ঋণ মকুব করা যায় তাহলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এটুকু দায়ভার কেন্দ্রকেই নিতে হবে। কীসের জন্য পি এম কেয়ার্স ফান্ড? কাদের বিনোদনের জন্য? শ্রমিকরি ফিরে এলে যথাযথ মেডিক্যাল টেস্টের ব্যবস্থা করে তাঁদের কোয়েরেন্টাইন অথবা নিজেদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুক রাজ্যসরকার। তা না হলে শ্রমিক সংগঠনগুলো বাধ্য হবে আন্দোলনে নামতে। প্রত্যেকটি পরিযায়ী শ্রমিকের নিজের ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।