রাজ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টের ‘ সম্ভবত’ দিন ঘোষণার পর মমতা এবার কি করবেন? – গৌতম রায়


চিন্তন নিউজ: ১৪ই জুলাই:- একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থার কার্যপ্রণালী ‘ সম্ভবত’ শব্দের দ্বারা নির্ধারণ করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আর সেই অটোনমাস প্রতিষ্ঠানের প্রধানা , মুখ্যমন্ত্রী ‘ সম্ভবত’ শব্দটিকে কার্যত ‘ আদেশ’ বলে ধরে নিচ্ছি আমরা- এই কথা বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের কাছে বলে জানাচ্ছেন; কয়েকদিন পরে অবশ্য আমাদের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু ‘ সম্ভবত’ বলে একটি সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ্যে জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ ঘিরে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর ‘ সম্ভাবনা’ থুড়ি,’ আদেশ মোতাবেক’ সংশ্লিষ্ট দিনেই , মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সময়পঞ্জী থেকে দু’ঘন্টা পিছিয়ে এই ফল প্রকাশিত হবে বলে জানালেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী।
পাঠক কি কোনো কল্পিত সংলাপ ভাবছেন? ভাবলে আপনার টেলিভিশন সেটটা চালু করুন এক্ষুনিই। চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন আপনি নিজেই করুন। আর ভাবুন, অনিলা দেবী, অনিল বসাক, রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, সুদিন চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষেরা একদিন এই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন।স্বয়ংশাসিত এই সংস্থাটি কি করবে না করবে, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনো মুখ্যমন্ত্রী তা তিনি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ই হোন আর জ্যোতি বসু , কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই হোন- কোনো মুখ্যমন্ত্রী আজ পর্যন্ত একটি শিক্ষা সংক্রান্ত অটোনমাস সংস্থার পরীক্ষার রেজাল্ট সংক্রান্ত ঘোষণা প্রকাশ্যে করেছেন?
প্রফুল্লচন্দ্র সেনের মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়।বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের এক প্রথিতযশা অধ্যাপক ডঃ গোবিন্দ দাস সংসদের সভাপতির দায়িত্ব প্রথম দেওয়া হয়েছিল।বিরোধী নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব স্বত্ত্বেও তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল বাবু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ গঠন ঘিরে বিধানসভার বাইরে ও একাধিক বার আলোচনা করেছিলেন।ডঃ দাস যেহেতু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাই তাঁর একদা রাজনৈতিক সতীর্থ তথা বর্ধমানের মানুষ বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরীর সঙ্গে পর্যন্ত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন আলোচনা করেছিলেন।
এইসব শিষ্টতা আজকের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশা করাটাই অন্যায়।কেবল প্রশ্ন এটাই যে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শীতঘুম কি এই প্রখর গ্রীষ্মেও কাটছে না? পার্থবাবু , আপনি কি জানেন, প্রফুল্ল সেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে ডঃ গাঙ্গুলিকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি করেছিলেন,’৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে , নোতুন শিক্ষামন্ত্রী জ্যোতি ভট্টাচার্য কিন্তু সেই সভাপতি পদচ্যুত করবার ধৃষ্টতা দেখান নি।
পার্থবাবু, একবার ভাবুন তো, আপনার মুখ্যমন্ত্রীর ‘ মানুদা’ , এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন, আজ যেভাবে আপনার দপ্তরের উপরে মমতা নাক গলালেন, সেভাবে একটি বার ও তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কাজে ও নাক গলিয়েছিলেন কি না?
পার্থ বাবু, সেদিন যদি সিদ্ধার্থশঙ্কর , মুখ্যমন্ত্রী হিশেবে শিক্ষা দপ্তরের অধীন একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থার উপর নিজের কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রীকে না জানিয়ে চাপিয়ে দিতেন, তাহলে কিন্তু আপনার মতো ‘ পদলোভী’ পরিচয়কে সার্থকতা দিতে মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়ার আঁকড়ে পড়ে থাকতেন না।
পার্থ বাবু ভুলে যাবেন না, সিদ্ধার্থশঙ্কর তাঁর দপ্তরের কাজে নাক গলাচ্ছেন– এই অভিযোগ তুলে তাঁর সমবায় মন্ত্রী অরুণ মৈত্র পদত্যাগ পর্যন্ত করেছিলেন।তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নতজানু হ’তে বাধ্য হয়েছিলেন একজন মন্ত্রীর অদম্য জেদের কাছে।
আজ পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক পরিস্থিতিটা যে কি, তা উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট কবে বের হবে, তা ঘিরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য ঘোষণার ভিতর দিয়েই বুঝতে পারা যাচ্ছে।কোবিদ ১৯ ঘিরে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একদম বিধ্বস্ত।চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নামক একজন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রাজ্য মন্ত্রীসভায় আছেন। এই করোনার ভয়াবহকতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাতীত , চন্দ্রিমা দেবীকে কি কেউ একটি বারের জন্যেও দেখতে পেয়েছেন? রাজ্যের প্রবীণতম মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জীকে একটি বারের জন্যে এই অতিমারীর মোকাবিলাতে সক্রিয় হতে দেখেছেন? যা হচ্ছে , যেটা হচ্ছে, যেখানে হচ্ছে– একটাই কেবল মানুষ।তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কোথায় লাল ইঁট দিয়ে লক্ষণরেখা এঁকে সাদা দাগ ফেলতে হবে- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হাজির।কোথায় পাড়াতে মাইক ফুঁকতে হবে– মুখ্যমন্ত্রী মমতা হাজির।তাই উচ্চ মাধ্যমিকের ফল কবে প্রকাশিত হবে, খোদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে বাদ দিয়েই যে সেটা মমতা ঘোষণা করে দিয়েছেন– এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।তাই আপনার পাড়াতে শারদ উৎসবের কমিটি তৈরির বৈঠকেও যদি দেখেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সশরীরে হাজির হয়ে ‘ সম্ভাবনা’র কথা বলছেন– একদম অবাক হবেন না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।