মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:১৫অক্টোবর:–“নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/ বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান” … বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য-( unity in diversity.) ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল ভাবনা।
ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই জানা যাবে ভারতবর্ষ প্রধানত বিভিন্ন আদিবাসী (আদি থেকে বসবাস কারী) অধ্যুষিত দেশ। উপজাতি নামে পরিচিত সাঁওতাল, কোল, ভিল, মুন্ডা প্রভৃতি সম্প্রদায় নিজেদের স্বাধিকার রক্ষার জন্য ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিল। কিন্তু স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের নিজস্ব সরকার সেভাবে এই উপজাতিদের অধিকার রক্ষা করেনি। যার ফল হিসেবে আজও স্থানে স্থানে আদিবাসীরা অসন্তোষ প্রকাশ করছে। সাঁওতাল, কোল, ভিলদের মতোই ভারতের একটি সম্প্রদায় হল কুড়মি উপজাতি। এরা বর্তমানে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা , পশ্চিমবঙ্গ, আসাম , ওড়িষ্যা , ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় এমন কি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে আছে।
বিশিষ্ট নৃতত্ত্ববিদ তথা ভাষা বিজ্ঞানী ডঃ পিয়ারসনের তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় আদম সুমারিতে কুড়মি সহ বহু জাতিগোষ্ঠীকে “এনিমিস্ট এবং অরিজিনাল প্রিমিটিভ ট্রাইবস” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯১৭ সালে ২রা মে ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্র বিভাগ সিমলা নোটিফিকেশনের ৫৫০ নং ধারায় যে তেরোটি জাতিকে অনুসূচি ভুক্ত করা হয়েছিল তাতে কুড়মি জনজাতিও অন্তভুক্ত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও এই সমস্ত উপজাতিদের জন্য সরকার বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়নি।
সুদীর্ঘ বঞ্চনা এখন ক্ষোভে পরিনত। সম্প্রতি সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল পুরুলিয়ার কুড়মিদের মধ্যে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নতুন করে এন আর সি ধুয়ো তুলে দেশের মানুষকে ছিন্নমূল করার যে চক্রান্ত শুরু করছে, সেই প্রেক্ষিতে পুরুলিয়ার কুড়মিরা নিজেদের আদিবাসী তালিকা ভুক্ত করন, এন আর সি বাতিল, সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে এক বিশাল বাইক মিছিল বের করে। পুঞ্চা থেকে বরাবাজার বলরামপুর হয়ে হাজার হাজার বাইক বাহিনীর কুড়মি মিছিল গত ১১ই অক্টোবর শুক্রবার, পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়ে একটি জনসভা করে। কুড়মিদের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ মাহাতো জানান, সারা ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ টোটেনিক কুড়মি জাতি বছরের পর বছর ভাষা ধর্ম ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উচ্চ বর্ণের দ্বারা আগ্রাসনের শিকার। রবীন্দ্রনাথ মাহাতোর বক্তব্য- একটি জাতির জাতিসত্ত্বা ও স্বাভিমান হলো তার ভাষা ধর্ম ও সংস্কৃতি। ইতিহাস সাক্ষী এই জনজাতিদের নিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে।
কিন্তু বর্তমান কেন্দ্র সরকার সমস্ত কিছু জেনেও শুধু মাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থায়ী বসবাসকারী কুড়মি সহ বিভিন্ন আদিবাসীদের স্বাধীনতা হরণ করছে। তার সঙ্গে এখন আবার এন আর সি ইস্যু চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত। যা কুড়মিরা কোনো ভাবেই মেনে নেবে না! অবহেলিত কুড়মিদের এই বিশাল বাইক মিছিল নিঃসন্দেহে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ! সাম্প্রদায়িক বিজেপির মনে রাখা দরকার কুড়মি দের পথ ধরে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ আর বেশি দূরে নয়। কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় না এসেও কোনো উদ্যোগ আয়োজন ছাড়াই একটি জাতি যখন স্বাধিকার রক্ষার তাগিদে একত্রিত, তখন তা যে কোনো সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম। স্বাধীনতার ৭২ বছর পর কুড়মি আন্দোলনের সূচনা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতি নস্যাৎ করতে নিশ্চিত ভাবে একটি উল্লেখযোগ্য দৃঢ় পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।