কলমের খোঁচা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

প্রসঙ্গ:-বিশ্ব কিডনি দিবস-



চিন্তন-প্রতিবেদন-ডা:স্বপ্না চট্টরাজ- গত ১০মার্চ বৃহস্পতিবার, পালিত হলো এবছরের বিশ্ব কিডনি দিবস। কিডনি মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের ক্ষেত্রেই সুস্থ কিডনির গুরুত্ব অপরিসীম। কিডনির রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করাই এই দিবসটির মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক কিডনি ফাউন্ডেশন ফেডারেশন এবং আন্তর্জাতিক নেফ্রোলজি সোসাইটির উদ্যোগে ২০০৬সালের পর থেকে প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই দিবস পালন করা হয়।

আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীরে দুটি কিডনি আছে। তাই একটি অকেজো হলে অপরটি কাজ চালিয়ে যায়। ফলে অসুবিধা প্রথমে ধরা পরে না। কিডনি বিশেষজ্ঞ দের মতে কিডনি রোগ হলো নীরব ঘাতক রোগ। যেহেতু আগাম জানিয়ে আসে না সেহেতু কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা ও নিয়মিত পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। কিডনি রোগ প্রতিরোধ যোগ্য। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দুটি কিডনি ৬০-৭০ভাগ বিকল হওয়ার পর রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। সেজন্য রোগ ধরা পরার পর রোগী চিকিৎসার জন্য সময় কম পান। তখন রোগীকে ডায়ালিসিস করানোর দিকে যেতে হয়।

ডায়ালিসিস একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া তার সাথে ব্যয়বহুল। অনেক সময় কিডনি প্রতিস্থাপনের দিকেও রোগীকে যেতে হয়। এক্ষেত্রে সুস্থ কিডনি পাওয়া জরুরি হয়ে পরে। সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন তার পাশাপাশি সারা জীবন ওষুধের খরচ সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। ফলে রোগীর মৃত্যু হয়। ধীরে ধীরে বিকল হওয়ার কারণে কিডনির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক ভাবে গননা করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর কোনো উপসর্গ থাকে না। সাধারণত ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে কিডনি অকার্যকর হয়ে থাকে। তাই যাদের পরিবারে এই রোগগুলো আছে বা যারা নিজেরাই এই রোগ গুলোতে আক্রান্ত তাঁরা অবশ্যই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিয়া ক্রিয়েটেনিন এর লেভেল কতটা আছে এবং আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে কিডনির সমস্যা অবশ্যই জানবেন।

কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ৬নম্বর স্থানে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সংক্রান্ত রোগ। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১.৭মিলিয়ন মানুষ প্রতি বছর এই রোগে মারা যান। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সংক্রান্ত রোগ হলো বেশ কয়েক মাস/বছর ধরে কিডনির কার্যকলাপ ও কর্মক্ষমতায় লাগাতার ক্ষতি হওয়া। পরে তা কমতে কমতে কিডনি ব্যর্থতা (kidney Failure) র দিকে পৌঁছে দেয়।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এর অধীনে জাতীয় ডায়ালিসিস কর্মসূচি চালু হলেও সকল স্তরের মানুষের কাছে তা পৌঁছায় নি। সারা বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও কিডনি স্বাস্থ্য নিয়ে বৈষম্য ও অবিচার লক্ষ্য করা যায়। দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলিতে ডায়ালিসিস শুরু করার জন্য উন্নত পরিকাঠামোর অভাব আছে। অবশ্যই তার প্রতিকার করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয় থাকায় রোগী ও তাঁর পরিবারের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে প্রচুর অর্থ তাদের কাছে দাবি করে। অর্থাভাবেও অনেক রোগী মারা যান।

তাই আসুন সবাই মিলে কিডনি কে সুস্থ রাখতে সচেতন করি জনগণকে। কিডনি কে সুস্থ রাখতে স্বাস্হকর খাবার খান, দিনের বেলা যথাযথ জল পান করুন, রক্তে শর্করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ধূমপান বর্জন করুন, নিয়মিত পেন কিলার জাতীয় ওষুধ খাবেন না। তবেই এ বছরের এই দিবসের থিম”সুস্থ কিডনি সবার জন্য জ্ঞানের সেতু বন্ধনে সাফল্য ” এর সঠিক দিক নির্নয় করতে সক্ষম হব।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।