চিন্তন নিউজ:২৭শে মার্চ:–আমার এই ৪২ বছরের জীবনে কার্ফু দেখেছিলাম ১৯৯২ সালের দাঙ্গার সময়। কিন্তু “লক ডাউন” শব্দের সাথে পরিচয় এই প্রথম। এই রকম অবস্থা যে হতে পারে তা ছিল স্বপ্নাতীত! পুলিশের চাকরি করায় রোজই ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার সন্মুক্ষীন হতে হয়! করোনা আর কোভিড ১৯ এর ভয়ে সাধারণ মানুষ গৃহবন্দী। গতকাল রাতে যে কাজটা করতে হলো সত্যিই তা অভিনব।
কন্ট্রোল রুম থেকে জরুরি বার্তা এল শতাধিক পাখিদের জীবন বাঁচাতে হবে! লক ডাউনে না খেতে পেয়ে তাদের জীবন বিপন্ন। থানার ভ্যান নিয়ে পৌঁছে গেলাম আলিপুর চিড়িয়াখানায় আমি আর আমার সহকারী অরিন্দম। সেখান থেকে পশু সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুভাষ বাবু আর তার তিন জন সহকারী একটা বড় খাঁচা, ছোট খাঁচা আর একটা জাল নিয়ে আমাদের সাথে রওনা দিলেন। চললাম ৬, মট লেন। নিউ মার্কেট এলাকায়। ১৯৫৭ সালে তৈরি তিওয়ারি বাড়ির উল্টো দিকেই ৫ টা খাঁচা দেখতে পেলাম। তার ভিতর শতাধিক রঙ বেরঙের নানা জাতের পাখি। ফলকে দেখলাম এটা তৈরি করেছেন এলাকার পৌরপিতা ২০১৫ সালে। সামনে উপস্থিত নিউমার্কেট থানার বড়বাবু, সার্জেন্ট রপ্তান দা, এডিশনাল ওসি গৌরাঙ্গ আমার ব্যাচমেট এবং আরও অনেকে।
জানতে পারলাম গতকাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নগর পরিদর্শনে বেড়িয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। এলাকার লোকজন তাকে জানায় যে শতাধিক পাখি অনাহারে রয়েছে এই লক ডাউনের কারনে। উনি তৎক্ষনাৎ আদেশ দেন চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর সাহেবকে পুলিশের সহযোগিতায় পাখি গুলোকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর এই রকম উদ্যোগকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারলাম না।
ককটেল, লাভ বার্ড, বদ্রী, জাভা নানা প্রকার পাখিদের কলতানে মুখরিত। খাঁচা খুলে পাখি ধরা শুরু হোল। ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে ওরা উড়তে শুরু করল। ভয়ার্ত ভাবে ডাকতে শুরু করল। এলাকার যে ছেলেটা দেখাশোনা করত সে জানান দিল অনেক হাড়ির ভিতর ডিম আর বাচ্চা আছে। দুটি পেয়ার পাখি চুপ করে বসে ছিল। জানা গেল ওদের ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছে। সুপারিন্টেন্ডেন্ট জানাল এই ভাবে বাচ্চা বাঁচানোর কোন উপায় নেই। শতাধিক পাখি খাঁচাবন্দী করে যেই মাত্র রওনা দেবো, দেখি সেই ছেলেটার চোখের কোন চিক চিক করছে। না বলতে পারা কান্না গুলিয়ে উঠছে! শূন্য খাঁচার কাছে থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলেটা।
থানার ভ্যানের ভেতর আমরা আর সাথে শতাধিক পাখি নিয়ে রওনা দিলাম আলিপুর ভেটেরিনারি হাসপাতালে। চিড়িয়াখানার ঠিক উল্টো দিকে। সুপার সাহেব জানালেন এদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে হাসপাতালে । তার পর মূল খাঁচায় ছাড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ মত এদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে লক ডাউন ওঠার পর।
পুলিশের চাকরিতে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতাই আমাদের সঙ্গী!