দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি,চিন্তন নিউজ: ১৯ নভেম্বর :- উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী তিস্তা নদী আজ বিপন্ন। সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ভাবে তিস্তা নদীর উপর একের পর এক বাঁধ নির্মাণ, ব্যারেজ তৈরী, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরীর মধ্য দিয়ে উত্তর বঙ্গের লাইফ লাইন ” তিস্তা ” নদীকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই তিস্তাকে বাঁচানোর জন্য জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম নাগরিক সংগঠন ‘ অভিমুখ’ নানা ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিপন্ন তিস্তাকে রক্ষা করবার জন্য গণ আন্দোলন তৈরীর লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি শহর ও আলিপুরদুয়ারে নাগরিক কনভেনশন সংগঠিত করেছে এই সংগঠন। সেই সূত্র ধরে আজ জলপাই গুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলায় দাবীর স্বপক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান ও লিফলেট বিলি করা হয়। তিস্তা নদীর উপর সমস্ত নির্মাণ কাজ সত্ত্বর বন্ধ করতে হবে, নতুন করে কোনো বাঁধ তৈরী করা যাবে না, পরিবেশগত নাগরিক হিসেবে তিস্তার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে, বিধিবদ্ধ ‘ তিস্তা অববাহিকা উন্নয়ন বোর্ড ‘ তৈরী করাসহ আজ পর্যন্ত তিস্তার উপর সমস্ত নির্মাণ কাজের পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন করা ইত্যাদি দাবী পথ চলতি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে অভিমুখ এর সদস্যরা দাবীপত্রে স্বাক্ষর করান। পথচলতি মানুষ অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে এই দাবী গুলোর কথা শোনেন।
সংস্থার তরফে সুকল্যাণ ভট্টাচার্য ও প্রশান্ত নাথ চৌধুরী জানান বঙ্গীয় ভূগোল মঞ্চে র সাথে অভিমুখ এর যৌথ উদ্যোগে আগামী ২৬ শে নভেম্বর জলপাইগুড়ি স্টুডেন্ট হেলথ হোম প্রেক্ষাগৃহে জলপাই গুড়ি শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা ‘করলা’ নদী বাঁচাতে এক নাগরিক কনভেনশনের আহ্বান করেছেন তারা। তিস্তা ও করলা নদী কে নিয়ে জলপাইগুড়ির মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে, সেই আবেগের প্রতিফলন আজ স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে চোখে লক্ষ্য করা যায়। অভিমুখ এর পক্ষে প্রশান্ত নাথ চৌধুরী বলেন, ” গত ৪ঠা অক্টোবরে সিকিমে তিস্তা নদীর ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নিতে হবে। ” আগামী তে জলপাই গুড়ি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমর্থন এই সমস্ত দাবীর সমর্থনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ মন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের কাছে দাবী আকারে সংগঠিতভাবে রাখা হবে বলে অভিমুখে র অন্যতম সদস্য সুকল্যাণ ভট্টাচার্য জানান।
জলপাই গুড়ি র অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ত্ব লেখক উমেশ শর্মা, কবি গৌতম গুহ রায়, অধ্যাপক রূপন সরকার, শিল্পী ডালিয়া রায় চৌধুরী, পার্থ ব্যানার্জী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ইতিহাসের পাতায় বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় দেবী চৌধুরানী কাব্যগ্রন্থে যে তিশ্রোতা যা আজকের তিস্তা বলে পরিচিত সেই তিস্তা আজ বিপন্ন। তিস্তার আন্যতম প্রধান উপনদী করলা প্রায় মজে গেছে। এই দুই নদীকে কেন্দ্র করে আগামী তে নাগরিক সমাজের আন্দোলন নতুনভাবে দানা বাঁধতে শুরু করায় খুশি শহরের পরিবেশ প্রেমীরা।