জেলা রাজ্য

এটাই তো নীরব বিপ্লব।*


রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য: চিন্তন নিউজ:১২ই জুন:- তাঁরা ভোলেন নি । তাঁরা শপথ নিলেন আর ভুল নয়। দুঃখের দিনের বন্ধুদের চিনতে আর ভুল নয়। সঠিক পথ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে । এবার চোখের তারায় আয়না ধরতে হবে। করোনা আর আমফান। এঁরা নিল যেমন, দিলও কম নয়। আমাদের পথিক বাউল বলেছেন : ” দুঃখের বরষায় চক্ষের জল যেই নামল বক্ষের দরজায় বন্ধুর রথ সেই থামল।”

বিপ্লবের রকম গড়ন কেমন ? বর্তমান প্রজন্মের কজনই বা সেকথা দেখেছেন বা জেনেছেন। সাদা বাঙলায় বলা যায়, যারা পড়ে শুনে যতটা হজম করেছেন, সেটুকুই বা প্রয়োগ হল কোথায় ? সে খেলা খেলতে গিয়েও তো লাঠালাঠি। ‘ তুম নেহি , হাম ‘ মেটাতে গিয়ে তো সব চৌপাট। যাই হোক সে অন‍্য কথা। হ‍্যাঃ, শিবের গীত। সে না হয় আর এক দিন হবে !

মেদিনীপুরের ঘাটালে চকলছিপুর মৌজার দুটি স্কুলে খোলা হয়েছিল প্রবাসী (ঘরে ফেরা ) শ্রমিকদের​ জন‍্য কোয়ারেনটাইন সেন্টার( এর একটা সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ আছে-‘ সঙ্গরোধী কেন্দ্র’। খটমট লাগলে ‘ পৃথক আবাস ‘
বলা যায় কি না পন্ডিতেরা ভেবে দেখতে পারেন।) আবাসিক দিল্লি, মুম্বাই ফেরৎ ঘরের ছেলেরা( না না,কোনো মতেই তাঁরা ‘ পরিযায়ী ‘ বা মাইগ্রেটরি নন)। মোট ছিলেন ৭৫ জন। তাঁরা ঘরে ফেরার পথে আমাদের কী বারতা দিয়ে গেলেন? জানালেন, ভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল জানতে ১৪ দিনের জায়গায় লেগে যায় ২০ দিন। সরকার খাবার দেয়নি, জল ও দেয়নি। এগিয়ে এসেছে লাল পার্টি।

শুধু তাই নয়, তাঁরা লাগাতার আন্দোলন করেছেন এই শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন‍্য। মুম্বাইয়ে আটক অবস্থায় পাশে কেউ নেই। তাঁরা পরে যোগাযোগ করেন পার্টির রাজ‍্যসম্পাদক ডঃ সূর্য মিশ্রের সাথে। দিল্লির বা মুম্বাইয়ের সঙ্কটময় দিনগুলিতেও তো সেই পাশে ছিল স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা। দরদ নিয়ে , খাদ‍্য নিয়ে, জল নিয়ে। দলের এই মানসিকতা পরিবর্তন এনে দিল প্রবাসী শ্রমিকদের মনে , নীরবে। তারপর ঘটল সেই ম‍্যাজিক। বুধবার সব শ্রমিকরা পৃথকাবাস ত‍্যাগ করে গেলেন যার যার বাড়ির দিকে । কিন্তু ৭৫ জনের কেউই বাড়ি যান নি সে রাতে!

কোথায় গেলেন তাঁরা ? পরদিন সকাল বেলায় ছ’টি মৌজার মানুষ দেখল, এলাকার সাত কিলোমিটার পথের পাশের সব গাছে ফুটে আছে লাল নিশান। যেন বাসন্তী মেলা! তাদের স্পষ্ট ঘোষণা, আর ভুল নয়। বরং ভুলের মাশুল উশুল দেবার সময় এসেছে। মালেক শেখ, হাসানুল্লা আলি, শেখ সাত্তারদের মত এই ছয় বুথের প্রায় হাজার দু’য়েক লোক ঘরে ফিরেছেন।

আরো কী দেখল ? অবাক হয়ে দেখল, ন’ বছর
আগে পরিবর্তনের পর প্রথম পঞ্চায়েত ইলেকশনের তিন মাস আগে চকলছিপুর মৌজায় পুড়িয়ে দেয়া ভেঙ্গে দেয়া
পার্টি অফিসে লাল নিশান উড়ছে। সকলে জানল, ঘরে ফেরা প্রবাসীদের মধ‍্যে ৭৫ জন বাড়ি না গিয়ে সারারাত ধরে এই করেছে। তারা বলছে পরিবর্তনের পরিবর্তনই তো বিপ্লব।

সবাই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, রাজ‍্যের পরিবর্তন তো অনেক হল, এবার বুঝে নিতে হবে কাজের দাবি । জব কার্ড ফেরৎ নিতে হবে। আরও বলছে, পারলে পারবে ঐ লাল নিশানের দল, সিপিএম।

অনেকেই বলছে ,’কেমন চুপি চুপি সব পাল্টে গেছে, দেখলে ‘? আবার কেউ কেউ কেউ বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘ না রে ভাই, না! নীরবে কিছুই হয় নি রে। অনেক মেহনতের ফসল এই বদল। এ তো শুধু কথার বদল নয় ! এ তো চিন্তার বদল, মনের বদল। না হলে​ কি কিছু বদলায়?’


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।