কলমের খোঁচা

দেবেন রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে উঠে আসা প্রশ্ন -গৌতম রায়


চিন্তন নিউজ: ১৩ই জুলাই:– প্রকাশ্য দিবালোকে একজন বিধায়কের শরীর ঝুলছে।হলেন ই বা মৃত হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন রায় একজন দলবদলু এম এল এ।তবু খোদ আইনসভার একজন সদস্যের এমন পরিণতি দেখে সত্যি ই শিউরে উঠতে হচ্ছে।কি ভাবে মৃত্যু দেবেন রায়ের তার প্রাথমিক আভাসটুকু ও এইমুহূর্তে মানুষের কাছে আসে নি।তাঁকে হত্যা করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে? নাকি তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন– কিছুই প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝার উপায় নেই।
যে দল থেকে দেবেন বাবু গত ২০১৬ সালের বিধানসভার ভোটে জিতে বিধানসভা তে গিয়েছিলেন, তারপর সেই দলের সভ্য হিশেবে বিধায়কপদে ইস্তফা না দিয়েই তিনি দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।বলাবাহুল্য বিধানসভার ভিতরে দলত্যাগ বিরোধী আইনকে এমন ভাবে বাঁচিয়ে চলেন যে আজ পর্যন্ত তাঁর প্রতি বিধানসভার অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেন নি।’ নীতিবাদী’ দেবেন বাবুর কাছে সি পি আই( এম) এর বিধায়ক হিশেবে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় যাওয়ার প্রায় চার বছরের মাথায় , বিধায়ক পদে ইস্তফা না দিয়েই বিজেপি তে যোগ দেওয়া ঘিরে এতোটুকু বিবেক দংশন ছিল না।অপর দলের বিধায়ককে , বিধানসভার সদস্যপদে ইস্তফা দিয়ে, নোতুন দলের টিকিটে আবার ভোটে লড়ার মতো পরামর্শ ও অবশ্য ভারতের সবথেকে ‘ সৎ’ রাছনৈতিক দল বলে দাবি করা বিজেপি , দেবেন বাবুকে কখনো দিয়েছিল, এমন খবর কেউ কখনো দেখেছেন বা শুনেছেন বলে ও দাবি করতে পারেন না।
দেবেন বাবু রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেলে, তাঁকে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করা দরকার ছিল।সেইভাবেই তাঁর দুঃখজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সি পি আই ( এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন সেলিম।তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের ভিতরেই পড়ে দেবেন বাবুর নির্বাচন কেন্দ্র।দেবেন বাবুর রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছিল তাঁর বিজেপিতে যোখদানের দিনই- সেলিমের এই যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্যের সাথেই তাঁর আর ও একটি কথার দিকে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
সেটি হল; রাজ্যের প্রগলভ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্ভবত এখন খুব ব্যস্ত অমিতাভ বচ্চনের পরিবারে কোবিদ ১৯ জনিত সংক্রমণ ঘিরে।তিনি গতকাল জয়া বচ্চনের সঙ্গে তাঁর স্বামী – পুত্রের স্বাস্থ্য ঘিরে ফোনালাপ করেছেন।বিনাচিকিৎসাতে মারা যাওয়া শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জির মায়ের সঙ্গে যেমন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কথা বলার সময় পান নি, তেমনিই পাননি দেবেন বাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর ও সময়।তাই জনতার কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছে সেলিমের কন্ঠস্বর।তিনি খুব স্পষ্ট ভাষাতে , দেবেন রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।
ভাবতে অবাক লাগে কোন দেশে আমরা বাস করছি? দেবেন বাবু যে দলে এই মুহূর্তে অবস্থান করছিলেন, সেই দলের বরিষ্ঠ কোনো নেতার কাছ থেকে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর উপযুক্ত তদন্তের দাবি তো দূরের কথা, এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায় নি।যে বিধানসভার তিনি সভ্য, সেই বিধানসভার অধ্যক্ষের ও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।
এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গোয়ালপোখরের তৎকালীন ফরোয়ার্ড ব্লক বিধায়ক রমজান আলির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল বিধায়ক হস্টেলের ভিতরে।নিছক প্রণয়ঘটিত সেই খুনকে রাজনীতির রঙ দিতে আজকের মুখ্যমন্ত্রী তথা সেদিনের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়াতে ই পরের দিন বাংলা বনধ ডেকেছিলেন।
একটি প্রণয়জনিত খুনকে যে মমতা সেদিনের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখিয়ে নিজে রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে চেয়েছিলেন, সেই মমতা আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হাতেই পুলিশ দপ্তর।এই অবস্থায় এক বিরোধী বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ প্রকাশ্যে দেখা গেল।তবু মমতা নীরব।তবু মমতা নির্বাক।যে কোনো ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানো মমতার একটি স্বভাবজাত দস্তুর।তবে এটিও তাঁর স্বভাবজাত দস্তুর যে, ঘটনাক্রম কে যদি তিনি নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে তিনি আশ্চর্যরকম নীরবতা পালন করেন।
প্রশ্নটা এখানে কেবল মুখ্যমন্ত্রীর প্রগলভতা বা নীরবতা ঘিরে নয়।প্রশ্ন টা এখানেই যে, এই রাজ্যে এখন কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক , কিংবা সামাজিক- এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের বাঁচার অধিকার তো দূরের কথা, আইনসভার একজন সভ্যের ও জীবনের কি পরিণতি হতে পারে , দেবেন রায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।