বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

করোনাকালে মুর্শিদাবাদের কর্মহীন মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগ


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৭ই অক্টোবর:– কাজের আকাল গোটা দেশে, রাজ্যেও। বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে। একের পর এক সরকারি সংস্থা বিক্রি হলে চাকরির সমস্যা তো তৈরী হবেই। রাজ্যের বহু মানুষ কিছু উপার্জন করছিলেন ভিন রাজ্যে গিয়ে। করোনাকালে সে রাস্তাও প্রায় বন্ধ। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকার প্রচুর মানুষকে এই সময় অন্যের কাছে আর্থিক ঋণ নিতে দেখা গেছে। যারা সাধারণত ঋণকে ভয় পান, তারাও। টেট পাশ করে বছরের পর বছর বসে থাকতে হচ্ছে বহু মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের। করোনা একদিকে যেমন ট্রেনের লাইনে পরে থাকা গোটা কয়েক রুটির ছবি দেখায়, তেমনি দেখায় আম্বানি আর আদানিদের সম্পত্তি বেড়ে যাওয়ার গতি।

মুর্শিদাবাদের মানুষের আজ বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আর এমনিতেই মেয়েদের আর্থিক পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ। তাই বিজ্ঞান মঞ্চ, সালার প্রস্তুতি কেন্দ্র একটা ছোট পদক্ষেপ নিয়েছে গত ৬ই অক্টোবর। এলাকার মানুষের স্বার্থে। প্রশিক্ষণ শিবির। যেখানে হাতে কলমে আজ শেখানো হল ডিটারজেন্ট এবং ফিনাইল তৈরি করা। প্রশিক্ষণ দিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের টেকনোলজি ট্রান্সফার সাব কমিটির রাজ্যের কনভেনর মাননীয় আশুতোষ পাল এবং মাননীয় দীপক দত্ত। উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি মাননীয় তপন সামন্ত এবং জেলার অন্যতম সহ সম্পাদক মাননীয় ড. পঙ্কজ মন্ডল। কর্মশালায় বলা হলো স্যানিটাইজার কিভাবে তৈরি করা যাবে।

শুধু তৈরি করা দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বিজ্ঞান মঞ্চ। কিভাবে সেগুলো নিয়ে নিজস্ব ব্যবসা করা যায়, কোথা থেকে কাঁচামাল সস্তায় পাওয়া যায়.. সে সবই প্রশিক্ষণের অংশ ছিল আজ। যার জন্য কোনরকম ভেজাল না মিশিয়ে বাজারের থেকে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেও লাভ করা যায়। এখানেই বিজ্ঞান মঞ্চের স্বার্থকতা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগকে জনসাধারণের মধ্যে বিস্তার করা। সেক্ষেত্রে আজকের কর্মশালা অনেকটাই সফল। মোট ৬৭ জন অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে বেশ কয়েক এসেছিলেন লালগোলা, সাঁইথিয়া এবং নানুর থেকে।

শুরুতেই আশুতোষ পাল বলেন “করোনার প্রথম ঢেউ যখন আসে, বাজারে স্যানিটাইজার অলীক বস্তু হয়ে ওঠে। আসলে সেই সময় স্যানিটাইজার তৈরির কাঁচামাল প্রায় বেশিরভাগ টাই নিজের গোডাউনে তুলে নেন আম্বানি পরিবারের নিতা আম্বানি। আর সাধারণ মানুষের জন্যে বাজার শুন্য। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে যখন এই সমস্ত কর্পোরেট দল বেশি দামে স্যানিটাইজার বিক্রি করে জনগণকে লুট করেছে, ঠিক সেই সময় বিজ্ঞান মঞ্চ রাজ্য জুড়ে মানুষের জন্য সস্তায় স্যানিটাইজার তৈরী করে দিয়েছে।” জেলা সভাপতি তপন সামন্ত বলেন “বিজ্ঞান মঞ্চ, সালার প্রস্তুতি কেন্দ্র এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। প্রয়োজনে তারা অক্সিজেনও মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। ব্লাড ব্যাংকে রক্তের যখন আকাল, এরা রক্তদান শিবির করেছে।” সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক মহ. মূল হক।প্রশিক্ষণ শিবির শেষে তালিবপুরের বিজ্ঞান কর্মীদের নিয়ে একটি বিজ্ঞান চক্র করা হলো। উক্ত বিজ্ঞান চক্রের ১৩ জনের কমিটি এবং সভাপতি হিসেবে খোকন খান, সম্পাদক মুকুলুদ্দিন আনসারি, সহ সভাপতি শাহ মামুন, সহ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল আনসারির নাম প্রস্তাব করেন জেলার অন্যতম সহ সম্পাদক মাননীয় ড. পঙ্কজ মন্ডল। সকলের সম্মতিতে নব গঠিত এই বিজ্ঞান চক্র আগামী দিনে এলাকায় বিজ্ঞান মনস্কতা প্রসারে কাজ করবে। নবগঠিত এই বিজ্ঞান চক্রকে অভিনন্দন জানান সালার বিজ্ঞান কেন্দ্রের কনভেনর সুদিন চ্যাটার্জী এবং সহকারী কনভেনর পার্থ প্রতিম সরকার।

৬ তারিখে আয়োজিত বিজ্ঞান মঞ্চের প্রশিক্ষণ শিবির থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ কয়েকজন বানিয়ে ফেললেন ডিটারজেন্ট। পরীক্ষা করে দেখা গেল যে গুণগত মানে বিজ্ঞান মঞ্চের তৈরি ডিটারজেন্ট বাজারের অন্য ডিটারজেন্টের থেকে উন্নত। বিজ্ঞান মঞ্চের সালার প্রস্তুতি কেন্দ্রের কনভেনর সুদিন চ্যাটার্জী জানালেন “দুটো ডিটারজেন্টের গুণগত মানের তুলনা করে দেখা গেল যে বিজ্ঞান মঞ্চ মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে না।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।