রাজ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

অশুভ আঁতাতের ফলে বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে ভবিষ্যৎ


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১৮ই মে:- কোভিড১৯ মোকাবিলায় বহুল চর্চিত দুটো রাস্তার প্রথমতঃ লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং সরকারের করণীয় র‍্যাপিড টেস্ট। যত বেশী সংখ্যক মানুষের টেস্ট করা যাবে রোগী চিহ্নিত হবেন এবং সেই সঙ্গে রোগীর সংস্পর্শে থাকা মানুষজনের টেস্ট, কোয়ারেন্টাইনে থাকার বন্দোবস্ত ইত্যাদি। প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হন ১৭ ই মার্চ। কিন্তু রাজ্যের সরকার এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি অথবা চায়নি। শুরু থেকেই পরীক্ষা ব্যবস্থা চলছিল অত্যন্ত ঢিমেতালে। হাতেগোনা কয়েকটি ল্যাবরেটরি ছাড়া এখনো করোনা টেস্ট সম্ভব নয়। কো মরবিডিটির তত্ত্ব খাড়া করে মৃত্যুর সংখ্যা লুকানো, নানাবিধ কমিটি গঠন, ইচ্ছামত উপযুক্ত প্রশাসকের রদবদল, নাইসেডের সঙ্গে তর্কাতর্কি, টেস্টের জন্য উপযুক্ত কিটের অপ্রতুলতা এসব যখন চলছিল তখন কেন্দ্রীয় টীমের পর্যবেক্ষণ ও তাদের নির্দেশে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিছুটা হ’লেও টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গ্ৰীণ জোন, অরেঞ্জ জোন, রেড জোন, কনটেনমেন্ট জোনে ভাগ করা হয় রাজ্যকে। কিন্তু গ্ৰীণ জোন বাড়ানোর পরিকল্পনা হার মানে, বাড়তে থাকে রেড জোন, কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা।

রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে ২৩৮। কলকাতার পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, হাওড়া ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর আসছে। গতকালই ৬ জন কলকাতাবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গোটা দেশের মৃত্যুহারকে ছাড়িয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতায় বর্তমানে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৩৩৯. এতদিন শহরের কোথাও পজিটিভ রোগী থাকলে সেই লেনের সব বাসিন্দাদের লালারস পরীক্ষা করা হত। স্থাস্থ্যভবন পৌর আধিকারিকদের কাছে এক নির্দেশনামায় জানিয়ে দিয়েছে এখন থেকে ঐ কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরের বাসিন্দাদের লালারস পরীক্ষা করতে হবে। এতে সত্যিকারের পজিটিভ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে না, পরিকল্পিতভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর অপচেষ্টা। যেহেতু উত্তরোত্তর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সেটা যেন তেন ভাবে কমিয়ে দেখানোর নির্দেশ। অনেক সময় পূর্ব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উপযুক্ত উপসর্গের অভাব, রোগীবিশেষে ভিন্নতর উপসর্গ। এখন নয়া নির্দেশে কেবলমাত্র জ্বর, সর্দিকাশি থাকলেই টেস্ট করার সুযোগ মিলবে। এর ফলে উপসর্গহীন বহু রোগীর সংস্পর্শে এসে আরও অনেক সুস্থ মানুষ কোভিড১৯ এর কবলে পড়বে। পরিযায়ীদের ক্ষেত্রেও এই এক নীতি গ্ৰহণ করা হচ্ছে, প্রত্যেককে নয়, শুধুমাত্র উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদেরই টেস্ট বাধ্যতামূলক।

কেরালার সরকার অলিগলিতে ব্যবস্থা করেছিলেন টেস্ট করার এবং আরও বেশি সংখ্যক টেস্ট করার, বাগে আনতে পেরেছে এই ভাইরাসকে, এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রশংসা লাভ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যে সরকারের , অবিবেচক সিদ্ধান্তের বলি হতে চলেছে আপামর রাজ্যবাসী। জেলাগুলোতে নির্দেশ গেছে মরণাপন্ন রোগীর কোভিড টেস্ট না করার যাতে সেই রোগীর সম্পর্কিত মানুষজনের পরিষেবা থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া যায়। খোদ নবান্নের নির্দেশে, নবান্নদেবীকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যদপ্তর ও আমলাদের এই অশুভ আঁতাত এক বিভীষিকাময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করছে রাজ্যকে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।