রাজ্য

আগত খাদ্যসংকট ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা


কাকলি চ্যাটার্জি:২৮শে এপ্রিল:- একদিকে কোভিড১৯ এর আক্রমণে বে-আব্রু রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল রূপ। অন্যদিকে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি রেশনব্যবস্থা। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশনগ্ৰাহকের সংখ্যা আমাদের রাজ্যে ৬ কোটি ১লক্ষ ৮৮ হাজার। অন্যান্য রাজ্যে এই খাতে চাল সরবরাহ করে এফ সি আই নিজেই। কিন্তু এই যোজনা চালু হওয়ার সময় রাজ্য সরকার এক চুক্তির মাধ্যমে চাল সরবরাহ করার দায়িত্ব নিজ উদ্যোগে নিয়ে নেয়—খাদ্যদপ্তরের অধীনে গঠন করে সেন্ট্রাল পুল। চালের মূল্য বাবদ টাকা মিটিয়ে দেয় কেন্দ্র। একইরকমভাবে আর কে এস ওয়াই ওয়ান ১ এবং আর কে এস ওয়াই২ –রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পের জন্য আছে স্টেট পুল।

বর্তমানে তীব্র সঙ্কটের মুখে স্টেট পুল, চুক্তি ভঙ্গ করে সেন্ট্রাল পুলের সব চাল অতি গোপনে মজুত করেছে নিজের গোডাউনে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এই দুই প্রকার কার্ড হোল্ডারদের মে থেকে জুলাই তিনমাস ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ চাল দরকার তার যোগান কোথায়? খুব বেশি হলে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেশন চালু রাখা সম্ভব হবে।

লকডাউনের কারণে রাইস মিলগুলো বন্ধ, সেখানে পড়ে আছে ৮ লক্ষ টন চাল। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটবে না। তাই বোরো ধান মাঠ থেকে ওঠার পরেই তা কেনার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছেন খাদ্যদপ্তরের প্রধান সচিব। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ১০০ দিনের কাজে ধানকাটাকে যুক্ত করতে। কিন্তু নেই কোনো সরকারি আদেশনামা। বাস্তবে এখন আর রাজ্যের কোনো এক্তিয়ার নেই ১০০ দিনের কাজের মধ্যে বোরো ধান কাটা যুক্ত করার। কেননা ২০২০-২১ সালের রেগার কাজের মাস্টার সার্কুলার বেরিয়ে গেছে। রাজ্য এ বিষয়ে কেন্দ্রকে আবেদন জানালে যদি কেন্দ্র তা মঞ্জুর করে তবেই সম্ভব।

ভিন রাজ্যের যে মজুরেরা ধান কাটতে আসতেন তাঁরাও আসতে অপারগ আর রাজ্যেও খেতমজুর মিলছে না। মাঠেই পড়ে অকালবৃষ্টিতে নষ্ট হতে বসেছে ১২ লক্ষ হেক্টর জমির বোরো ধান। ধানকাটা মেশিন ও সিন্ডিকেটের দখলে। মেশিন ভাড়া দ্বিগুণ করে দিয়েছে শাসকদলের দুর্বৃত্তরা। মাঠে কোনো মেশিন তাদের অনুমতি ছাড়া নামানোর হিম্মত নেই কারোরই। নির্দিষ্ট রেট ধার্য্য করার ব্যাপারে নীরব জেলাপরিষদ ও ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সহ আধিকারিকরা।

এ তো গেল আর কে এস ওয়াই ১ ও ২ নিয়ে সমস্যা কিন্তু এন এফ এস এ র আওতাধীন ৬ কোটির ও বেশি গ্ৰাহক যে ৫ কেজি করে চাল পাবেন তাদের বিষয়ে খাদ্যদপ্তর নিশ্চুপ। দুটি রাস্তা এখন তাদের সামনে—-(১) ওপেন মার্কেট সেলস স্কীম ব্যবস্থায় চাল কেনা এফ সি আই এর থেকে। প্রতি মাসে ২ লক্ষ টনের বেশি চাল এই ব্যবস্থায় কেনা যায় না।
(২) এফ সি আই এর থেকে চাল চাওয়া। কিন্তু সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে পূর্বের চুক্তি। কেন্দ্র সে ব্যাপারে সম্মত নাও হতে পারে। এখন খাদ্যদপ্তরের আধিকারিকরা কোন পথে এগোতে চান সেটা দেখা আর অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।