রাজ্য

সেরা বিদূষক শরৎচন্দ্র পণ্ডিত ( দাদাঠাকুর)।


রঞ্জন মুখার্জী:চিন্তন নিউজ:২৭শে এপ্রিল:-
দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত সে যুগের এক বিরল প্রতিভা। তাঁর যৌবনের সেই যুগটিতে বাংলার আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক গুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, সুভাষচন্দ্র, চিত্তরঞ্জন দাশ, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, ফজলুল হক, অনেকেই ছিলেন এবং ভারতের আকাশ আলোকিত করে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, মতিলাল প্রমুখ।

সেই যুগের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কদের মাঝেও ক্ষুদ্র পল্লী গ্রাম থেকে এসে কলকাতার বুকে আপন আসন অধিকার করে নিতে পারেন যিনি, তিনি যে বিরল প্রতিভার অধিকারী তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না।

দাদা ঠাকুরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তার তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ- কৌতুক ভরা রচনাগুলির জন্য। দাদা ঠাকুর এবং তাঁর “জঙ্গিপুর সংবাদ” এবং “বিদূষক” পত্রিকা দুটি ছিল সমস্ত রকম সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের মূর্ত প্রতিবাদ। রঙ্গ ব্যঙ্গে ভরা “বিদূষক” পত্রিকার সংবাদ পরিবেশন তদানীন্তন বাংলার সেরা রসিক সমাজে প্রভূত দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল।
দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত কেন “বিদূষক” প্রকাশ করেন তা বিদূষকের আত্ম-পরিচয়ের মধ্যেই পাওয়া যায়। বিদূষকের প্রচ্ছদ পত্রে লেখা থাকতো, “ধামাধরা ও উদারপন্থী দলের মুখপত্র”। তার সবই ছিল রঙ্গে ভরা। বিদূষক নিজে নিজের আত্মপরিচয় দিয়েছেন এইভাবে:
” জন্ম আমার জঘন্য স্থান পল্লী গ্রামের জঙ্গলে,
লোকের মঙ্গল যেমন-তেমন নিজের পেটের মঙ্গলে,
আজ রাত্তিরে ভরে রাখি, খালি আবার কালকে তা,

পেটের জ্বালায় বিদূষক, চলে এলেন কলকাতা। যে বাজারে বহুৎ কাগজ হাজার হাজার সারি, সে বাজারে পাড়া গেয়ে থাকতে কি আর পারি? তবে যে বাজারে মুক্তা বিকায়, বিকায় তুচ্ছ সুঁচ, যে হাটেতে হীরক বিকায়,বিকায় নাকি সেথায় কুঁচ?

প্রমথনাথ বিশী বলেছিলেন, এই বঙ্গভূমে দাদা ঠাকুর ছিলেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর শেষ প্রতিনিধি। একটি ধুতি , উত্তরীয়, শীতকালে বড়জোর একটি গরম চাদর, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সর্বদা খালি পা, এই ছিল তাঁর চিরাচরিত মূর্তি। এন্ট্রান্স পাশ করার পর অর্থাভাবে এফ এ ক্লাসে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালাতে পারেননি। পরের অধীনে কাজ করবেন না এই সংকল্প নিয়ে সামান্য অর্থ সম্বল করে হাতে চালানো ছাপাখানা স্থাপন করেন জঙ্গিপুরে। এখান থেকেই বেরোয় তাঁর সম্পাদনায় “জঙ্গিপুর সংবাদ”।

পরে এই ছাপাখানা থেকেই প্রকাশিত হতে থাকে বিখ্যাত বিদুষক পত্রিকা। পত্রিকার ছাপাখানায় তিনি নিজেই ছিলেন কম্পোজিটর, মেশিন ম্যান, প্রুফ রিডার, এডিটর, সংবাদ সংগ্রাহক, লেখক সবকিছু।

সুদূর জঙ্গিপুর থেকে কাগজ ছাপিয়ে কলকাতায় আসতেন তিনি ফেরি করতে। তার প্রতিভার প্রকৃত স্ফূরণ ঘটে ওই সময়কার “বিদূষক” এর পাতায় পাতায় । বিদূষকের বৈশিষ্ট্য ছিল, সংবাদ ও সম্পাদকীয় সবই রচিত হত পদ্যে। আর তার সঙ্গে থাকত বিভিন্ন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের চিত্রসহ কবিতা, গীত, ছোট গল্প, রসরচনা , প্যারোডি প্রভৃতি।
ওই “বিদুষক” – এ প্রকাশিত হয়” বোতল পূজার পাঁচালী” যা আজও বাংলার ঘরে ঘরে সমান আদৃত।

দুর্ভাগ্যক্রমে ” বিদূষক” দুই বছর চলার পর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন দাদাঠাকুর।শুধু অর্থাভাবেই নয়,প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীর অভাবও এর কারণ ।
এই “বিদূষক” দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত এর জন্ম ১৮৮১ সালের ২৭ শে এপ্রিল, আজকের দিনে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।