বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

:–স্বাস্থ্য বন্ধু প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনায় পশ্চিম বঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:২৪শে ডিসেম্বর :– গত ২২/১২/২০১৯ রবিবার যাদবপুর কে পি সি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সুচারু পরিচালনায় সারাদিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত হলো এক অভিনব সময়োপযোগী কর্মসূচি, স্বাস্থ্যবন্ধু প্রশিক্ষণ শিবির। দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম,মুর্শিদাবাদ এবং বাঁকুড়া বাদে সব কটি জেলার আগ্রহী বিজ্ঞান কর্মীরা শিবিরে অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সভাপতি রাজ্য সম্পাদক, স্বাস্থ্য উপসমিতির আহ্বায়ক এবং ডঃ কুন্তল বিশ্বাস, ডঃ সত্যজিত চক্রবর্তী সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতৃত্বের সুচারু পরিকল্পনা ও সুদৃঢ় পরিচালনায় প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে ওঠে রীতিমত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শ্রেণীকক্ষ!

“স্বাস্থ্যবন্ধু” এক অভিনব নাম! উদ্যোক্তাদের প্রাঞ্জল বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য বন্ধু কোনো চিকিৎসক বা পেশাগত চিকিৎসা কর্মী নন। স্বাস্থ্য বন্ধু একটি বৃহত্তর ভাবনা! আমাদের আশে পাশের সর্ব শ্রেণীর মানুষের আকস্মিক স্বাস্থ্যহানি বা স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটলে হাসপাতাল বা ডাক্তারবাবুর কাছে পৌঁছানোর পূর্বের প্রাথমিক সহায়তা প্রদান ও বন্ধু হয়ে যিনি পাশে থাকবেন, যাঁর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান আছে তিনিই স্বাস্থ্যবন্ধু। এই শিবিরের মূল লক্ষ্য হলো- সামগ্রিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কর্মী গঠন।

বিজ্ঞান আন্দোলনের এক বৃহত্তম দিক জনস্বাস্থ্য। সমাজের সমস্ত মানুষ বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা মানুষদের একদিকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা এবং বিজ্ঞান আন্দোলনে সামিল করা এই শিবিরের মূল উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্যই সম্পদ- এই সম্পদ রক্ষা করতে না পারলে শ্রমশক্তি বিঘ্নিত হয় আর শ্রমশক্তি বিঘ্নিত হলে দেশের অর্থনীতি বিপন্ন হয়! এই চেতনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে! স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে সরকার ও সরকারি মদতপুষ্ট কর্পোরেট সংস্থা তথা মেডিকো ইন্ডাস্ট্রি সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের জীবন কে সমূলে বিনষ্ট করবে। তাই স্বাস্থ্যকে মালিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত করতে জনগনকে জন বিজ্ঞানের আঙিনায় আনতে হবে! প্রথমার্ধে শুধু লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা নয় বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা বিজ্ঞান আন্দোলনের ব্যক্তিত্বরা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাড় ভাঙা থেকে পশুকামড়, এমনকি ও আর এস, স্যালাইন ইঞ্জেকশন, ব্লাড প্রেশার, সি পি আর ইত্যাদি সম্যক তাত্ত্বিক আলোচনা দ্বারা কর্মী দের সমৃদ্ধ করলেন।

দ্বিতীয়ার্ধ ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ! প্রত্যেক শিক্ষানবিশ ব্যক্তিগত ভাবে সি পি আর, ইঞ্জেকশন দেওয়া, প্রেসার মাপা ইত্যাদি হাতে কলমে করে ঋদ্ধ হন! আর প্রশ্নোত্তর পর্বে জানা- কম জানা -ভুল জানা এবং -অজানার ফাঁক পূরণ করে যথার্থ জ্ঞান অর্জন! সারাদিন ধরে অতি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবা বিষয়ে ধারণাদান এই শিবিরের যে লক্ষ্য তা নিঃসন্দেহে সার্থক! শিবিরের স্থান হিসেবে কে পি সি মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়াম, প্রোজেক্টার ব্যবহার থেকে চা, টিফিন, দুপুরের খাবার এক কথায় সামগ্রিক পরিমণ্ডল ছিল প্রশংসনীয়। আগামী দিনে জেলা স্তরে এই শিবিরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বন্ধু টিম গঠন করে ফিল্ডে নেমে কর্মীরা স্বাস্থ্যহীন বা রোগগ্রস্ত মানুষের পাশে বন্ধু বেশে উপস্থিত হতে পারবেন এই আশা রাখা যায়! বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যকে বানিজ্যিক বিপনন করে তোলার অপচেষ্টার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবন্ধুর মাধ্যমে জনবিজ্ঞান চেতনা ও জনস্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।