দেশ

স্বচ্ছ ভারত– কি শুধুমাত্র স্লোগান হয়েই থাকবে!!


চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ:১লা ডিসেম্বর:– স্বচ্ছ ভারত, পরিচ্ছন্ন ভারত একি শুধুমাত্র একটা নির্বাচনী চমক ,নাকি সত‍্যিই একদিন আসবে সেই স্বপ্নের ভোর।২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বা ২০১৯ গান্ধীজী র দেড়শো বছরের পূর্ণতা প্রাপ্তির পরে একটা বিশুদ্ধ ,পরিচ্ছন্ন ,নির্মল নাগরিক জীবন উপহার পাবার কথা ছিল দেশবাসীর।কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সেকথা বলেনা।

প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত,নির্মল ভারতের স্লোগান ….ঝাঁটা হাতে ,গ্লাভস পড়ে রাস্তা ঝাঁট দেবার নাটক আমরা অনেক দেখেছি।কিন্তু বাস্তবে দেখি স্টেশন চত্বর ,বস্তি অঞ্চল অথবা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে স্তুপাকৃতি আবর্জনার গাদায় ছেঁড়া নোংরা কাপড় পড়ে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে জঞ্জাল তুলছে একদল গরীব মানুষ।তারা কি একটা মাস্ক বা একটা গ্লাভস এর দাবীদার হতে পারেনা?বিশ্বের সবদেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে ,আমাদের দেশ এতো দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছে কেন?এখনও হামেশাই শোনা যায় হাইড্রেনে নেমে পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ‍্যাসে মারা যাচ্ছে মানুষ! কিন্তু কেন..যেখানে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি তৈরী হয় সেখানে এই সব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধু পেটের তাগিদে ঐ মৃত্যু গহ্বরে নামা শ্রমিক দের কেন জোটেনা একটা অক্সিজেন মাস্ক ,কেন পায়না হাইড্রেনে নামার মতো নিরপদ একটা পোষাক!

শুধুমাত্র বড় বড় শহরে নয় ,মফঃস্বল ,ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া,স্টেশন চত্বর ,ব্রীজের তলা,ফুটপাত সব বেদখল হয়ে যাচ্ছে ,হয় বিক্রেতা বা হকার ,আবার কোথাও ঠাঁই না পাওয়া জনতায়।যত্রতত্র গড়ে উঠছে বাজার।ভুগছে সাধারণ মানুষ, যাকে বলে নাগরিক।কিন্তু এই নারকীয় পরিবেশের সুষ্ঠু ব‍্যাবস্থা তো সহজেই গড়ে তোলা যায়,চাই শুধু একটু সদিচ্ছা।সর্বত্র ভোটের হিসেব থেকে একটু বেরিয়ে এসে ,সরকারি অর্থে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে একটু নজর দিলে ,আর একটু আন্তরিক হলে।

অপচয় হয় সরকারি টাকার, দিনের বেলায় জ্বলে হ‍্যালোজেন লাইট,সরকারি আইনকে পরোয়া না করে ,ডেসিবেল এর হিসেবকে থোড়াই কেয়ার করে,ছাত্রছাত্রীদের অপরিচ্ছন্ন বাথরুম, হাসপাতালের রোগীর ভূমিশয‍্যা,যত্রতত্র চিকিৎসা বর্জ্য, রাস্তা জুড়ে বেওয়ারিশ নির্মাণ সামগ্রী, খাদ‍্যের সম্ভারে লুকোনো বিষ,ফুটপাথের চটজ‍লদি অথচ বিষাক্ত খাবার…পারেনা কি সরকার ,বা প্রশাসন একটু সজাগ হতে ,আর একটু আন্তরিক হতে!

চারিদিকে এতো গরীব মানুষের বাস,বন্ধ শিল্প,বন্ধ চা বাগান, মৃতপ্রায় চাষবাস‍ ,ঋনের ভারে জর্জরিত কৃষক শ্রমিক ।আকন্ঠ আবর্জনায় ডুবে থাকা মানুষ দুহাত তুলে বাঁচতে চাইছে, একদিকে ডেঙ্গু, বিষাক্ত গ‍্যাস,অপরিশ্রুত পানীয় জল…এরমধ‍্যে কোথাও দেখতে পাচ্ছেন কি স্বচ্ছ ভারত!নিকাশী ব‍্যাবস্থা বেহাল, বৃষ্টির জল ধরার ব‍্যাবস্থা নেই …শুধু কমিশনের জোরে বে আইনী ছাড়পত্র পাচ্ছে বহতল বিশিষ্ট বাড়ি।কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ,অবাধ সোয়ারেজ এর দূষণ গঙ্গা কে করে তুলেছে ব‍্যাবহারের অনুপযুক্ত।

কিন্তু আমরা কি পারিনা এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে সুস্থ ভাবে বাঁচতে?প্রচুর সংখ্যক গাছ বসিয়ে,পুকুর জলাশয় সংস্কার করে,জল অপচয় রোধ করে,যথাসম্ভব জৈব প্রযুক্তি ব‍্যাবহার করে,শিক্ষা স্বাস্থ্য, বাসস্থানের দিকে একটু নজর দিয়ে ,বিজ্ঞাপনের সেই নির্মল পরিবেশ তৈরী করতে।এর সঙ্গে আছে নিয়মিত শরীর চর্চা, নির্মল শিশু উদ‍্যান,বে-দখলীকৃত জমিতে সরকারি বহুতল,অনেক অক্সিজেন সৃষ্টিকারী গাছ বসিয়ে।এর জন‍্যে চাই সাংসদ তহবিলের টাকার সুষ্ঠু বন্টন, সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।শুরু প্রধানমন্ত্রীর গিমিক নয় ,সাধারণ মানুষ বাঁচতে চায় সুস্থ‍্য ভাবে,নিরাপদে।নাটকসর্বস্ব প্রধানমন্ত্রীর নাটক বর্জন করে চাই শুধু একটা আন্তরিক প্রচেষ্টা।তবেই সফল হবে গান্ধীজী স্বচ্ছ ভারত নির্মানের স্বপ্ন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।