দেশ

সার্জিকাল স্ট্রাইক


রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য:চিন্তন নিউজ:১৮ই জানুয়ারি:–খবর হয়েছে লক্ষ্ণৌ থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা ছাত্রী প্রিয়দর্শিনী উপাধ‍্যায়ের উক্তি, ‘ আন্দোলন তো শান্তিপূর্ণ ছিল ! গণতান্ত্রিক।তা রুখতে হামলা কেন ? ক‍্যাম্পাস যেন কেমন বদলে যাচ্ছে ! নিজেরাও ভয়ে ভয়ে আছি। এতদূরে পড়তে পাঠিয়ে বাড়ির লোকেরাও আতঙ্কে ভুগছে। ক‍্যাম্পাস বাঁচাতেই হবে।’ পাশ থেকে এক জুনিয়র ভাই বলে দিলেন,’ ঘাবড়াবেন না দিদি ।এটা একটা সার্জিকাল স্ট্রাইক।

ঝাড়খন্ডের তনুজ কুমার মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই বলে
দিলেন বাঙালি খবরিকে, ‘ সারারাত ঘুমাতে পারিনি। বারবার মনে হচ্ছিল এই যেন এবিভিপিরা আবার হামলা চালাতে এল। এই বুঝি গেট ভাঙলো হষ্টেলের।’ মাতৃভাষায় বললেন, ‘ লাগতা হায় হষ্টেলকা অন্দর ডর ঘুস গিয়া।’ পাশ থেকে সহপাঠিনী বললেন, ‘ ডরো মাত ভাই ! ইয়ে তো সার্জিকাল স্ট্রাইক হায়।’

ভেমুলার হায়দ্রাবাদ,শবরীমালা, পুলোয়োমা, বালাকোট, জামিয়া , জেএন ইউ, হয়ে ঢুকে পড়লো মেধার অপর কেন্দ্র বিশ্বভারতীতে।’ক‍্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি। কিন্তু সেই ভীতির বিরুদ্ধেই তো লড়াইয়ে আছি আমরা।’ বলেছেন তামিলনাড়ুর শক্তি। গলা বাড়িয়ে আওয়াজ এল,’ আমরাও আছি ‘। শক্তি হেসে বলল, ‘ ও আন্দামানের দানিশ মোস্তাফা। আর এরা বাঙলার উন্মেষা, শ্রীরাধা। আমরা সারা ভারত।’

খবরে প্রকাশ, বিশ্বভারতীতে এই জঘন‍্য আক্রমণের নেতৃত্বে
ছিল অচিন্ত‍্য বাগ্দী , সাবির আলি, সুলভ কর্মকারেরা।নিন্দুকে বলছে, ক’দিন আগেই এরা টিএমসি করত।একজন বলতে যাচ্ছিল,’ এই উপ….’, শেষ করতে পারেনি সহযোগীদের সতর্ক ইশারায়। পড়ুয়ারা আহত হন কম বেশি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও হামলা চলে বলে খবরে জানা গেছে।শোনা যাচ্ছে , তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু, ভিবিউফা- সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ তদন্ত কমিটি গঠন করাও একপ্রকার আক্রমণ। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ঘটনা দুই গোষ্ঠীর মারামারি’ বলে। অথচ, হামলা হয়েছে এক তরফা। বেপরোয়া।’

মেইন গেটের বাইরে চা- দোকানে একটি বাচ্চার হাত ধরে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন এক ভদ্রলোক, সম্ভবতঃ বেড়াতে
এসেছেন। শুনতে শুনতে তার মন্তব‍্য, – ‘ ওরেব্বাস, এ’ত প্রায় সার্জিকাল স্ট্রাইক, মশাই।’কথাটা মনে লাগল।

সত‍্যি করে দেখতে গেলে ব‍্যাপারটা মূলত সেইরকমই
বটে। গণেশের প্লাস্টিক সার্জারি, অর্জুনের পরমাণু তীর, পুষ্পক রথের আখ‍্যান, দিলীপদা’র খিস্তিখেউর, ইত‍্যাদি, এসবই তো সমাজের নরম জায়গাগুলির ওপর সজ্ঞান পরিকল্পিত আক্রমণ। উদ্দেশ্য একটাই – ‘ ভয়পাইয়ে
বাগে আনা। ‘

অন‍্য প্রসঙ্গ উঁকি দিতেই পারে মনে। অন‍্য কোথা , অন‍্য কোনোখানে। সে সময়ের সেই সিঙ্গুর, সেই নন্দীগ্রাম, সেই কেশপুর , ইত‍্যাদিও তো এইরকমই ছিল। কত ভদ্রলোকের ‘ হাড় হিম ‘ করা ঘটনা।’ এসব হল অশিক্ষিত লোকদের কুশিক্ষার ফল ‘ -এই বলে তাচ্ছিল‍্য বোধ হয় এক ধরণের অসাড়তা, মরুঝড়ের মধ‍্যে উটের বালিতে মুখ গুঁজে থাকার মত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।