দেশ

সূধা ভার্গিস-দলিতদের আদরের দিদি।


সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:১৮ই আগস্ট:–সুধা ভার্গিস ——-দলিত দের আদরের দিদি—কে এই সুধা ভার্গিস —–জন্ম দক্ষিন কেরলের কোট্টায়ামে।। গত তিন দশক ধরে মুশাহার নামে এক মহাদলিত সম্প্রদায় এর হয়ে কাজ করছেন।। নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টা তে সেই সম্প্রদায়ের মানুষ বিশেষ করে মহিলাদের জীবনে কিছু বদল আনতে সফল হয়েছেন।। সুধার এই লড়াই একেবারেই সহজ ছিল না।। একে তো ছিল ভাষার সমস্যা তার উপর আইনি প্যাঁচ।। কিন্তু সুধা দমেনি।। একে একে ভাষার বাধা এবং পড়ে পড়াশোনা ও ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে তিনি আইনি দিকটি করায়ত্ত করেন মুশাহারদের ক্ষমতায়নের লক্ষে।। ১৯৮৭ সালে সুধা তৈরী করেন তার নিজস্ব সংস্থ “” নারী –গুঞ্জন””।। যার প্রধান কাজ দলিত মহিলা দের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।তিনি ২০০৫ সালে মেয়েদের জন্য পাটনার উপকণ্ঠে “”প্রেরনা”” নামে মেয়েদের একটা আবাসিক বিদ্যালয় তৈরী করেন।। এই বিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ ছিল চাষবাসের সাথে যুক্ত মেয়েদের শিক্ষাদান।। সুধার এই কাজে খুশী হয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার “”প্রেরনার”” দ্বিতীয় শাখা খুলতে অনুরোধ করেন।। দুই শাখাতে এখন প্রায় ৩০০০ মেয়ে পড়াশুনো করে।। পাশাপাশি “” নারী গুঞ্জন “” এর প্রচেষ্টাতে গ্রামের ছেলেমেয়েরা নাচ— গান—খেলাধুলো—কলা ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই বিদেশেও নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার পরিচয় রেখেছে।। বিহারের পাঁচটি জেলায় প্রায় সাড়ে আটশো স্বনির্ভর গোষ্টির মাধ্যমে কাজ করে “”নারী গুঞ্জন””।।। সুধা শুধু মেয়েদের শিক্ষাদানেই থেমে থাকেনি—তারা যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার প্রতিও তিনি যত্নবান হয়েছেন।। বিকল্প রোজগার হিসাবে পশুপালন সঙ্গে বাড়তি শাকশব্জি ইত্যাদি বিক্রি করে যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার প্রতি খেয়াল রাখছেন।। নারী গুঞ্জন একটা সস্তা স্যানেটারী ন্যাপকিন প্রস্তুতকারক সংস্থাও চালাচ্ছে।। বিহারের দলিত মহিলাদের কাহিনী হার মানাবে রুপকথাকেও।। তাদের ছিল না কোন স্বীকৃতি না ছিল আর্থিক সচ্ছলতা।। কিন্তু সুধা আর এদের জেদ এবং নাছোড় মনোভাবই বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি।। ধিবরা গ্রামের দশজন মহিলা মিলে গড়ে তুলেছেন গানের দল——-যার নাম “””সরগম ব্যান্ড”””।। সেই ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে বিহারের বাইরেও।। বিয়ে ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানে তারা গান গাইছেন।। এই গোটা কর্মকান্ডের কাণ্ডারি সমাজকর্মী সুধা ভার্গিস।। তিনি জানান মেয়েদের আর্থিক স্বাধীনতা দিতে তার এই প্রয়াস।। তাকে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে.. স্বামী —-পরিজন…. প্রতিবেশীরা বিদ্রুপ করেছে।।। এমন ভাব দেখিয়েছে যেন তিনি কোন ভয়ানক কাজে জড়াচ্ছেন ওই মহিলাদের।। পরে পরিস্থিতি বদলেছে।। গানের অনুষ্ঠানে প্রথমে পেতেন আড়াশোটাকা প্রত্যেক সদস্য কিন্তু এখন সেই পারিশ্রমিক বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার টাকা।। সুধা তার অদম্য মনের জোরে —–নানা প্রতিকুলতার মধ্যে মানুষের জীবনে এনেছেন ইতিবাচক পরিবর্তন।। সুধা তার জীবন কে উৎসর্গ করেছেন আপসহীন ভাবে।।পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলো যেখানে বেশীরভাগ দেখা যায় রাজনৈতিক খেলার বোড়ে হতে——সেখানে কাউকে সত্যি সত্যি উন্নয়নে সচেষ্ট হতে দেখলে কুর্নিশ না করে পারা যায় না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।