দেশ

ঔষধের উত্তরোত্তর মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে ইলেক্টোরাল বন্ড।


দেবু রায়, নিজস্ব প্রতিবেদন::চিন্তন নিউজ: ২৫/০৩/২০২৪:– বর্তমান সময়ে নির্বাচনী বন্ড এর মাধ্যমে কেন্দ্রের মোদী সরকার সর্বসাকুল্যে ছয় হাজার কোটির বেশি টাকা তুলেছেন দেশের নামী- অনামী কোম্পানি গুলো থেকে।স্বাস্থ্যক্ষেত্র থেকে ২৯টি কোম্পানির থেকে মোট ৪৬৮.৪৫ কোটি পেয়েছে বিজেপি। এই জন্যেই তাঁরা পুরানো নীতি, আইনকে পাল্টে এনেছেন নয়া কর্পোরেট বান্ধব নীতি। যার ফলে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে সমস্তক্ষেত্রে।

বিশেষ ভাবে বলা যায় ঔষধ এর দাম বৃদ্ধি ঘটেছে অস্বাভাবিক হারে। যার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের হিসাব বহির্ভুত খরচ (out of pocket expences )বড়ো অংশই ব্যয় হচ্ছে চিকিৎসা এবং ঔষধের জন্য। যেমন ধরুন একটা কফ্ সিরাপ যেটা ২০২১সালে ছিলো চল্লিশ টাকা আজ সেটা আপনাকে কিনতে হচ্ছে একশোচল্লিশ টাকায়। কারণ বন্ড এর নামে কোটি -কোটি টাকা তোলা হয়েছে। আর এর ফলে জীবন দায়ী ঔষধ সহ সমস্ত ধরণের ঔষধের লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। যেটা আমার, আপনার পকেট থেকে নেওয়া হচ্ছে।
এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ গুলো জানতে হলে আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে।
খুবই সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা যাক।
কারণ অনেক গুলোই আছে তারমধ্যে প্রধান একটি কারণ হলো ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের শিথীলতা –
১৯৫৫সালে ঔষধকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং ১৯৭০সালে প্রথম বার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অনুযায়ী ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ (drug price control বা সংক্ষেপে DPCO )লাগু করা হয়। এবং এটা
করা হয়েছিলো যাতে সমস্ত ধরণের ঔষধ সাধারণ আম জনতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এটা ছিলো একটা উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ, সেই আইন অনুযায়ী আমাদের দেশের ঔষধকে (১)formulation ঔষধ (২)bulk ড্রাগ দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
এই আইন দ্বারা জীবনদায়ী এবং সাধারণ ঔষধ এর ওপরে মালিকের মর্জিমাফিক লাগাম ছাড়া মুনাফা অর্জনের চেষ্টায় কিছুটা লাগাম দেওয়া সম্ভব হয়।ফলে ঔষধ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আসে।
২০১৫সালে বিভিন্ন সংস্থার করা সমীক্ষায় দেখা যায় যে ১৯৭৯সালে যেখানে মোট ৩৪৭রকমের ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় ছিলো ।১৯৯০এর পর থেকে তার সংখ্যাটা কমতে কমতে ২০০২সালে মাত্র ৩৫ রকমের ঔষধকে মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়। এটা নিয়ে আবার মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে জন্যস্বার্থ মামলা করা হয়।সেখানে মহামান্য সুপ্রীম কোট তার নির্দেশে বলেন সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং জীবনদায়ী ঔষধ কে মূল্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে।এর পরে ২০১১সালে(National list of essential medicine ) বা সংক্ষেপে NlEM এর তালিকা প্রস্তুত করেন যেটা লাগু হয় ২০১৩সালে। যদিও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এটা করতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছিলো কোর্টের চাপে। কিন্তু তাঁরা পূর্বতন আইনকে কিছুটা পরিবর্তন করে। মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিধির কিছুটা পাল্টে মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়। ঔষধকে সামগ্রিক তালিকা ভুক্ত করার বদলে মৌলিক পরিবর্তন করে ।যেমন ধরুন peracetamol 500 Mg এর ট্যাবলেট কে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনে কিন্তু peracetamol 650 Mg বা 1000 Mg এই গুলো তালিকার বাইরে রাখেন, যার ফলে কোম্পানি গুলো 500 Mg এর উৎপাদন কমিয়ে বদলে paracitamol 650Mg বা 1000Mg এর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে সেটাই মার্কেটিং করতে শুরু করলো কারণ 500Mgএর উপরে নিয়ন্ত্রণ আছে কিন্তু 650বা 1000mg এর ওপরে নেই। সুতরং দাম নির্ধারণ পুরোটা চলো গেলো মালিকের হাতে, এই রকম অনেক জীবন দায়ী ঔষধ আছে, বা সাধারণ নিত্য ব্যবহার্য ঔষধ আছে যেগুলো নিয়ন্ত্রনের আইনের বাহিরে থাকলো। ইতিমধ্যে দেশের ক্ষমতা এসেছে কর্পোরেটদের কাছের মানুষ । ফলেঔষধের কোম্পানি গুলো তাঁদের ইচ্ছে মতো দাম নির্ধারণ করতে শুরু করলো। করোনা কালে নির্বাচনী বন্ড বা (ইলেক্টোরাল বন্ড )এর নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুললো নিজেদের ঘরে। আর কোম্পানি গুলো সেই সুযোগে ঔষধের দাম 50%থেকে আরও বেশি দামে ঔষধ বাজারে বিক্রী করতে শুরু করলো। নিচে বহুল ব্যবহৃত দু -একটি ঔষধের দাম, কোম্পানি, এবং তাঁদের ব্র্যান্ড এর নাম দিচ্ছি।
1)ঔষধের নাম ASCORIL কোম্পানি Glenmark
দাম ছিলো 2020সালে 100ML 45টাকা আজ সেটার দাম 141টাকা হিসাব করুন কত ratio তে বাড়লো।আর ঐ কোম্পানি বন্ড কিনেছে।
2)ঔষধের ব্র্যান্ড নাম :-RAZO -D (rabiprazole 20mg +domperidon 30mg ) কোম্পানি DR Reddis Lab
দাম ছিলো 2020সালে 187টাকা একটা স্ট্রিপ আজ দাম 361টাকা DR reddis এর দান (বন্ড )100কোটি টাকা।এই রকম আরও অসংখ্য ঔষধ আছে যেগুলো বয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন খেতে হয় সবগুলোই 20সালের দামের তুলনায় কোথাও ৫০%কোথাও ৭০%বেড়েছে। শোনা যাচ্ছে এপ্রিল ২৪থেকে আবার প্রতিটি ঔষধের দাম প্রায় 10থেকে 15%বাড়ছে।

এবার আসা যাক করোনার কালে টিকা’র কথায় আমি দুটি টিকার নাম এবং কোম্পানির নাম বলবো,যেগুলো কেন্দ্রীয় সরকার বিনা পয়সায় দিচ্ছে বলে ক্রমাগত প্রচার করা হয়েছিলো। তার আসল সত্যি টা হলো — জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ভ্যাকসিন ক্রয় করেছিল সরকার । কারণ–
1)COVACINE কোম্পানি ভারত biotech বন্ড কিনে ছিলো দশ কোটি টাকার।
2)COVISHILD company SERUM INSTiTUTE OF INDIA 52 কোটি টাকার ইলেকটোরাল বন্ড ক্রয় করে। এরপর বলা যায় — আম -আদমির পকেট ফাঁকা
বিজেপির পকেটে টাকা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।