রঘুনাথ ভট্টাচার্য :চিন্তন নিউজ: ২৯শে মার্চ:- এখনও পর্যন্ত, মোটামুটি একটা ধারণা বিশেষজ্ঞদের মহলে তৈরী হয়েছে যে, হর্সশু (Rhinolopldae) প্রজাতির বাদূড় এবং প্যাঙ্গোলিন (এক জাতীয় বন্য প্রাণী-) এই মারণ ভাইরাস কোভিড – ১৯ এর উৎস। কিন্তু কী ভাবে তাদের থেকে অন্য প্রাণীর দেহে বাসা বেঁধে তার মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রামিত হচ্ছে, সেটা এখনও রহস্য।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহ গবেষক, অধ্যাপক এডোয়ার্ডহোমস্ ,ব্যাখ্যা করেছেন যে,”এর অর্থ হলো , বন্যপ্রাণীর দেহে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষের দেহে ঢোকার পর সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।” তিনি আরও বলেন যে,” বাদূড়ের সঙ্গে ঐ প্যাঙ্গোলিনও এই বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু অন্য বন্য প্রাণীর যোগসাজশকেও তিনি নাকচ করেন নি এখনও।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ ল্যাম- এর মতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা অংশ এই মলয়ান প্যাঙ্গোলিনের প্রাকৃতিক আবাসস্থল। এই স্থান থেকেই এই প্রাণীটি পাচার হয়ে চীনে ঢোকার আগে চোরাচালানের রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন হাত ঘুরে আসাটাই স্বাভাবিক। চীনে এই প্রাণীটির চাহিদা বহুল। মূলতঃ দুটি কারণে এর চাহিদা। এক, এর মাংস খাদ্য হিসেবে অতি জনপ্রিয়।রোজের চাহিদা ছাড়াও বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে এই মাংস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন এক সামাজিক প্রথা। দুই, এই প্রাণীটির সারা দেহে ছাওয়া যে আশ তা থেকে চৈনিক ঐতিহ্যবাহী নানা সামাজিক ওষুধ-বিষুধ তৈরি করে ব্যবহার করেন তাঁরা। কাজেই সারা চীনেই প্যাঙ্গোলিনের মাংস ও আঁশের ব্যাপক চাহিদা।
এই প্যাঙ্গোলিনেই এই কোভিড-১৯ ভাইরাস পাওয়া গেছে। অবশ্য, ডঃ ল্যাম খুবই সঙ্গত প্রশ্ন তোলেন যে, এই প্যাঙ্গোলিনে ঐ ভাইরাসের সংক্রমণের উৎস কোথায়?সেটা কি চোরাই চালানের কালে আশেপাশে থাকা ঐরকম বাদূড় থেকে এসেছিল ? না কি , দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে স্থানে এদের আবাসস্থল , সেখান থেকেই তারা এই ভাইরাস বয়ে নিয়ে এসেছিল।
লন্ডনের জুলজিকাল সোসাইটির গবেষক অধ্যাপক এন্ড্রু ক্যানিংহ্যাম বলেছেন, কোভিড-১৯ এর উৎস এখনো অজানা। এবিষয়ে গবেষণা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্তরে পৌঁছতে পারে নি।ডঃ ল্যাম তাঁর মন্তব্যে যোগ করেন যে, মলয় দেশীয় প্যাঙ্গোলিনের দেহে দুই ধরণের ভাইরাস পাওয়া গেছে যা বর্তমান মহামারীর জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই রকম মহামারীর থেকে রেহাই পেতে হলে অবিলম্বে এই রকম বন্যপ্রাণী, দৃশ্যত মলয়ান প্যাঙ্গোলিন-এর কেনা বেচা সার্বিক ভাবে বন্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
‘প্রতিষেধক আবিস্কার হয়ে গেছে ‘ এরকম নানা
দাবি উঠছে নানা দেশ থেকে।কিন্তু, তার মধ্যে কোনটিই এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি পায় নি। কারো কারো মতে, পর্যাপ্ত গবেষণা করে এই মারণব্যাধির ‘ ভ্যাক্সিন ‘আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাধির ব্যাপক বিস্তারের সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কারো কারো মতে(টিভি শো) এই ব্যাধির আক্রমণের পর পর তিনটি ঢেউ আসবে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে ভারতে আমরা আছি জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।এর মধ্যে ব্যাধির প্রভাবের ওঠা পড়া চলবে। এর পর আরও দুটি ঢেউএর মোকাবেলা করে হয়তো সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ এই আক্রমণের ব্যাপ্তির রেখাচিত্রকে আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তত দিন সামাজিক দূরত্ব(সোশ্যাল ডিস্টান্সিঙ) বজায় রাখাই একমাত্র প্রতিষেধক।আজকের ডাক ‘ ঘরে থাকুন। নিরাপদে থাকুন।’