নিউজ ডেস্ক:চিন্তন নিউজ:২৯শে মার্চ:–পূূর্ব বর্ধমান জেলার প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা, রাজ্য ও দেশের সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কমরেড অশোক ব্যানার্জি আজ ২৯ মার্চ ২০২০ সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে বর্ধমান শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন৷ অনেকদিন ধরেই তিনি সিওপিডি, সুগার, পারকিনসন রোগে অসুস্থ ছিলেন৷ এতদ্সত্ত্বেও সমবায় ক্ষেত্রে, পার্টির নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ কিংবা ‘নতুন চিঠি’ পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকার কারণে
সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয়৷ বর্তমান সময়ে তিনি জেলার ‘নতুন চিঠি’ প্রকাশনার সাথে একজন সাংবাদিক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন৷ তাঁর স্ত্রী শ্রদ্ধেয়া গৌরী ব্যানার্জি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশেই ছিলেন। শ্রদ্ধেয়া গৌরী ব্যানার্জি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির অন্যতম নেতৃত্ব ও পার্টি পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য৷
১৯৩৮ সালে ৬ মার্চ প্রয়াত অশোক ব্যানার্জি কালনাতে জন্মগ্রহণ করেন৷ পরবর্তীতে মেমারির শ্রীধরপুরে তাঁর পিতা চলে আসার পর সেখানেই এবং ভাতাড়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন৷ এরপর হেতমপুর কলেজে ভর্তি হন ও পরে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক হন৷ স্নাতক হবার পর তিনি বর্ধমানের রায়ানে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন৷ এই অঞ্চলে তিনি সাধারণ মানুষের প্রিয় মাস্টারমশাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন৷ শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি ঐ অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনে বিশেষত ১৯৬০-৭০-এর দশকে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার ঐতিহাসিক জমির আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন৷ ১৯৬৭ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৬৭ সালেই তৎকালীন জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা সুবোধ চৌধুরির সংস্পর্শে আসেন, সিপিআইএম পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন৷ ১৯৭১ সালে রায়ানে জমির আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তৎকালীন কংগ্রেসী গুণ্ডাবাহিনী তাঁকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে, মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি৷ এই অবস্থাতেই তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, ১৯৭৩ সালে ডিসেম্বরে মুক্তি পান৷ তিনি ১৯৮১ সালে পার্টির জেলা কমিটির সদস্য হন এবং ২০১১ সালে দুর্গাপুর সম্মেলন পর্যন্ত এই দায়িত্বে আসীন থকেন৷ তিনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রাদেশিক ও জেলা কৃষকসভার সদস্য ছিলেন৷
প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন সমবায় ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক আপোসহীন যোদ্ধা, সমবায় আন্দোলনের রত্ন৷ শ্রীর্ধপুর প্রাইমারি কোপারেটিভ সোসাইটি থেকে কাজ শুরু করেন৷ ১৯৮৫ সালে বর্ধমান সেন্ট্রাল কোপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত একাধিকবার রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, ডাইরেক্টর ছিলেন৷ এছাড়াও তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কার্যত সমবায় আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য ভারত সরকার, আরবিআই, নাবার্ড-এর থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছিলেন৷ শেষের দিকে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তাঁর কাজের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল৷
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি তাঁর প্রয়াণে গভীরভাবে মর্মাহত, শোকাহত৷ এই বিশিষ্ট সমবায়ী, ক্লান্তিহীন যোদ্ধাকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জ্ঞাপন করেন তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ, শুভানুধ্যায়ী ।