রাজ্য

বিশ্বকবির জন্মদিনে বাজলো মুখ্যমন্ত্রীর গান


সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:৯ইমে:- গতকাল ছিলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মদিন।। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গে , ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের আবেগ এর জায়গা।। মানুষ তার নিজের সুখ , দুঃখ , একাকিত্ব, প্রেম সব বিষয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে জীবনের পাথেয় করে চলে।।

এবার ২৫ শে বৈশাখ উদযাপন হয়েছে এক অদ্ভুত অবস্থাতে।। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে এবং দীর্ঘ লকডাউনের ফলে মানুষ জমায়েত করে এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করতে পারে নি।। এমনকি জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ীতেও রবীন্দ্র প্রেমীরা ভীড় না করে প্রধানত স্যোশাল মিডিয়া কে সঙ্গী করে দিনটি উদযাপন করেছেন।। শুধু মাত্র বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রথাগত ভাবে।। গতকাল সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ২৫ শে বৈশাখ উদযাপন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান , কবিতা,নাটক সাহিত্য ইত্যাদি বহুবিধ সৃষ্টির চর্চা করে।। যখন সবাই ঘরে বসেই স্যোশাল মিডিয়া কে সঙ্গী করে দিনটি উদযাপন করেছেন ঠিক তখনই তালভঙ্গ হয়েছে নবান্ন এর একটি নির্দেশিকা জারি করাকে কেন্দ্র করে।। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই নবান্ন থেকে এক নির্দেশিকা জারি করা হয় যে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় অবস্থিত বড় বড় আবাসন , রাস্তার মোড়ে মোড়ে , সব প্রশাসনিক ভবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রচিত গান ও বাজাতে হবে।। মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েন এই নির্দেশিকাতে।। নিজের এমন নির্লজ্জ প্রচার করা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে কোন দিন ঘটেনি।। ২০১১ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে এই ধরনের নির্দেশ বার বার মানুষ সামনে এসেছে।। নবান্ন এর নির্দেশে অনেক জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর রচিত গান শুনতে হয়েছে বাধ্য হয়ে।। বিধাননগর কমিশনারেটের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী রচিত গান মহাসমারোহে বাজানো হয়েছে আর পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে এই নির্দেশ পালন করছে।। এই লকডাউন পরিস্থিতি তে পুলিশ নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন নি করে গান গাইতে দেখা যায়।।বহু জেলার বিভিন্ন স্থানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রচিত গান বাজানো হয়েছে।। কারণ এটাই নির্দেশ জারি করেছিল আইনশৃঙ্খলা বিভাগের প্রধান জ্ঞানবন্ত সিং । অবশ্যই এটা প্রথম নয় এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত কবিতার দ্বারা রাস্তা সাজানো হয়েছে পুরোপুরি সরকারি খরচে।। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মুখ্যমন্ত্রী রচিত কবিতার বই পড়তে দেওয়া হয়েছে।। কিন্তু এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান বাজানোটা রাজ্যের গনতান্ত্রিক পরিবেশের উপরে আক্রমণ বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও।।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ পবিত্র সরকার এই ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে জানিয়েছেন যে তিনি কোন দিন মুখ্যমন্ত্রী রচিত গান বা কবিতা শোনেননি আর পড়েন নি।। তিনি বলেন যে তিনি জানেন না মুখ্যমন্ত্রী কেমন লেখেন??? তবে নিশ্চিত করে জানান যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন এ তাঁর রচিত গান বাজানো টাই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সবচাইতে ভালো উপায়।।

সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান বাজানোর অর্থ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করা।। বাঙালি সংস্কৃতির অপমান করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি।। সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য মমতা ব্যানার্জি নিজেই লেখক এবং গায়ক সাথে কবিও।। এভাবে প্রচার তৃনমুলের রাজত্বে সম্ভব।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।