কলমের খোঁচা

‘বিরিয়ানির মৌতাত’ – -গৌতম রায়


চিন্তন নিউজ: ২৪শে এপ্রিল:-রঞ্জন নিজেই ঠিক ভালো করে বুঝে উঠতে পারে না , এই যে আমজনতার কাছে সে ‘ রঞ্জাদা’ নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে, এই পিতৃদত্ত নামের অপভ্রংশটা ইতিবাচক, নাকি তাকে হ্যাটা করার ভাবনা থেকে তৈরি।শক্তি গাঙ্গুলি যখন মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিল, হঠাৎই তাঁর নেক নজরে পড়ে যায় রঞ্জন।
এই নেকনজরে পড়ার রহস্য টা সামান্য দু একজন জানলেও পাবলিক জানে সেযুগের চেয়ারম্যানের এক নম্বর লোক রঞ্জন ভট্টাচার্য, এ যুগের চেয়ারম্যানের ও সেই একই রকম এক নম্বর লোক।আসলে সময় বদলায়।হাওয়া উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়।আবার সেই দখিনা বাতাসই কখন পশ্চিমা ঝঞ্ঝা হয়ে যায়- এসব মানুষ সাদা চোখে দেখে।মালুম ও করে।খবরের কাগজে এসব নিয়ে দু’পাঁচ দিন একটু হই হুল্লোর হয়।টি ভি চ্যানেল গুলোতে সান্ধ্য মজলিশ বসে।চায়ের ঠেকে এসব হাওয়ার খবরের জেরে দু পেয়ালা চা বেশি বিকোয়।কিন্তু শেষমেষ রঞ্জনরা সময়ের তকদিরে জীবনের কিসসা গাইতে গাইতে যুগসন্ধির কারিগর হয়ে ওঠে।
রঞ্জনদের এই যুগসন্ধির কারিগর হওয়ার খবর টা সোঁতাধরা মফসসল ছুটিপুরে যেমন অলিগলির বাঁকে, গোরুর গোবর আর কুকুরের পুরীষের মাঝখান দিয়ে আলগোচে, প্রায় হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে শুচি বামনির টপকানোর মতো সময়কে টপকে গেলেও প্রহর জোড়া ত্রিতালের তা ধিনা তিন না কে থামাতে জানে না, শক্তি গাঙ্গুলির জায়গায় জানকীনাথ পান্ডের আলবোলার ধোঁওয়া ওঠা আলো আঁধারির মাঝে বুচকুন, সীতারাই, হানিফ, রওশনদের জলের বুদবুদ আঁকার ছবি ও তেমনিই সাদা ক্যানভাস ভরিয়ে দেয়।
শক্তি গাঙ্গুলির একটা বড়ো স্ট্যাচু আছে মিউনিসিপ্যালিটির সামনে।জান্ কী পাঁড়ে এখন শক্তি গাঙ্গুলির জন্মদিন আর মৃত্যুদিনে নিয়ম করে তার থপথপে শরীরটাকে অ্যালুমিনিয়ামের মইতে টুকটুক করে চড়িয়ে মালা চড়ায়।শক্তি গাঙ্গুলির আমলে ছবিতে মালা দেওয়া হতো।আর এখন জান্ কী পাঁড়ের আমলে মূর্তি তে মালা চড়ানো হয়।
শক্তি গাঙ্গুলির আমলে মিউনিসিপ্যালিটির বড়োবাবু নোতুন শেখা ইংরেজি ঝালাই করতে মাল্যদানের ইংরেজি গারল্যান্ডিংকে ,গার্ডেনিং বলে ফেললেও জান্ কী বাবুর আমলের সি ই ও ‘ রাষ্ট্ ভাষা’ র অবাধ্য হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।
রঞ্জন তাই ছুটিপুরের কাপড় শুকুত্ দেওয়ার লব্জ গুলো কে বেশ তড়িৎ গতিতেই ছাপড়াইয়া বেরাদরিতে ট্রান্সফর্ম করে নিতে পেরেছে।হানিফের ছেলে সুবহান দেওবন্দ থেকে লম্বা দাড়িওয়ালা মৌলবী হয়ে ফেরার পর বাঙালপাড়ার বাংলা মসজিদে তাকে ইমামের পদে বসিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে চটকলের বিহারি মুসলমানদের ভিতর থেকে অনেক ছেলেপুলেকে নিজের ব্যবসার কাজে লাগাতে পেরেছে।
সুবাহান মুসুল্লিদের দোয়া দরুদের সাথে সাথে বুঝিয়েছে রঞ্জাদাদাবাবুর দিলদরিয়া ইমানদারির কথা।মুসুল্লিদের ভুখা পেট সুবাহান মৌলবীর চোখে আঁসুয়া বাঁধ মানতে দেয় না।বেতমিজ বেশরমের মতো মুসলমানের ঘরের আওরতরা বাবুদের বাড়ি হিন্দু সেজে , নাম ভাঁড়িয়ে চিমকি বিবি ভারতী দেবী হয়ে জুটা বর্তন মলবে– এটা দেওবন্দের এতোবড়ো একজন হুজুরের পক্ষে বরদাস্ত করা কি সম্ভব?
তাই সুবাহান মৌলবীর সুপারিশে ওইসব বিবিসাহেবার মরদগুলো রঞ্জাদার কাছে সহজেই নোকরি পেয়ে যায়।মুসুল্লিদের বাড়ি ভাতের খুশবু তে ম ম করে।আর হাতিম তায়ের কিসসা তে আশুবাবুর লাইনের মিঞা দহলিজ থেকে তপতি মুখার্জী বা মীরা পালের নার্সিংহোমে যাওয়ার গলি থেকে রাজপথ গাড্ডা এড়িয়ে রঞ্জার ওমনি ভ্যানটা ঠিক পৌঁছে দেয় পেশেন্টদের।
শক্তি গাঙ্গুলীর মেয়ে খিদে, কলেরা রোগের মতো থাকলেও জান্ কী পাঁড়ের এ রোগ নেই।জান্ কী পাঁড়ে এমনিতে নিরামিষাসী।তবে ওঁর সঙ্গে ট্যুর করা লোকজন এই খাদ্যাখাদ্যের বিষয়টি নিয়ে কখনো মুখ খোলে না।রঞ্জনের পাড়ার বুলটি শক্তি গাঙ্গুলীকে ভালো মন্দ খাইয়ে শুধু নিজের চাকরি নয়, ছেলের সরকারী চাকরিটা ও পাকা করে নিয়েছে।তা বলে বুলটি কিন্তু জান্ কী বাবুর কাছে খাপ খুলতে পারে না।চেয়ারম্যান হওয়ার অল্প কদিন পর ই ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্রবাবুকে একঘর লোকের সামনেই সরাসরি জান্ কী বাবু বলে দিয়েছিলেন;
ও সব আপনাদের শোক্ তি বাবুর টাইমের য্ত্তো ছেনাল লেডিসলোক এইখানে খাওয়া দাওয়া করছিলেন, উনাদের বলিয়ে দিবেন, ডাইরিয়া হোয়ে গেলেও মুসবালটি থিকে এক্ টাও অ্যামিক্যাসিন মিল্ বে না।
শক্তি গাঙ্গুলির খাস লোক রবীন্দ্রবাবুর বিষয়টা বুঝতে অসুবিধা হয় নি।এরপর থেকে একটা ফাইল নিয়েও বুলটি বা বুলটিদের চেয়ারম্যানের ঘরের দিকে যেতে কখনোই দেখা যায় নি।বুলটি ভিড় করে ক্যান্টিনে।বুলটিকে ঘিরে পৌরসভার একটু পায়া ভারী মহিলা কর্মীরা ও জড়ো হয় সেখানে।টিফিন কৌটো খুলে পরস্পর খাবার বিনিময় হয়।বুলটির ছিম ঝাল আর মিউটেশনের লতিকা সেনের মোচা ঘন্টের স্বাদ অবশ্য লজবন্তী পাবার আশা ও করে না।
দূর থেকে চেয়ারম্যানের ঘরে দেওয়ার জন্যে চায়ের ট্রে সাজাতে সাজাতে বুলটিদের টেবিলের দিকে আড় চোখে তাকায় লজবন্তী।শক্তি গাঙ্গুলীর নেকনজরে পড়ার দরুন সে সুইপার থেকে সরাসরি ক্যান্টিনে ঠাঁই পেয়েছে।তবে লজবন্তীর ও সেদিন এখন নেই।খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার রকম সকমের অদল বদলে বুলটির যেমন ছিম ঝালে টমেটো , সর্ষের ফোড়ন দিতে ভুল হয়ে যায়, লজবন্তীর ও তেমনি ই হাতের থেকে কাপ মাটিতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
নদীর ধারের মন্দিরে বিশু বা বুড়োকে পুরুত হিসেবে স্থায়ী হবে তা নিয়ে শক্তি গাঙ্গুলীর আমলে যেমন মাথা ঘামাত তাঁর পাট্টির লোকাল লিডার তথা মিউনিসিপ্যালিটির আলপিন টু এলিফান্টের সাপ্লায়ার রঞ্জন, এখন জান্ কী বাবুর আমলেও মন্দির কমিটিতে চেয়ারম্যানের হয়ে দেখাশুনা করতে থাকা রঞ্জনের প্রতাপটা ঠিক সেই রকম ই আছে।
তবে রঞ্জন গত প্রায় আট দশ বছর হলো হালের শাসকদলের ছুটিপুরের বেশ একটা কেউকেটা হয়ে উঠেছে।শক্তি গাঙ্গুলীর আমলে মিউনিসপ্যালিটির অর্ডার সাপ্লাইয়ে রঞ্জনের যে মৌরসী পাট্টা ছিল , এখনকার চেয়ারম্যান আবার দিয়ে থুয়ে খেতে অভ্যস্থ।সবাইকে দিলে তাঁর পেটে খাদ্যবস্তু গুলো হজমের ওসুধ ছাড়াই সহজে হজম হয়ে যায়।
তাই নদীর ধারের মন্দির, সেখানকার বিশুপুরুত আর বুড়োর ভিতর পালা নিয়ে চাপান উতোর কিংবা বাঙালপাড়ার বাংলা মসজিদের সুবাহান মৌলবীর হাত যশের উপর রঞ্জনের খাদ্য খাদক ক্ষুধার ভূগোলের পারদ ওঠা নামা করে।
চেয়ারম্যান সাব বলে দিয়েছেন , মকান এত্তো কিসের দোরকার? ফেলাট করুন না, মুসবালটি সহ্ যোগ দিবে পুরো কিসিম।
বাংলা মসজিদের ঠিক পিছনেই করবস্থান মাঠ।মদন মাস্টার এই মাঠটাকে শতদলের মাঠ বলে চালাতে চাইলেও নাম মাহাত্ম্যের এমন ই জোর , একবার লেগে পিড়িতির কাঁঠালের আঠা হয়ে যায়।তাই মদন মাস্টারের নামবদলের চেষ্টার মুখে ছাই দিয়ে কবরস্থান মাঠ , তার পুরনো নামেই থেকে গেছে।
ছুটিপুরে এতো মুসলমান ছিল?- রঞ্জন মাঝে মাঝে ভাবে।তার এই ভাবনাটা একটা সময় একটা নিশ্চিন্তির যতি চিহ্নে এসে স্থির হয়ে যায় তখন ই , যখন সে ভাবনার উপসংহার টানে এই ভাবে, ভাগ্যিস দেশ টা ভাগ হয়েছিল।তাই মুসলমানগুলো আমাদের দেশ থেকে পাকিস্তানে চলে গেলো।
সেই কবরস্থান মাঠ,গোটা মফসসলি টাউন ছুটিপুরের হাতে গোনা খেলার মাঠগুলোর ভিতর একটা।এই মাঠে’ ফেলাট ‘ করতে চান চেয়ারম্যান সাহেব- রঞ্জন ভাবে, শক্তি গাঙ্গুলি আজ চেয়ারম্যান থাকলে এসব ফ্ল্যাটট্যাট তৈরি করবার একমাত্র হক তো তার ই ছিল।রাম আর অযোধ্যার থাকা না থাকার সেই চিরপুরাতন, চিরনূতন লব্জটি মনে মনে ই আউড়ে নেয় রঞ্জন, কারণ; তর্করত্ন বাড়ির ছেলের কমুনিস্টি করা নিয়ে জল তো একটা সময়ে কম ঘোলা হয় নি।আরে বশিষ্ঠ গোত্রীয় রঞ্জন ভট্টাচার্যের কমিউনিষ্ট গিরি যে শক্তি গাঙ্গুলীর পাতে চৃতল মাছের পেটি টা নিজের হাতে তুলে দেওয়ার একটা কৌশল– জনগণ সেটা আর বুঝবে কি করে? মা বেচারি , ভিক্টুর বৌয়ের কাছে শেতলা মন্দিরে শুনেছিল, বুলটির বাড়ির দোতলার গাড়ি বারান্দার ক্যান্টিলিবার বের করতে রাস্তার কালী মন্দির নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙেছে রঞ্জন।মৎস্যকন্যা বুলটিমাহাত্ম্য, মা বেচারী বুঝবে কি করে?- ভাবে রঞ্জন।
মাছ জলে সাঁতার কাটে।জল থেকে শ্বাস টেনেই বাঁচে। আর জীবন জল উপচে গেলেই জীবনের ঘরে একটা মস্ত বড়ো তালা ঝুলে যায় মাছের।অন্যের রসনাতৃপ্তিতে নিজেকে উজার করে দেওয়ার পর মাছের হাড়গোড়, যাকে আমরা চলতি বাংলায় কাঁটাকুঁটো বলি আর কি, সেগুলো ও বৃথা যায় না।সেগুলোও বেড়াল এমন কি বড়লোকের বাড়ির পোষা পমেডিয়ান বা পাগের খাদ্য হয়– বুলটিকে ঘিরে ছুটিপুরের জনরবের বুদবুদে হালকা ফেনার মতো এ কথা গুলো ওঠে।আবার বুদবুদের মতোই মিলিয়ে যায়।বুলটি ভাবে এখনো, এই মারা যাওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরেও শক্তিদার পার্টির রাজ্যপাট চলে গেলেও শক্তি গাঙ্গুলি এখনো কতো খানি শক্তিমান ই থেকে গেছে!
কবরস্থান মাঠ লাগোয়া নদীর ধার বরাবর জমিটা প্রায় দেশভাগের সময়কাল থেকেই দখল করেছিল এক চাঁদসী হাতুড়ে।সেকালের ছুটিপুরে গরিবগুর্বোর ভিতরে ডাক্তারবাবু হয়ে নিবাস মিত্তির বেশ কেউকেটাও হয়ে উঠেছিল।নিবাসের ডিসপেনসারিতে চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও দুনিয়ার বাবাজীদের ছবি লটকানো দেওয়াল গরীবগুর্বো রুগীদের মনে বেশ একটা সম্ভ্রম জাগিয়ে তুলত।
নিবাসের দখলি জমিতে হঠাৎ এসে ভাগ বসাল তার নিজেরই খুড়তুতো ভাই শ্রীনিবাস ওরফে চিনিবাস।ভাই বাড়ি করাতে একটা টেকনিকাল প্রবলেমে পড়ে গিয়েছিল মিত্তির ডাক্তার।পূব পাকিস্থান থেকে এসে পৈতৃক টাইটেল বদলে সে তো তখন ‘ মিত্র’ , আর তার ই ভাই কি না এখনো উপাধি লেখে ‘ মন্ডল’? ছুটিপুরের বশিষ্ঠ গোত্রীয় বামুনদের কাছে পাত্তা না পেলেও চটকল শ্রমিক, কুমোর আর দু একঘর জেলে পরিবারের কাছে জাতে ওঠার হাউসে যে গ্যাস বেলুনটা সে সগৌরবে উড়িয়েছিল, চিনিবাস এসে এতো সহজে সেই জ্যেতের গরিমায় আলপিন ফুটিয়ে দেবে– এটা মিত্তির ডাক্তার স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।
জঙ্গম খিদের তাড়না শক্তি গাঙ্গুলির একটু অন্য রকম ই ছিল।নারীমাংস ই ছিল শক্তির সবথেকে প্রিয় ভোজ্য।তাই কোন জমি, কার জমি কে ভোগ দখল করছে — তার থেকে কার বাড়ির মেয়েটা ডবকা হয়েছে, কার বাড়িতে গায়ে গতরে ছেলের বৌ এসেছে, তাকে চাকরি পাইয়ে দিতে শক্তি গাঙ্গুলি ছিল , ‘ বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’ ।আর সেই করুণাধারার প্রবাহনে সেকালের চেয়ারম্যান সাবের সবথেকে বিশ্বস্ত ভগীরথ ছিল রঞ্জন।
জান্ কী পাঁড়ের ওসব বিষয়ে ক্ষুধামন্দ থাকলেও’ উন্নয়নে’ র খিদে না বড্ড বেশি।আর জান্ কীর , জান্ কীদের খিদে আছে বলেই রঞ্জনরা সব সময়ে, সব কালে পাত কুড়োনোটুকু খেয়েই গায়ে গতরে হয় একদম লকলকে সবুজ লাউডগার মতো।লাউগাছের ডগা বেশি ফনফনিয়ে উঠলে গেরস্ত যেমন ভাতে হোক, পোস্ত দিয়ে চচ্চড়ি হোক , লাউ ডগা খাওয়ার তারসে সেই ফনফনে ডগা এতোটুকু মায়া মমতা না করে কেটে ফেলে– রঞ্জনের অবস্থাও মাঝে মধ্যে তেমনটাই হয়।তবে লাউগাছ ইউরিয়াতে যতো তাড়াতাড়ি ডগা মেলে ধরে, রঞ্জন কিন্তু কেটে ফেলা ডগার গায়ে হরমোন মাখিয়ে ইউরিয়ার থেকে তড়িৎ গতিতে ডগা বিস্তারে সমর্থ।আর এই সামর্থের জন্যেই ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর এতো সৌভাগ্যের ভিতরেও স্কুটার ছেড়ে দামি দামি বাইক- গাড়িতে অভ্যস্থ না হতে চাওয়া রঞ্জন ই এলাকার রঞ্জাদা।
রঞ্জাদা হওয়ার হ্যাপাটা কি– তা যারা রঞ্জন থেকে রঞ্জাদা হতে পেরেছে , তারাই একমাত্র অন্তর দিয়ে বোঝে।নিউটিশিয়ানদের গোটা জীবনের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা কে জীবনের শুরুতে বেটে জল খেলে পরেই রঞ্জনেরা হয়ে উঠতে পারে রঞ্জাদা।বিরিয়ানির কাঠের জালে কাঁচা কাঠের ফুটফুট আওয়াজ ও যে খাবারের স্বাদে তারতম্য আনতে পারে– এটা খুব উঁচু মানের বাবুর্চি ছাড়া বুঝতেই পারে না। আর উঁচু দরের জিভ ছাড়া সেই স্বাদের ফারাকটাও বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না।তাই যাদের নসিবে রঞ্জাদা হয়ে ওঠা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েই যায়, তারাই একমাত্র জানে ডায়াবেটিক ডায়েট। হাইক্রিয়াটিনিনের রোগীর ও রসনা তৃপ্তি, স্বাস্থ্য বাঁচিয়ে করতে পারলেই যে রঞ্জাদা কেবল হয়ে ওঠা নয়, হওয়া তো না হয় কোনো মতে একবার হলো।সেই হওয়াটাকে টিকিয়ে রাখাই তো আসল রঞ্জাদা হয়ে ওঠার কৃতিত্ব।সেটা আমাদের ছুটিপুরের রঞ্জন যে খুব ভালো করে পেরেছে– এটা বিশু পুরুত থেকে সুবাহান মৌলবী, মায় আম জনতা খুব ভালো করে বুঝে গেছে।
শালুক চিনেছে গোপাল ঠাকুর।খাবার জোগানে রঞ্জনের এই দক্ষতাকেই নিজের রুচি মতো খাবারের জোগারে অসুবিধা হয় না জান্ কী পাঁড়ের।মোচার ঘন্ট– কেউ খায় নারকোল কোড়া দিয়ে, কেউ ভালো বাসে তাতে চিংড়ি মাছ।কেউ দেয় জিড়ে ফোড়ন, কেউবা ঘি – গরম মশলা।রান্নার প্রক্রিয়ার এই ফারাক টুকু বজায় রেখেই রান্নাটা যে শেষ পর্যন্ত মোচার ঘন্ট ই হয়ে ওঠে– এটা খুব ভালো করেই জানে রঞ্জনেরা।
তাই কবরস্থান মাঠে জান্ কী বাবুর ইচ্ছে পূরণে লাগোয়া শহর বসন্তপুরে বুলটির ফ্ল্যাটে বিশু পুরুত আর সুবাহান মৌলবীকে নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসতে হয় রঞ্জনকে।খেলার মাঠ নিয়ে একসময় বাজার জমিয়ে রাখা মদন মাস্টার ও আসে মিটিংয়ে।মদনের বুড়ো বয়সে বিয়ে করা বৌ শক্তি গাঙ্গুলির কৃপায় মিউনিসিপ্যালিটির ভোটে বছর কুড়ি আগে লড়ে জিততে না পারার হতাশাতে এই এত্তো বছর পরে হার্টের ব্যামো বাঁধিয়ে বসেছে।এনজিওগ্রাম হয়েছে।দুটো স্টেইন বসাতে হবে।জমা টাকা খরচ করতে নারাজ মদন।
বুলটির ফ্ল্যাটে মদন কলিংবেল বাজাতেই দরজা খোলে স্বয়ং রঞ্জন।মদন দেখে আর কেউ নয়, বিপ্লবী নেত্রী বুলটিদি নিজের হাতে পানীয় পরিবেশন করছেন বিশু পুরুত থেকে সুবাহান মৌলবীকে।পানীয় ও টা নরম , না শক্ত, চালসে পড়া চোখে প্রথমটায় ঠিক মতো ঠাওর করে উঠতে পারে না মদন।না বুঝেই হাত টা বাড়িয়ে দেয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।