কলমের খোঁচা রাজ্য

পান্না রাজার দেশে – রঘুনাথ ভট্টাচার্য


আমরা এতদিন জানতাম, সরকারী কর্মী হবেন সৎ, পরিশ্রমী, জনদরদী, ইত্যাদি। তাহলে প্রশংসা পাওয়া যায়। ঐ পুরস্কারটুকুই তাঁকে নিজের দায়িত্বে তন্নিষ্ঠা করে তোলে। তাহলে আখেরে লাভ তো জনসাধারনের। কিন্তু ইদানিং কিছু উল্টাপূরাণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
এখন তো কিছু একটা প্রশ্ন উঠলেই পেছন দিকে আঙ্গুল তুলে বাচার চেষ্টা একটা ফ্যাশন। যেন আগে যদি খুন হয়ে থাকে তবে পরের সাতটা
খুনের কসুর মাপ। সে প্রসঙ্গে পরে যাচ্ছি।
ঘটনা হালফিল যা জানা গেল, তা হল সন্দেশ খালি ২ ব্লকের বিডিও সাহেব (দেশ গাঁয়ে সবাই এটা বলতেই অভ্যস্ত) পাবলিকের হাতে বেদম প্রহারে ঘায়েল হয়ে হাসপাতালে। কী অপরাধ তাঁর?
দরিদ্র গৃহহীন পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরী খাতে সরকার থেকে টাকা পাওয়া যায়। মঞ্জুরীর টাকা
উপভোক্তা তার ব্যাঙ্ক একাউন্ট মারফৎ পান।
সংশ্লিষ্ট ব্লকেও এই পরিকল্পনার কাজ লাগু ছিল। বিডিও মাঝে মাঝেই নালিশ পাচ্ছিলেন যে, কেউ কেউ মঞ্জুর হওয়ার পরেও টাকা পাচ্ছিলেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে তদন্ত চালু হয়। এবং ধরা পড়ে যে তত্ত্বাবধায়ক পঞ্চায়েত সদস্যদের সক্রিয় যোগাযোগে অন্যুন ৮০ লক্ষ টাকা তছরূপ হয়েছে। তদন্তের পর্য্যায়ক্রম অনুযায়ী দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা হয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এর পরেই আসরে এ অবতীর্ণ হন তর-তম ক্ষমতাধরেরা। প্রথমে অনুরোধ উপরোধ, তারপর ধমক- চমক, রাতের অন্ধকারে শাসানি, একটা কিছু রফা করে নেওয়ার প্রস্তাব-পরামর্শ।
কিন্তু অবাক কান্ড ! বিডিও সাহেব কাবু হলেন না। তিনি শেষ পর্যন্ত কঠোর হাতে বিষয়টির নিষ্পত্তি করলেন। ৮০ লক্ষ টাকা পুরোটাই আদায় করে প্রকৃত উপভোক্তাদের একাউন্টে জমা হল জেলাশাসকের পূর্ণ সম্মতি ও সহযোগিতায়।
এর পরেই নেমে এলো চরম আঘাত। দায়িত্ববান পদস্থ উন্নয়ন-আধিকারিক মারের চোটে হাসপাতালে। মামুলি না, ভালরকম আহত।
কাহিনীটি প্রকাশের পর কেউ কেউ ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে উঠলেন, ‘ওহ! ওরকম আগেও হোতো।’
আমার এ ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ হয়েছে। আমার দৃঢ় মত , তথাকথিত ৩৪ বছরের প্রথম বছরটি অত্যুৎসাহী তলার স্তরের কিছু কর্মী উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিলেন। মন্ত্রী বা নেতারা দৃঢ় হাতে সেটা দমন করতেন রীতিমত দায়িত্ব নিয়ে। অর্থ তছরূপ সংক্রান্ত কোনো ক্ষেত্রেই কোনো মন্ত্রী বা নেতারা হস্তক্ষেপ করতেন না। আইন আইনের পথে ও চলবে, এটাই ছিল রেওয়াজ। চোর ধরতে গিয়ে বিডিও অবশেষে গণরোষের শিকার হলেন, এমন ঘটনা বিরল।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।