মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:৮ই জানুয়ারি:– “যাদের শৈশব পার হয়েছে কিন্তু মানসিক শৈশব কাটেনি , তারাই একমাত্র অলৌকিক শক্তির সমর্থক হতে পারে।” – স্টিফেন হকিং
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং – বিশ্ববন্দিত এক বিজ্ঞান জীবন, যিনি ছিলেন মোহমুক্ততার পক্ষে , মোহমুগ্ধতার নয়। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো গ্যালিলিও’র মৃত্যুদিনে আপনার জন্ম। তবে কী,,,সপ্রতিভ উত্তর দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী, “যতদুর জানি, ওই দিনে দুই লক্ষের কাছাকাছি শিশুর জন্ম হয়েছিল।বিশেষ একদিনের কথা ভিন্নভাবে বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়।” এই উত্তরে প্রমাণিত হয় তিনি যর্থাথই বিজ্ঞানী ।
১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়। সভ্যতা তখন সৃষ্টিতে নয় রণহুঙ্কারে ও রক্তক্ষরণে লিপ্ত। এইসময় যুদ্ধ ভয়াবহ আকার নেয়। এই যুদ্ধে যখন প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মিছিল চলছে, সেইসময় আজকের দিনে পৃথিবীকে নতুন বার্তা দিয়ে আলোকায়ন ঘটাতে মায়ের কোল আলো করে আসে হকিং। তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতা মাতা থাকতেন লন্ডনে ।জন্মের পর তাঁরা চলে আসেন হাইগেট এলাকায়। স্টিফেন হকিং বয়স যখন মাত্র দুইসপ্তাহ, তখন তাঁরা যেখানে থাকতেন তার পাশের বাড়িতে রকেট আছড়ে পড়ে। অল্পের জন্য মা ও ছেলে বেঁচে যায়। সেই যুদ্ধ কি সর্বনাশ বয়ে আনছিলো ছিয়াত্তর বছর বয়সে হকিং চলে যাওয়াতে আমরা বুঝতে পারছি।
তাঁর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে বাবা মা’র ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করার মতো। বাবা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ।মা ইসাবেলা ছিলেন তৎকালীন ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়ে শান্তি আন্দোলনের নেতৃ ।ছোটো হকিং কে হাত ধরে মা মিছিলে হাঁটতেন। তাই ছোট্ট হকিং বড়ো হয়ে শুধু বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি রহস্য উদ্ধারে মগ্ন ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানুষের সংকটে, উদ্ধত রাজনীতির প্রবল প্রতাপের বিরুদ্ধে , পরিবেশ সংকটের প্রশ্নে বিজ্ঞান মননশীলতা রক্ষায়। বারবার তিনি তাঁর অভিমত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ছাত্রজীবনে তিনি প্রথাগত শিক্ষার তোয়াক্কা তেমন করতেন না। তিনি ভালোবেসে পড়তেন তাই তাঁর পরীক্ষার ফলাফল ছিলো মিশ্র ।বাবা ফাঙ্ক ছেলেকে ডাক্তারী পড়তে বললে তিনি ঘোরতর আপত্তি জানান। প্রথমদিকে অঙ্ক পরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ক্রিকেট ও রাগবি খেলতেন। সাঁতার কাটা তাঁর শখ ছিলো। তাঁর বন্ধুপ্রীতি ছিলো অসম্ভব রকমের যা এই প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয়।
মাষ্টারমশাইরা তাঁদের এই প্রিয় ছাত্রটির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এরপর কী করবেন? উত্তরে তিনি গবেষণার করার ইচ্ছের কথা বলেছিলেন। এরপর কেমব্রিজ যাত্রা।”কসমোলজি ” বা সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে পোষণ করতেন। বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি রহস্যের আলোচনায় দুটি প্রধান তত্ত্বের নাম স্টিডি স্টেট থিয়োরি ও বিগ ব্যাং থিয়োরি।স্থিরদশাতত্ত্ব ও মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব।
হকিং বললেন, আইনস্টাইন কোয়ান্টাম বিদ্যা কাজে লাগাননি , তাই এখন আমাদের একটা তত্ত্ব চাই যা বড়ো মাত্রা ও ছোটোমাত্রা উভয়ের বেলাতেই কাজে লাগবে এবং নির্ভূলভাবে উত্তর দেবে। এর নাম দিলেন, থিওরি অফ এভরিথিং। এর সার্থক রূপায়ণে কৃষ্ণগহ্বরের দিকে নজর দেন। কৃষ্ণগহ্বর স্পেসটাইমের এমন এক এলাকা যেখানে মহাকর্ষের মান বিশাল। তাই নেবার বেলায় সর্বভুক। এই বিষয়ক জটিল বিষয়ে তাঁর ভাবনাচিন্তা কাজ।
স্টিফেন হকিং তাঁর ভাবনা চিন্তা বই লিখে লিপিবদ্ধ করতেন। এই মানুষটি যে নানাবিধ সন্মানে ও পুরস্কারে সন্মানিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি ব্যতিক্রমী অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকেরা অনেক আগে তাঁকে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু অতলান্তিক মানসিক শক্তির জোরে চিরবিদায় নিলেন অনেক পরে। লড়াই করে গেলেন জীবনভর। মানুষের জন্য রেখে গেলেন ভাবনার অনেক সম্ভার।