রাজ্য

রাজ‍্যে মদ বিক্রির প্রগতিশীল নীতিতে রাজস্ব বাড়ল ৪১১%


চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ৯ সেপ্টেম্বর: দেশে একদিকে চরম অর্থনৈতিক মন্দা, বৃদ্ধির হার তলানিতে, অপর দিকে দূর্বিসহ বেকার সমস্যায় জেরবার দেশ তথা আমাদের রাজ‍্য পশ্চিমবঙ্গ।দীর্ঘ প্রায় ৮/৯ বছর বন্ধ টেট, এসএসসি সহ বিভিন্ন সরকারী নিয়োগ। রাজ‍্য সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে ডিএ সহ নতুন পে কমিশন থেকে। এর কারন হিসেবে বলা হচ্ছে রাজকোষে অর্থাভাব। অন‍্যদিকে পরিকল্পিত ভাবে এরাজ‍্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ‍্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মদের নেশা। কারন নেশায় আসক্ত যুব সমাজের না থাকবে কোনো দাবী দাওয়া, না করবে কোনো প্রশ্ন।

মগরাহাট থেকে বিলকান্দা, সরকার কথা দিয়েছিল চোলাই মদে ক্ষতিগ্রস্ত কিম্বা বেআইনি মদ বিক্রির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হবে। এখনও পর্যন্ত তা সরকারি ঘোষণা হিসাবেই থেকে গেছে, উল্টে মদের ‘একচেটিয়া কারবারি’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে সরকার রাজস্ব বাড়িয়ে নিয়েছে ৪১১%।

অথচ ২০০৮ এ সেপ্টেম্বরে ৬/৭ দুদিন রাজভবনে যে বৈঠক হয় সিঙ্গুরের কারখানা নিয়ে, তাতে মমতা বলেছিলেন সিঙ্গুরে শিল্প নয়, সুইমিং পুল আর ওয়াইন কারখানা হবে। ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন রাজ‍্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী সহ মুখ‍্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন, মমতা ব‍্যানার্জী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেদিনও তিনি ছাড়েন নি ৪০০ একর জমির দাবী।

২০০৮ এর পূজোর আগে বাঙালির কর্মসংস্থানের স্বপ্নের, বাঙলার শিল্পের সমাধি ঘটেছিল ঐ সিঙ্গুরের মাটিতেই। সেই ঘটনার ১১ বছর পরে নিজেদের সরকারের মদ বিক্রির ‘প্রগতিশীল নীতি’ ভূয়সী প্রশংসা করে নিজেদের পিঠ নিজেরাই চাপড়ে দেন। রাজ‍্যে মদের বন‍্যা ছোটানোর ঐ নীতিতে ছিল নিজেদেরই জয়গান। এই ‘প্রগতিশীল নীতি’ আসলে রাজ‍্যের জনসংখ্যা ১০কোটি ধরে হিসেব করলে মাথাপিছু ৯২৬ টাকা আবগারি শুল্ক বাবদ আয় ক‍রছে সরকার।

প্রশাসনিক রিপোর্টে কিভাবে হু হু করে বেড়েছে মদ বিক্রি তার বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ২০১৩/১৪তে মদ বিক্রি থেকে তৃনমূল সরকারের আয় ছিল ৩০০০কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা, ২০১৭/১৮ তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৫৮কোটি ২৫লক্ষ টাকা।চলতি বছরের হিসাব এখনও চূড়ান্ত না হলেও সরকার আশা করছে সেই হিসেব ছাড়িয়ে যাবে ১২ হাজার কোটিরও বেশী টাকায়। বিয়ারের বিক্রি সামান‍্য কমলেও, বিদেশি ও দেশী মদের বিক্রি সব ঘাটতি মিটিয়ে সরকারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

রাজ‍্য সরকার জানিয়েছে তাদের তৈরী রাজ‍্য বেভারেজ কর্পোরেশন লিমিটেড হয়ে উঠেছে দেশের একচেটিয়া মদের কারবারি, যাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী এদেশে নেই। বেআইনি মদে মৃত্যুর জন‍্যে তিনি একের পর এক মুক্তহস্তে দিচ্ছেন ২লক্ষ করে মাথাপিছু ক্ষতিপূরণ।বেআইনি মদ বিক্রিতে যুক্তদের জন‍্যে হয়নি কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের ব‍্যবস্থা। যদিও ইন্ডিয়ান স্ট‍্যাটিস্টিক‍্যাল ইন্সটিটিউট তৈরী করেছে বিকল্প ব‍্যবস্থার রূপরেখা।

দেশের তথা রাজ‍্যের যুবসমাজকে এইভাবে নেশায় ডুবিয়ে রেখে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে এই সরকার। এই যুব সমাজের নেই কোনো কর্মসংস্থানের ব‍্যাবস্থা, নেই কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। সব কিছুতে স্পষ্ট এ সমাজের চরম অবক্ষয়ের চিহ্ন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।