রাজ্য

হাইকোর্টের রায় ও বামপন্থীদের ভূমিকা।


মিতা দত্ত: নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:২০শে অক্টোবর:- বাজল তোমার আলোর বেণু, মাতলো রে ভুবন।
বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব – দুর্গোৎসব ।পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় বাঙালিদের প্রাণের উৎসব হয়ে ওঠে। এই উৎসব কিন্তু শুধু দক্ষিণপন্থী শক্তির নয়, এর আবেদন বামপন্থীদের কাছেও রয়েছে।জীবনের একঘেঁয়েমি থেকে বেরিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হতে সবাই চায়। মানুষের জীবনে গতি বজায় রাখতে আনন্দের একটা বড়ো ভূমিকা আছে।

কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। অতিমারীর করাল গ্রাসের খপ্পরে মানব সমাজ। সেই করাল গ্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। মানুষ যতবার এইরকম অবস্থায় পড়েছে, ততবারই সে এই গ্রাসকে জয় করেছে। এবারেও করবে , কিন্তু সময়সাপেক্ষ কাজ। যতদিন না হচ্ছে ততদিন সাবধানতাই প্রধান অবলম্বন।

কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই এই অতিমারী প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না । কর্মহীন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কোনো সদিচ্ছার পরিচয় দেখতে পাওয়া যায়নি।রেশনিং ব্যবস্থা নিয়েও প্রথমদিকে নানা টালমাটাল করার পর বামপন্থীদের চাপে কিছুটা করতে বাধ্য হয়েছে।

বামপন্থীরা এই সংকটে প্রথম থেকেই মানুষের পাশে থেকেছে। যদিও সেটাই বামপন্থীদের কাজ। সরকার এই সংকটে স্বাস্থ্য পরিসেবাকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাস্থ্য পরিসেবার সাথে যুক্ত মানুষ সহ সমগ্র রাজ্যবাসীকে দুর্দশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।অন্যদিকে ক্লাবগুলিকে টাকা দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে দুর্গোৎসবকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুর হারও বেড়ে যাবে । এমতাবস্থায় বামপন্থীরা চুপ করে থাকতে পারে না। তাই বামপন্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জনগণকে রক্ষা করার জন্য হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন।

দুর্গোৎসবে মানুষের ঢল নামে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখা অন্যতম পথ। বামপন্থীরা যেহেতু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, তাই এই ঢল ঠেকানোর জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়।পূজোতে প্যান্ডেলে আশেপাশে খাবারের দোকান বসে। অনেকের মনে হয়েছে এরসাথে মানুষের রুটিরুজির সম্পর্ক জড়িত। কিন্তু এইভাবে রুটিরুজি করতে গিয়ে যে মহামারীর কবলে পড়বে, তখন তো সরকার দায়িত্ব নেবে না! পুরোহিত, ক্লাবগুলোকে টাকা না দিয়ে তো আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারতো। সেই তালিকায় যেমন পুরোহিত থাকতো, তেমন অন্য পেশার লোকও থাকতো। যদিও সস্তায় জনপ্রিয়তা এই সরকারের অভিমুখ।

ইতিমধ্যেই রাজ্যে স্বাস্থ্যপরিসেবার বেহাল দশা। ডাক্তার, স্বাস্থকর্মীদের প্রাণ চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী কম, প্রয়োজনীয় বেড নেই ।এমনকি রুগীদের খেতেই ঠিকঠাক দেওয়া হয় না, টেস্টও ঠিকঠাক হচ্ছে না।এই অবস্থায় দুইদিনের জন্য ঘুরতে গিয়ে যে মড়ক লাগবে তার দায়িত্ব তো সরকার নেবে না!

তাই বামপন্থীদের দোষ না দিয়ে প্রকৃত অবস্থা বুঝে এবারের আনন্দ ঘরে আপনজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ উচিত। তাতেই নিজের, দশের ও দেশের মঙ্গল । করোনা আবহে হাইকোর্টের পূজো মন্ডপে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেক নাগরিকের মেনে চলা কর্তব্য।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।