রাজ্য

ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আড়ালে বাতিল হয়ে গেল সরকারি কর্মীদের ডিএ।


চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ:২৯শে সেপ্টেম্বর:–বকেয়া ডিএ গায়েব করে নতুন রোপা বিধি জারি রাজ‍্য সরকারের।।
বর্তমানে বেতন বৃদ্ধির হারে দেশের সব রাজ‍্যের থেকেই পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ।নেই কোন বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নেই কোনো এরিয়ার।এরাজ‍্যে ও সমগ্র দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ই তা নজিরবিহীন ঘটনা।হিসাব অনুযায়ী ১২% হারে বৃদ্ধি হতে চলেছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন।যা অন‍্যান‍্য রাজ‍্যগুলি র তুলনায় নিতান্তই কম।এ রাজ‍্যের বেতন বৃদ্ধি র ইতিহাসে ও তা সর্বনিম্ন।


২০০৬ সালে বামফ্রন্টের আমলে শেষ পঞ্চম পে কমিশন কার্যকর করা হয়েছিল।প্রত‍্যেক দশ বছর অন্তর রাজ‍্যে নতুন পে কমিশন হবার কথা।কিন্তু এবার ষষ্ঠ পে কমিশন ঘোষণা করা হয়েছে এবছর, যা কার্যকর হবে আগামী ২০২০তে।

চার বছর পিছিয়ে গেলেও বেতন বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নয়।প্রতি বছর তা এক শতাংশের নীচে।এর সঙ্গে বকেয়া মহার্ঘভাতা ও বকেয়া এরিয়ার নিয়ে কোনো টু শব্দটি করেনি সরকার।এই সরকারি প্রতারণা মেনে নিতে পারছে না সরকারি কর্মচারীরা।


এই আর্থিক বঞ্চনাকে আরো গভীর নৈরাশ‍্যজনক করে রোপা বিধি জারি করলো নবান্ন।গত শুক্রবার রাজ‍্য অর্থ দপ্তর রোপা(রিভিশন অব পে এন্ড এ্যলাউন্স) প্রকাশ করেছে অর্থদপ্তরের ওয়েবসাইটে।যা সরকারের আর্থিক
প্রতারণা কে আরও প্রকট‌ করেছে।এর আগে সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব ব‍্যাক্ত করেছে সরকার।ডিএ নিয়ে আন্দোলনকে ঘেউ ঘেউ করা,কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যান ইত্যাদি।এবার সেই মনোভাবের ই আইন গত স্বীকৃতি দিলেন রোপা বিধি জারি করে।পে কমিশন কার্যকরী হবার পর বেতন ও ভাতার সংশোধন বাধ‍্যতামূলক। রোপা হলো সেই সংশোধিত বেন ভাতা বৃদ্ধির নিয়ম।


রোপা জারি করে সরকার প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছে,২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যে নয়া বেতনক্রম কার্যকর করা হবে ,তাতে ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ে মিলবেনা কোনো বকেয়া ডিএ বা এরিয়ার, যা সরকারি কর্মচারীদের অলিখিত অধিকারে পরিনত হয়েছে।


এই রেপো তে সরকারের ১২%মহার্ঘভাতা থেকে বঞ্চিত থাকছে সরকারি কর্মচারীরা।বাড়ি ভাড়া ১৫% থেকে কমে হচ্ছে ১২%।প্রতি জুলাই মাসে যে ইনক্রিমেন্ট তারা পেতেন তার হার কতো হবে সে ব‍্যাপারে সরকার নীরব।
সরকার যে বেতন বৃদ্ধির দাবি করছে তার সঙ্গে কর্মচারীদের হিসাবে পার্থক্য ধরা পড়েছে।তাদের মত এই১৪বছর সময়কালে বেতন বৃদ্ধির হার মাত্র ১ %।


নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছরে ৩%ডিএ ধরে সরকারি কর্মচারীদের ১২% ডিএ প্রাপ‍্য,কিন্তু তারা হাতে পাবে এর নগন‍্য একটা অংশ। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ন‍্যুনতম ১৮ হাজার টাকার বেতন হার অস্বীকার করেছে রাজ‍্য। নতুন রোপা বিধি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ‍্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় সিনহা।তাঁর মতে এই রোপা রুলে না আছে এরিয়ার নিয়ে কোন কথা না আছে ৪১% বকেয়া ডিএ নিয়ে কোনো বক্তব্য,আছে শুধু পাহাড় প্রমাণ বঞ্চনা যা কর্মচারীদের স্বার্থ বিরোধী।অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রে জটিল হিসাব কষে দেখিয়ে দেন কিভাবে ১০০ থেকে ২৮০ টাকা ৯০ পয়সার বৃদ্ধি ঘটবে।যা শুধুমাত্র হিসেবে র কারসাজি করে কর্মচারীদের ধোঁকা দেওয়ার পন্থা।

এতদিন সরকার ধর্মঘটে নিষেধাজ্ঞা, বেতন কাটা ,ছুটি বাতিল, চাকরির দিন সঙ্কোচন নের মাধ‍্যমে সরকারি কর্মচারীদের যেসব বে আইনী শাস্তিমূলক ব‍্যাবস্থা করেছিল তা আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল এই সরকার, যা সরকারি শ্রমআইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।


বামফ্রন্ট সরকার তাদের সাধ‍্যমতো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মমাফিক যে সময়মতো বেতন কমিশন ডিএ ইত্যাদির ব‍্যবস্থা করেছিল তাকে অর্থসঙ্কটের দোহাই দিয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে দিয়েছে এই সরকার।কিন্তু দুঃখের বিষয় নেতা মন্ত্রীদের ভাতা কয়েকগুণ বৃদ্ধির সময় সেই অর্থসঙ্কট ম‍্যাজিক এর মতো উধাও হয়ে যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।