রাজ্য

উত্তরবঙ্গের রুপালি শস্য, বোরোলি


দীপশুভ্র সান্যাল: চিন্তন নিউজ:১৩ই জুলাই:– তিস্তা-করলার মিলনস্থল আর কিং সাইজ বোরোলি আপামর বাঙালির আগ্রহের বিষয়। উত্তরবঙ্গের রুপালি শস্য, বোরোলি মাছ যে প্রায় ছয় ইঞ্চি অবধি লম্বা হতে পারে তা অনেকেরই ধারণা নেই। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রয়াত জ্যোতি বসু উত্তরবঙ্গে এলেই তাঁর বোরোলি প্রিয়তার কথা ফলাও করে নিউজ পেপারে ছাপা হোত। তা সে, জলদাপাড়ার হলঙে আসুন বা কালীঝোড়ার পি ডব্লু ডি বাংলোতে। কুলীন বোরোলি, উত্তরবঙ্গেই তিস্তা, তোর্সা ইত্যাদি যে অল্পকটা নদীতে পাওয়া যায় তার পার্শ্ববর্তী শহরের বাজারগুলোতে তিন-চার ইঞ্চি মাপেরগুলোই কেজি প্রতি দাম হাজার টাকার এপার ওপার। তাও একদম ফ্রেশ বোরোলি পাবার সম্ভাবনা কম বিষপ্রয়োগ বা ইলেকট্রিক শক আর বরফে সংরক্ষণের ফলে।

প্রবল বর্ষায় তিস্তার জল বাড়বার খবর পেয়ে শহরের অনেকেই জল দেখতে জলপাইগুড়ির তিস্তা পাড়ের জুবিলী পার্ক থেকে বাঁধ ধরে প্রায় আট কিলোমিটার হাঁটে মোহনার উদ্দেশ্যে বোরোলির দেখা পেতে। আগেও দেখা গেছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা কিন্তু নদীতে জল বাড়লে খুশিই হয়। তার কারণ মাছ আর ভেসে আসা গাছের সংখ্যা বেড়ে যায়। আর এবার তো টেমাই আর নানাধরনের জাল নিয়ে স্থানীয়রা রীতিমতো মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। জানা নেই লকডাউনের সুফল কিনা, আগেই বলা হয়েছে, প্রায় ছয় ইঞ্চি সাইজেরও বোরোলি দেখা যায়। জেলেদের বক্তব্য, যে বোরোলি যত বড়, চর্বির আধিক্যের জন্য তার পেটের রঙ তত হলুদ। ভাজা, পাতলা ঝোল আর সরষে বোরোলি তো অসাধারণ।

জেলেদের কাছ থেকে নিতে হ’লে আসতে হবে সকাল দশটা বা বিকেল চারটার মধ্যে। তারপর সব বোরোলি চলে যাবে আড়তদারদের কাছে। খুব বড় সাইজেরগুলো আটশ টাকা কেজি, যেগুলো বাজারে বারোশো। তবে একদম ফ্রেশ … জ্যান্ত। তবে যেহেতু জেলেদের কাছে মাপার কিছু নেই তাই ওজনটা আন্দাজেই নিতে হবে আর মাছ নেবার পাত্র বা প্যাকেট নিজেকেই নিয়ে যেতে হবে।

আষাঢ়ে তিস্তা-করলার সঙ্গমস্থল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়াল রুপ ধারণ করেছে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে একটা ছোট্ট ডে আউট এর আদর্শ জায়গা। আর জায়গাটা যেহেতু দক্ষিনে তাই পূর্ণিমা সন্ধ্যায় অসাধারণ চন্দ্রোদয় দেখা যায় এখান থেকে। তবে শেষ তিন কিলোমিটার কিন্তু খুব নির্জন, কোনো বাড়িঘর বা দোকানপাট নেই বাঁধের পাশে। তাই কিছু খাবার ইচ্ছে থাকলে সাথে নিয়ে আসতে হবে। আর এখন তো নদী দুটোতে খুব বেশি জল , তাই রিস্ক নেওয়া যাবে না, কিন্তু অন্য ঋতুতে এলে নৌকা ভ্রমণ আর তিস্তা-করলার মিলনস্থলে স্নান না করলে কোন মজা নেই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।