রাজ্য

খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ


সুপর্না রায়ঃ-চিন্তন নিউজঃ-২০০ বছরের পরাধীনতার পর বহু ভারতমাতার বিপ্লবী বীর সন্তান দের আত্মবলিদানের পর আমাদের ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় । ভারতে নতুন সরকার গঠন হয় । কিন্তু তারা দেশী – বিদেশি পুঁজিপতি ও গ্রামীন জোতদার – জমিদারদের খুশী করতে গিয়ে ভারতে নামিয়ে আনলো তীব্র খাদ্যসংকট। খাদ্যেপন্যের কালোবাজার রুখতে সরকার কোন ব্যবস্থায় গ্রহন করেনি । তার উপর দেশ ভাগ । লক্ষ লক্ষ মানুষ ওপার বাংলা থেকে এদেশে চলে আসে । তারফলে খাদ্যসংকট চরমে উঠে।

১৯৫৯ সাল — বাজার থেকে চাল ,গম ,আটা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উধাও হয়ে যায় আর তার ফলে দেশে নেমে আসে দূর্ভিক্ষ। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ ঘুরতে থাকে একটু ফ্যান চেয়ে কিন্তু তাও অমিল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক , শ্রমজীবী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই গন আন্দোলন কে দমন পীড়নের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালাতে চেষ্টা করে। জনসাধারণের সামান্য দাবী ছিল সস্তা দরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এর ব্যবস্থা করুক সরকার কিন্তু তার পরিবর্তে পেল লাঠির বাড়ি ,কাঁদানে গ্যাস এর ঝাঁঝালো গন্ধ ও বুলেটের গুলি। জোতদার’রা খাদ্য মজুদ করে রেখেছিল বেশী দামে বিক্রি করবে বলে । দুমুঠো চাল চাইতে গিয়ে ঘরের মেয়ে বৌ দের অসম্মানীত হতে হতো । সেই সময় বামপন্থী দলগুলো ও গনসংগঠন গুলি ” দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দূর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি” গড়ে তোলে ও আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে।১৯৫৯ সালের ১৫ ই জুন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সরকার এর বিরুদ্ধে প্রথম কেন্দ্রীয় সমাবেশ সংগঠিত হয়। এর পর থেকে ধাপে ধাপে ধর্মঘট , হরতাল সংগঠিত হয়। আর এর ফলে বহু সংখ্যক আন্দোলন কারী গ্রেফতার হন। এতকিছুর পরেও তখন সরকারের ঘুম ভাঙ্গলো না তখন ” মুল্যবৃদ্ধি ও দূর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি” ঘোষনা করে রে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে এ সমস্যার সমাধান এর জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু করবে।এই ঘোষণা করার ফলে কংগ্রেস সরকার মানুষের বিক্ষোভে র সিঁদুরে মেঘ দেখলো আর তথাকথিত বড়োলোকরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হলো। ২৩ শেষ অগাষ্ট মাঝরাতে সরকার বামপন্থী নেতাকর্মীদের ধড়পাকড় শুরু করে। এই সময় কালে আড়াইহাজারে র বেশী মানুষ গ্রেফতার বরণ করেন। বামপন্থী নেতা কর্মীদের উপর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবার সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে কারণ তাঁরা বুঝতে পারছিলেন এই লড়াইটা সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে করা হচ্ছিল । সাধারণ মানুষের খাদ্য ,স্বাস্থ ,শিক্ষা , বাসস্থান এর জন্য। তাই স্বত্তেও সরকার সমাধানের পথ না ধরে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় সাত হাজার আন্দোলনকারী দের গ্রেফতার করে। ৩১ শে অগাষ্ট তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর অপসারণ ,খাদ্যের দাবীতে ও পুলিশি দমন-পীড়ন এর প্রতিবাদে কলকাতা শহীদ মিনারের পাদদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয় এবং তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজভবন অভিযান শুরু করেন । কংগ্রেস সরকার এই সাধারণ মানুষের উপর নির্মম ভাবে লাঠিচার্জ করে এবং গুলি চালায় । এতে বহু মানুষ প্রান হারান ও আহত হন । সরকারি নথিতে মৃত মানুষের তালিকা বের করলেও তার অনেক গুন বেশি মানুষ এর প্রান যায় ,বহু মৃত দেহ পাচার করে দেওয়া হয়। স্রেফ লাঠিচার্জ করে এত মানুষের প্রান নেওয়া ইতিহাস এ আর কোথাও হয়নি । তাই এই ৩১ শে অগাষ্টকে খাদ্য আন্দোলন কারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ” শহীদ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।