কলমের খোঁচা

রবীন্দ্রসঙ্গীত ও শিল্পী সুচিত্রা মিত্র অবিচ্ছেদ্য


হাওড়া থেকে আশীষ দেব: চিন্তন নিউজ:৩রা জানুয়ারি ২০২১– “চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না ।সংসারগহনে নির্ভয়নির্ভর, সঙ্গে রহো। অধনের হও ধন, অনাথের নাথ হও হে, অবলের বল। জরাভারাতুরে নবীন করো ওহে সুধাসাগর।”

এক সময় তাঁকে দেখলে “শেষের কবিতা” – র লাবণ্যের কথা মনে পড়ে । তাঁর কোন ও সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না । তাঁর গলাতেই ‘কৃষ্ণকলি’ – র সাথে পরিচয় । ওই প্রখর ব্যক্তিত্বের কাছে মাথা নুয়ে আসত অনেকের।  ২০১১ সালে থেমে গিয়েছিল সেই আলো । সত্যিই কি একটা মৃত্যু থামিয়ে দিতে পারে সুচিত্রা মিত্রকে  ? সবসময় পথ চলতেই ছিল তাঁর আনন্দ । হবে নাই বা কেন ! ১৯২৪ সালে ট্রেনে জন্ম তাঁর । বাবা ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি । সেই থেকেই রবীন্দ্র অনুরাগ । পঙ্কজ মল্লিকের কাছে ছোট বেলাতেই গান শেখা শুরু । বৃত্তি পেয়ে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে । ইন্দিরা দেবী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজানন্দ মজুমদারের কাছে তালিম নেন। পরে স্কটিশ থেকে গ্র্যাজুয়েট ।

সেই সময় বাংলায় বাড়ছিল বামপন্থীদের প্রভাব । সুচিত্রা সেই ঢেউ এ ভাসিয়েছেন নিজেকে । যুক্ত হন গণনাট্যে, রাস্তায় মিছিলে মানুষের সাথে পথে নেমেছেন । ১৯৬০ সালে দিল্লীর আকাশবাণীর লাইভ প্রোগ্রামে বাল্মীকি প্রতিভার জন্য গান গাইছেন সুচিত্রা । সেই সময় সেখানে উপস্থিত হন জওহরলাল নেহরু । কোন কারণে সেখানে তখন কালো পতাকা দেখানো হচ্ছিল । এদিকে সুচিত্রা গাইছেন ” কাজের বেলায় উনি কোথা যে ভাগেন, ভাগের বেলায় আসেন আগে “। তারপর রিপোর্ট গেল সুচিত্রা মিত্র নাকি ‘ অ্যান্টি নেহেরু ‘ । ছয় বছর আকাশবাণীতে গান গাওয়া বন্ধ হয়ে গেল তাঁর । আইপিটিএ’র দিন গুলোতে প্রতিবন্ধকতার পাহাড় সরিয়ে এগিয়েছেন তিনি । অগুনতি মানুষের শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম, ভালোবাসা আদায় করেছেন তাঁর রবীন্দ্র গান নির্মাণে । তাঁর গান কেন যে মানুষকে টানতো  তা শুধু বাঙালি জানে …..আর জানে সেই মেয়ে …..। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধায় স্মরণ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।