দেশ রাজনৈতিক রাজ্য

জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর বিরুদ্ধে বিধানসভায় গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাব ও মমতার দ্বিচারিতা


চৈতালি নন্দী, চিন্তন নিউজ, ৮ সেপ্টেম্বর: বিজেপি সরকারের কোনো জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদ তাঁর মুখে কোন দিন সরাসরি শোনা যায়নি। মানুষের স্বার্থ বিরোধী বিজেপির কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি নিজে কখনো আন্দোলন করেননি। উল্টে বিভিন্ন ভাবে পথ প্রশস্ত করেছেন ও সহযোগিতা করেছেন বিজেপির, মানুষের শ্বাসরোধকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের। অপরদিকে বিভিন্ন ভাবে দমন নীতি প্রয়োগ করেছেন বামপন্থীদের উপর, যখন তারা বিজেপির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে।

সেই মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা ব‍্যানার্জী শুক্রবার আক্ষেপের ভঙ্গিতে বললেন যে সারা দেশে বিজেপির এতো আক্রমনের পরও সারা দেশ একসাথে আন্দোলনে আসতে পারছে না, কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লা, মহারাষ্ট্রে শারদ পাওয়ার কেউই কিছু করতে পারছে না। তিনি সবাইকে দেশজুড়ে মুভমেন্ট বা আন্দোলনের আহ্বান জানান।

এনআরসি প্রসঙ্গে পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন যে, বিজেপি বাংলা বিরোধী, বাঙালি বিরোধী ও দেশবিরোধী। কিন্তু তার বিকল্প কোনো মন্দির নির্মাণ করে হবেনা। মানুষের জীবনের সমস্যা সমাধানে পথে নামতে হবে। হনুমান জয়ন্তী নিয়ে প্রতিযোগিতা করলে বিজেপি-আরএসএস এর হাতই শক্ত হবে। বিরোধী দলনেতা মান্নান বলেন যে, যারা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিল, তারাই বিজেপিকে শক্তিশালী করেছে। বিষবৃক্ষ তারাই রোপন করেছেন।

বিরোধীদের দাবি মেনে নিয়ে এদিন বিধান সভায় এনআরসি নিয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, তা বিজেপি ছাড়া সব দলের সমর্থনে গৃহীত হয়। অসমে এনআরসি নিয়ে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে এবং অচিরেই এই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারে বাংলা, তার বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা হিসেবে জাত, ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্ব প্রদান সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়। কেবল মাত্র বিজেপি বিধায়কেরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

মুখ‍্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বলতে নেমে প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে নিজের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে ব‍্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বলতে থাকেন দেশে ফ‍্যাসিবাদী সরকার চলছে। একই সরকার যে এই রাজ‍্যেও চলছে তা তিনি বেমালুম ভূলে গিয়েছিলেন। যখন কাশ্মীরে ৩৭০ধারা রদ নিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন বামেরা, তখন যে তিনি নির্বাক ছিলেন সে কথা না বলে উল্টে এখন কাশ্মীরের জনজীবন স্তব্ধ হবার নিন্দা করেন।

এনআরসি র বিরোধিতা করে মুখ‍্যমন্ত্রীর দ্বিচারিতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেন যে পাঁচ পুরুষের বাসিন্দাদের জন্মের সার্টিফিকেট আনতে বলা হচ্ছে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ না নিয়ে ব্রিটিশের সহযোগিতা করে দেশের বিরোধীতা করেছিল যারা, তাদের কাছে কি দিতে হবে নাগরিকত্বের প্রমাণ? যেখানে অভিযোগকারীকে অভিযুক্তের অপরাধ প্রমানের দায়িত্ব নিতে হয় এখানে এ যেন এক উলটপুরান। আসলে অসমের প্রক্ষাপট আর বাংলার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই আলাদা। বাংলায় এনআরসি করে অনুপ্রবেশকারী তাড়ানোর নামে অমিত শাহরা আসলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথে এগোতে চাইছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।