মীরা দাস, চিন্তন নিউজ, ৯ এপ্রিল: উন্নয়ন অর্থাৎ অবস্থার উন্নতি, তাই উন্নয়ন প্রকল্প সেগুলিকেই বলা যায় যেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ উপকৃত হন, কিন্তু মোদী সরকার এমন কিছু প্রকল্পকে উন্নয়ন প্রকল্প বলে চালাচ্ছেন যা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের কাজে লাগতে পারে এবং অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ।
উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকাঠামো তৈরীর সময় সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষের কথা মাথায় রাখা উচিৎ। কিন্তু মোদী সরকার এমন তিনটি প্রকল্পের কথা ঘোষনা করেছেন যা কতিপয় মানুষের স্বার্থরক্ষা করবে বলে মনে হয়। স্মার্ট সিটি, বুলেট ট্রেন ও ছোট শহর গুলিতে এয়ার পোর্ট বানানোর যে প্রকল্প তার সাথে পিছিয়ে পড়া মানুষের কোনো সম্পর্কই নেই।
১০০টি স্মার্ট সিটি বানাতে ৫০০ টি শহরের আধুনিকীকরনের জন্য ২লক্ষ কোটি টাকা খরচ পড়বে যা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ। ভারতবর্ষে কৃষির সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা বেশী, সুতরাং এই মানুষগুলির সংখ্যা কোথায় থাকবে? বুলেট ট্রেনের দ্রুতগতি মানুষের জীবনের গতিশীলতা বাড়াবে ঠিকই, তেমনি পুরনো রেলপথ, রেলকোচ, ইঞ্জিন, সিগনালিং ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের। এইগুলি বুলেট ট্রেন চালানোর পক্ষে উপযুক্ত নয়। সবাই চায় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আর ও উন্নত হোক, কিন্তু যে দেশে অধিকাংশ মানুষের গড় আয় এতই কম যে, তাদের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের যোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হয়, সেখানে তাদের আকাশ পথে যাতায়াত করাটা বাহ্যিক আড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই নয়, সুতরাং ছোট শহরগুলিতে এয়ারপোর্ট বানিয়ে কোনো লাভ আদৌ হবে না। কটা মানুষ পারবে এই ভাবে যাতায়াত করতে? সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে বিমূল্যায়ন সম্পর্কে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন ”পৃথিবীতে ভারতবর্ষই একমাত্র দেশ যেখানে বিপুল সংখ্যক নিরক্ষর, অদক্ষ শ্রমজীবী এবং সীমাহীন দারিদ্র্যের পীড়িত মানুষদের নিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে।” উন্নয়নের এই ভুল সংজ্ঞা কোনমতেই গ্রাহ্য নয়। উন্নয়নের নামে ধনী দরিদ্রের পার্থক্য বাড়িয়ে তোলা কখনোই কাম্য নয়। উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ধনী দরিদ্রের পার্থক্য মুছে ফেলা। সেটাই হবে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন।