দেশ

‘ প্রাইড মার্চ ‘


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২৯শে জুন:- দুটি শব্দ মাত্র। তাঁর মধ‍্যেই আঁকা রামধনুর সাত রং। ‘ প্রাইড মার্চ ‘। এ এক গর্বের দৌড়। ভারতের ছাত্র ফ্রেডারেশন প্রান্তিক মানুষের ব‍্যথা বেদনাকে সম্মান জানিয়ে যে যে কর্মসূচি নিয়েছেন তারই অঙ্গ এই কর্মসূচি। এই আধুনিক প্রয়াস ব‍্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মহলে। এস এফ আই- য়ের এই কর্মসূচি আশা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ -এর প্রদীপ জ্বালিয়েছে এই তির্য‍্যকদৃষ্টি -লাঞ্ছিত মানবগোষ্ঠীর মনে।

গবেষকরা দেখেছেন , সমাজেরই একটি অংশকে ব্রাত‍্য করে রেখে শোষণ করার এই মানসিকতা প্রশ্রয় পায় সমাজে পিতৃতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে। পূরাণের যুগে উত্তর যুগের এই সমাজকে খন্ড খন্ড করে দেখার মানসিকতা এত তীব্র ছিল বলে মনে হয় না। নাহলে, বীর অর্জুনকে এক বছর ‘ বৃহন্নলা ‘ জীবন অতিবাহিত করানো এত সহজ হয় না। তিনি তো ঐ অবস্থায় কুরুবীরদের হারিয়ে বিরাট রাজার গোসম্পত্তি উদ্ধার করেন। শুধু তাই নয়, মহাভারতের উল্লেখযোগ্য চরিত্র ‘শিখন্ডি’ও ঐ এলজিবিটি সমাজেরই। মহাকাব‍্য জুড়ে ‘ প্রয়োগ প্রথা’র আধিক‍্য আমাদের এই উদ্দেশ‍্যপূর্ণ ঘৃণার মানসিকতা থেকে সরে আসার শিক্ষাই দেয়। দুই মহাকাব‍্যেই এই দৃষ্টান্ত অবিরল। যাই হোক, সে আলোচনা বারান্তরে ।

কাজেই, আজ যখন এস এফ আই সর্বভারতীয় স্তরে এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির মানুষদের মনে তাদের অভিন্ন মৌলিক অধিকার সম্পর্কে চেতনা জাগানোর কর্মসূচী পালন করছেন তা যে সারা দেশের প্রগতিশীল চিন্তনে সমাদৃত হবে একথা বলাই বাহুল‍্য।

প্রতীকী ছবি

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মার্চ প্রথম হয় ১৯৭০ সালের ২৮শে জুন, আমেরিকায়। কলকাতা প্রথম নামে ২রা জুলাই,১৯৯৯। করোনার বিষম বাধা ‘রিয়েল’ প্রাইড-মার্চকে ‘ ভার্চুয়াল’-এ বেঁধে দিয়েছে। তাতে অবশ‍্য উৎসাহের কোনো অভাব হয় নি।

ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস জানান, ” প্রান্তিক অংশের এই মানুষদের পাশে এস এফ আই- সব সময়েই আছে। এলজিবিটি কমিউনিটির বহু ছাত্র ছাত্রী মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রে সরকারের যে মানসিকতা , তাঁরা যেভাবে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে ওরা আরো বঞ্চিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশের এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষদের এক সুতোয় বাঁধার পরিকল্পনা নেয় এস এফ আই। এস এফ আই প্রথম ছাত্রসংগঠন যেখানে (নির্বাচনে) এই অংশের মানুষও প্রার্থী হয়েছেন। ভোটে লড়েছেন। অবশ্য এটা শুধু সম্মান দেখানোর জন‍্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, এটা ন‍্যায‍্য পাওনা। আর কোনো সংগঠন এই সাহস দেখাতে পারে নি।

এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন গৌরব ঘোষ, ময়ূরী ডেকা, ধর্মেশ, সৃজা, অপ্রতিম। তামিলনাড়ু, আসাম, দিল্লি, এলাহাবাদ,কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যোগ দেন এই লাইভ অনুষ্ঠানে​।লাইভ অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য যোগদান কেরলের আ‍্যাডাম হ‍্যারি, যিনি সব বাধা পেরিয়ে আজ একজন প্রতিষ্ঠিত পাইলট, যার পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিল কেরলের বামফ্রন্ট সরকার। অ‍্যাডাম হ‍্যারি দেশের প্রথম ‘ ট্র‍্যান্সম‍্যান’ পাইলট। তাঁর অদম‍্য মনের জোর দিয়ে জয় করে নিয়েছেন এই কৃতিত্বকে, ‘মায়োপিক’ সমাজকে হারিয়ে।

তামিলনাড়ুর তিউতিকোরিনের সৃজা বলেন কুদৃষ্টি সমাজের হাতে তাঁর নির্যাতনের কথা। মা ছিলেন পাশে তাঁর লড়াইয়ে। সৃজা বলেন “এস এফ আই আমাকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে । এলাহাবদের ধর্মেশ বললেন, ” আমি এস এফ আই কর্মী না হলেও এই সংগঠনের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায‍্য দিয়েছেন , সেকথা বারবার উল্লেখ করেছেন ধর্মেশ। অপ্রতিম তুলে ধরেছেন কিভাবে দলিত এলজিবিটি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার ও আর এস এস-এর পলিসি এলজিবিটি কমিউনিটির বিরোধী।

এস এফ আই নেত্রী দীপ্সিতা ধর জানালেন, তিনি প্রতিবারই ‘প্রাইড মার্চে ‘অংশ নেন, তা যেখানেই হোক। এবছর অবস্থাগতিকে প্রাইড মার্চ ‘ভারচুয়াল’। ঐ অংশের বহু ছাত্র-ছাত্রী এস এফ আই কর্মী। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য
অপ্রতিম রায় বলেন, আইনের সংশোধন প্রয়োজন বহু ক্ষেত্রে। সমাজকে ক্রমশঃ যখন পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তখন এস এফ আই নিয়ে এল চেতনা জাগ্রত করার আলো – ‘ নতুন তারার আলো’।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।