কলমের খোঁচা

নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি অ- নিমন্ত্রিত, মহিলা কুস্তিগীরদের ওপর বর্বরোচিত ব্যবহার প্রমাণ করে বিজেপির মতাদর্শে মহিলাদের সামাজিক অবস্থান


দেবু রায়,নিজস্ব প্রতিবেদন: ০৩/০৬/২০২৩:- বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য ভোট এলে দলিত বাড়িতে পেটপুরে খায়। কারণ তাকে দলিত প্রেমী প্রমাণ করতে হবে, আর আমাদের সমাজে বাড়ীর হেসেলের দ্বায়িত্ব থাকে বাড়ীর মহিলাদের উপর , আবার সেই বিজেপি যখন পার্লামেন্ট এর উদ্বোধন করে মোদীজির নেতৃত্বে, তখন দেশের প্রথম নাগরিক বিনা নিমন্ত্রিত থাকেন, কারণ তিনি দলিত! কি বলবেন এটাকে ভণ্ডামি ছাড়া?.
কর্ণাটক এ ভোটের সময় কেরালা ফাইলস্ নিয়ে নাচানাচি করলো, আবার সেই বিজেপি দেশের সন্মান যারা মেডেল নিয়ে বাড়িয়েছে, সেই মহিলা কুস্তিগীরদের ওপর যৌন নির্যাতন করে ,বিচার চাইতে গেলে পুলিশ দিয়ে নির্মম অত্যাচার করে, দোষী রা বুকফুলিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। টিভিতে আসে ভাষণ মারে, এটাকে কি বলবেন ভণ্ডামি না ধুর্ততা কোনটা?.

এই প্রসঙ্গেই একটি পুরোনো লেখা তুলে ধরা হলো–
বিজেপির মতাদর্শে মহিলাদের সামাজিক অবস্থান–
অনেক মহিলা আছেন যারা ভেবে থাকেন যে বিজেপি হয়তো মহিলাদেরকে সম্মানের চোখে দেখেন , তাঁদের মর্যাদা দেন, বিজেপি আবার আধ্যাত্বিক বিষয় টাকে মানে, সুতরাং তাঁদেরকে সমর্থন করা উচিত !
কিন্তু বাস্তব হচ্ছে বিজেপি যা বলে তার সবটাই মুখোশ , শুধু ভোটের জন্য তারা এই মুখোশ পরে থাকে. তারপর একবার রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পেলে তাঁদের স্বরূপ দেখাতে থাকে . তার প্রমান আমরা এখন বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যে দেখতে পাচ্ছি। আমি বিশদ ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। শুধু আরএসএস এর মহিলাদের সম্বন্ধে কি অবস্থান তার একটা সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
আসলে বিজেপির পিছনে সবসমই থাকে আরএসএস তাদের আদর্শই হলো বিজেপির আদর্শ।
আবার আরএসএস হলো মনুবাদে বিশ্বাসী. তাহলে আসুন মনু সংহিতায় মহিলাদের কি চোখে দেখা হয় . অর্থাৎ নারীদের সম্বন্ধে মনুর কি কি আইন আছে .
১)নারীদের দিবারাত্র তাঁদের পরিবারের পুরুষ দের অধীনে থাকতে হবে . কোনো বিষয়ে তাঁদের মতামত গুরুত্বহীন, এবং তারা যদি ইন্দ্রিয় সুখ সংক্রান্ত কার্যকলাপে লিপ্ত হয় , তাহলে তাঁদের অবশ্যই কড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে!(9/2)
২)একজন নারীকে শৈশবে রক্ষা করবে তার পিতা (লক্ষ্য করবেন মাতার কথার কোনো উল্লেখ নেই )আর যৌবনে তাকে দেখবেন স্বামী, আর বৃদ্ধ অবস্থায় নারীকে দেখবে শুধুমাত্র পুত্ররা,( মানে কন্যারা নয়)!নারী কখনোই স্বাধীনতা পাবার উপযুক্ত নয় (9/3)
৩)একজন নারীকে যাবতীয় অশুভ প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে হবে , অর্থাৎ সংসারে তার মতামত এর মূল্য থাকবে না, সে সংসারে থাকবে রান্না -বান্না, সন্তানের জন্ম দেয়া তাঁদের পালন করা আর স্বামীকে শারীরিক মনোরঞ্জন দেয়া এর বাহিরে তার কোনো অধিকার নেই (9/5)

৪)নিজের সম্পদ সংগ্রহ এবং ব্যায়ের কাজে স্বামী তার স্ত্রী কে নিযুক্ত করুক, নিযুক্ত করুক সব কিছু পরিছন্ন রাখার কাজে, ধর্মীয় কাজকর্ম পালনে, স্বামীর খাদ্য প্রস্তুতি তে এবং গৃহস্থলীর বাসন পত্র দেখাশুনার কাজে!

৫)নারীদের সৌন্দর্য কে গুরুত্ব দিতে হবে না. বয়স নিয়ে তাঁদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই, একজন পুরুষের মনোরঞ্জন (স্বামী ) করতে পারলেই যথেষ্ট.
৬)মনু নারীদের সৃষ্টি করার সময়, তাঁদের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন সজ্জা ও, আসন আর অলংকার (এই সবের প্রতি ভালোবাসা ), অপবিত্র আকাঙ্খা, ক্রোধ, আসতোটা, বিদ্বেষ এবং খারাপ আচার -আচরণ (9/17)
৭)নারীদের জন্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থিদির সাহায্যে কোনো ধর্ম অনুষ্ঠান করা হবে না. এটাই বিধান
শক্তিহীন ও বেদ পাঠের জ্ঞান হীন নারীরা মিথ্যার মতোই অপবিত্র. এই নিয়ম গুলোর কোনো নর চর হবে না.
সুতরাং উপরের বর্ণিত অংশ গুলোর আশাকরি বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই. শুধু তার দর্শন কে পড়লে এটাই বুঝা যায় যে ঐ গুলো হলো চূড়ান্ত অত্যাচার মূলক , বিদ্বেষীমূলক এবং মর্যাদা হানিকর.
ইদানিং কালে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থানের সাথে তাল মিলিয়ে “মনু স্মৃতি “স্বল্প মূল্যের সংস্কারণ প্রকাশের বন্যা বয়ে গেছে বিশেষত হিন্দি ভাসী অঞ্চলে , শুধু তাই নয়, এই ধরনের সংস্করণের মলাটের মধ্যেই মনু স্মৃতি কে মহিমানিত্ব করে লিখে প্রচার করা হচ্ছে যে :
মনু স্মৃতি হলো সেই প্রাচীনতম সামাজিক ব্যবস্থা যা সংবিধান ও ন্যায় বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে!বর্তমান ভারতে এই বিচার ব্যবস্থা কেই চায় আরএসএস, তাহলেই বুঝুন এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের দেশের মহিলা দের ও আফগানিস্তানের মত হতে বেশী সময় লাগবে না.
শুধু তাই নয় , আরএসএস এর বইয়ের দোকান থেকে স্বামী রামসুখদাসের লেখা,”কি ভাবে গারস্থ জীবন যাপন করতে হবে ” এই বই টিতে তার কিছু মতামত তুলে ধরছি
১)স্বামী প্রহার করলে এবং কষ্ট দিলে স্ত্রীর কি করণীয় ?. উত্তরে তিনি লিখছেন ঐ স্ত্রী যেন মনে -মনে ভাবেন যে তিনি তার পূর্ব জন্মের ঋণ শোধ করছেন , এবং তার পাপ গুলো এই ভাবে ধ্বংস করে সে শুদ্ধ হচ্ছে. (বাহ্ কি দারুন যুক্তি)অবশ্য যদি ঐ স্ত্রীর পিতা -মাতা এই কথা জানতে পারেন তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন কারন তাকে সহ্য করার মতোন শিক্ষা দেন নি. আর যদি ঐ অত্যাচারিত স্ত্রীর পিতা মাতা যদি তাঁদের মেয়েকে নিয়ে না যেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ঐ স্ত্রী কে শান্ত ভাবে তার স্বামীর প্রহার, অত্যাচার সহ্য করতে হবে, আর এই ভাবে সহ্য করতে করতে তার আগের জীবনের পাপ থেকেও সে মুক্ত হবে।
এমনকি সতীদাহ প্রসঙ্গে আরএসএস এর দর্শন হলো স্বামীর চিতায় তার মৃত দেহে র সঙ্গে স্ত্রী কে দাহ করা কোনো অন্যায় নয় , আর এটা কোনো প্রথার বিষয় নয় !যে স্ত্রীর মনে সত্য এবং উন্মাদনার উদয় হয়, সে এমনকি আগুন ছাড়াও পুড়ে যায়, এবং পোড়ার সময় কোনো যন্ত্রনা অনুভব করে না, আর যেহেতু এটা এমন কোনো প্রথা নয় যা তাকে পালন করতে হবে , বরঞ্চ এ হলো তার সত্য, ন্যায় পরায়ণতা এবং ধর্ম গ্রন্থে কথিত রীতির প্রতি তার বিশ্বাসের প্রকাশ.
তাহলেই বুঝুন কি চোখে দেখে মহিলাদের এই হিন্দুত্ব বাদীর দল সুতরাং এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিজেপি, তারা সব সময় চাইছে মনু স্মৃতিতে কথিত নির্দেশ মেনেই চলতে চাইছে , যদিও সব ক্ষেত্রে তারা পারছে না এই মনু স্মৃতিকে বাস্তবায়িত করতে কারন সর্বত্র তারা পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে পারে নি. বাধা আসছে অনেক জায়গা থেকেই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।