কলমের খোঁচা

আদর্শবোধ থেকে মানবমুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়া বনাম ফেসবুক স্ট্যাটাস


নিজস্ব প্রতিবেদন:-গোপাল চাকী: চিন্তন নিউজ: ৯ই অক্টোবর:– “ব্যক্তিকে হত্যা করা যায়, আদর্শকে নয় “—চে’
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে দেশে দেশে এই স্পর্ধা বিপ্লবীরা বারে বারে দেখিয়েছেন৷ বিশ্বে সফলতম ব্রান্ড আজ চে’ ৷ আমাদের দেশে চে’র মৃত্যুর ৩৬ বছর আগে, মাত্র ২৩ বছরের এক যুব বিপ্লবী ১৯৩১ সালেও একই কথা বলেছিলেন। ১৯৬৭ তে বিশ্ববিপ্লবীর কন্ঠে সারা পৃথিবী তা জেনেছে আবারও ৷ গত কয়েকদিন আগে ‘শহীদ-এ- আজমে’র জন্মদিনে আর আজ চে’র মৃত্যুদিনে ফেসবুকের ওয়াল দেখে নিশ্চিত ভাবেই বোঝা যাচ্ছে শহীদরা আছেন, কিন্তু তাদের আদর্শ আছে কি !

জন্মদিন – মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্যের ভীড় পরে যায় ৷ কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠিত নওজোয়ান সভার ঘোষনাপত্র, যা মূলত ভগৎ সিংই লিখেছিলেন, ক’জন পড়েছেন ? স্বল্প জীবনেও তিনি ভারতীয় শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুব, সাম্প্রদায়িকতা, স্বাধীন ভারত, প্রায় সকল বিষয়েই তাদের ভাবনা ও বোঝাপড়া লিখিত ভাবে ঘোষনা করেছেন ৷ ক’জন পরার প্রয়োজন মনে করেছেন ? একই ভাবে ভগৎ সিং দের মত উত্তাল নদী যে সাগরে মিশেছে সেই স্বপ্নের বিপ্লবী চে’র ডায়েরী ক’জন পড়েছেন ? ‘আখের স্বাদ নোনতা’ সহ বহু বহু রচনা আছে কিউবা সহ লাতিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রামের ওপর ৷ সফল বিপ্লবের নায়কও কোন আদর্শের টানে গেরিলা যুদ্ধের কষ্টের অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও মন্ত্রীত্ব ছেড়ে বলিভিয়ার জঙ্গলে যায় মানব মুক্তির পথ খুজতে, সেই আদর্শটাকে জানতে, সেই আদর্শবোধকে নিজের মধ্যে সঞ্চারিত করতে, সেই আদর্শবোধ থেকে ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছে করে মানবমুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে ?

যদি না করে, যদি একদিনের স্ট্যাটাস আর হোয়াটসআপ ম্যাসেজেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে নিজের নিরুপদ্রপ জীবনটাকেই ভালো লাগে তবে আপনিও চে’র খুনি ৷ ওরা চে’ কে ভয় পেত ৷ তাই ওরা চে’ কে খুন করেছিল ৷ যুদ্ধ বন্দী চে’র বিচার না করে বুকে ছ’টা বুলেট দেগেছিল ৷ মৃত চে’র হাতের পাঞ্জা কেটে নিয়েছিল, চোখ উপরে নিয়েছিল ৷ কারন ওরা মনে করত মৃত চে’র হাত আর চোখও ওদের জন্য বিপদজনক ৷ কিন্তু ওরা জানত না চে’র আসল শক্তি ওর আদর্শ ৷ যে আদর্শের ওপর ভরসা রেখেই বিপ্লবীরা শহীদ হয় ৷ তাই আদর্শকে বাদ দিয়ে আজ যারা যারা ব্যক্তি বিপ্লবীর ভজনা করবেন, তারা সবাই চে’র খুনি ৷ চে’র ভরসার খুনি, চে’র বিশ্বাসের খুনি ৷ ভগৎ সিং এরও ৷ হয়ত আমিও..

তবুও ইতিহাস থেমে থাকবে না ৷ যেমন থেমে থাকেনি বলিভিয়াতেও ৷ আজকের দিনে যে মাটি চে’ এর রক্তে ভিজেছিলো, সেই মাটিতেই আজ পতপত করে উড়ছে লাল পতাকা ৷ দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির পতাকা ৷


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।