রাজ্য

মাদক খাইয়ে দলিত কিশোরীর অর্ধনগ্ন ভিডিও করে ভাইরাল করার অভিযোগে গ্রেপ্তার পঞ্চায়েত সদস্যা


সঞ্জিত দে: চিন্তন নিউজ:২০শে জুন:–ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ গ্রামপঞ্চায়েতের খলাইগ্ৰাম স্টেশনপাড়া সংলগ্ন এলাকার ঘটনা, মাদক খাইয়ে এক দলিত কিশোরীর অর্ধনগ্ন  ভিডিও করে ভাইরাল করে।  মূলত অভিযোগ পঞ্চায়েত সদস্যার  স্বামীর বিরুদ্ধে এবং পঞ্চায়েত  সদস্যা নিজেও মদ্যপ হয়ে স্বামিকে সহযোগিতা  করেছেন। ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয় কিছু মানুষ লালসার নজরে বিরক্ত করতে শুরু করেছে এই দলিত কিশোরীকে ।  যারফলে লজ্জায়, আতঙ্কে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছেন কিশোরী।

আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্ৰামের পর জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে ঘটা নারী নির্যাতনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ফের ঘটল কিশোরী নির্যাতনের ঘটনা। তবে এবারের ঘটনা একটু ব্যাতিক্রম।

জানা গেছে, কিশোরীর বাবা, মা সাফাইকর্মী আর প্রায়শই মদ্যপান করে বেহুশ থাকেন তারা। অত্যন্ত  দরিদ্র‍্য কিশোরী পেটের টানে  গ্রামের তৃনমুল  পঞ্চায়েত সদস্যা প্রতিমা সরকারের বাড়ি সহ দোকানের বিভিন্ন কাজ করে এবং বেশিরভাগ সময় তাদের ওখানেই কাটায়। উল্লেখ্য,  প্রতিমা সরকারের স্বামী পার্থ সরকারের গালামাল দোকান রয়েছে। এমনকি সেই দোকানে মদও বিক্রি করেন বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগেই সেই কিশোরী প্রতিদিনের মতো দুপুর বেলা তাদের বাড়িতে যায়। পার্থ সরকার কিশোরীর ভিডিও করতে চায় প্রথমে তার স্ত্রী তাকে বাধা দেয়। কিন্তু পার্থ জানায় এসব কেউ জানবে না। এরপর ঘরে থাকা মদের বোতল খুলে পার্থ তার স্ত্রী ও কিশোরীকে জোর করে খাইয়ে দেয় বলে অভিযোগ । তারপর কিশোরীর পরনে থাকা কাপড় খুলতে বলে কিন্তু কিশোরী রাজী না হলে ।তাকে চর মারা হয় এমনকি লাঠি দিয়ে মারার হুমকি দেয়।  বাধ্য হয়ে অসহায় কিশোরী পরনে থাকা নিম্নাঙ্গের কাপড় খুলে এর পর তাকে হাসতে বলা হয় এবং সেই মুহূর্তের ভিডিও মোবাইলে তুলে রাখেন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ।   জানা গেছে  মদ্যপ  স্ত্রী  তিনিও এই কাজে স্বামী কে সহযোগিতা  করেছেন।কিছুদিন পর সেই ভিডিও এলাকায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও ভাইরাল হতেই চলে অনেকের কটুক্তি। ফলে লজ্জায় ও ভয়ে বর্তমানে লুকিয়ে থাকছে কিশোরী। কিছু বখাটে যুবক এবং অসামাজিক লোকের জন্য বাড়িতে থাকতে পারছে না এই দলিত কিশোরী । কখনো পাশের বাড়ির বারান্দায় কখনো বা জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন কিশোরী এমনি অভিযোগ।

বাধ্য হয়ে কিশোরী বিষয়টিগ্রামের  হাট কমিটিকে জানালে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে ।তাদের সহযোগিতায় শুক্রবার রাতে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অভিযোগ দায়েরের পরেই অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যা কে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মূল অভিযুক্ত তার স্বামী পলাতক।  ।ঘটনায় নিন্দার ঝড় জেলা জুড়ে। থানায় অভিযোগের পরেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।U/S 12/14 POCSO Act R/W sec 354B/354D/354/506/34 IPC  R/W sec 77 Juvenile Justice (Child and protection of children) Act 2015 R/w sec 67B IT Act.
.

এদিকে অভিযোগকারী কিশোরী গোপন জবানবন্দি  নিয়েছে পুলিশ।

হাট কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, মেয়েটির ছোট থেকে আমাদের এলাকাতেই বড় হয়েছে। ইদানিং সে পঞ্চায়েত সদস্যা প্রতিমা সরকারের বাড়িতে কাজকর্ম করত এবং সেখানেই থাকতো কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত সদস্যা ও তার স্বামী পার্থ সরকার মেয়েটিকে জোর করে মদ খাওয়ান এবং পরবর্তীতে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং উলঙ্গ করে শরীরের গোপন অঙ্গের ভিডিও করে রাখে।  এবং পরবর্তীতে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা দেয়। আমরা চাই দোষীর যথাযথ শাস্তি হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, মেয়েটি কে দেখার কেউ নেই মেয়েটি, আমাদের এলাকায় সবাই দেখাশোনা  করে মেয়েটিকে এবং গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা প্রতিমা সরকারের বাড়িতে কাজকর্ম করে দেয় এছাড়াও পঞ্চায়েত সদস্যার যে দোকান রয়েছে  সেই দোকানেও সে কাজ করে দিত। ১৪-১৫ দিন আগে পঞ্চায়েত সদস্যা ও তার স্বামী পার্থ সরকার মেয়েটিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে  এছাড়াও বিবস্ত্র করে অশ্লীল ভিডিও করে এবং পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয়।

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক রাজেশ কুমার সিং সাংবাদিক দের জানান, ঘটনার খবর পেয়েছি, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করছে। যে ই এই কাজে যুক্ত থাকুক না কেনো এইসব সব কাজ বরদাশ্ত করা যাবে না, আইন আইনের পথেই চলবে।

ইতিমধ্যেই ধূপগুড়ি কান্ডে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যাকে সাসপেন্ড করেছে তৃনমূল।সাংবাদিক সম্মেলনে করে জানিয়েছেন তৃনমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যানী।

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ধূপগুড়ি থানায় গতকাল রাতে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে একজন অভিযুক্ত তার স্বামী পলাতক। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে পোকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।